Amlasole Weekend Destination

দক্ষিণবঙ্গেও পাবেন ডুয়ার্সের সৌন্দর্য, সপ্তাহশেষের ঠিকানা হোক বাংলারই পাহাড়ি গ্রাম

হাতে মাত্র দুই-তিন দিনের ছুটি। হুট করে উত্তরবঙ্গ যাওয়া না গেলেও দক্ষিণবঙ্গ আছে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার পথ। ভোরে বেরোলে দুপুরেই পৌঁছে যাবেন পাহাড়-অরণ্যে ঘেরা ছবির মতো গ্রাম আমলাশোলে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৫ ০৯:০৪
Share:

কলকাতা থেকে ঘণ্টা পাঁচেকেই পৌঁছোনো যায়। পাহাড়ি গ্রামের বর্ষার রূপ মনে করাবে ডুয়ার্সের কথা। ছবি: সংগৃহীত।

ঘন অরণ্য, পাহাড়, নদী, ঝর্না— বর্ষায় ডুয়ার্সের মন মাতাল করা সৌন্দর্য কি কেবল উত্তরবঙ্গেই মেলে? ‘ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া’ দেখুন— কত কী নিয়ে অপেক্ষা করছে প্রকৃতি। কলকাতা থেকে ঘণ্টা ছয়-সাতেক পাড়ি দিলেই পৌঁছে যাওয়া যায় এমন এক গন্তব্যে, যেখানে রূপ উজাড় করে দিয়েছে প্রকৃতি। হোম স্টে-র বারান্দায় দাঁড়ালেই হাতছানি দেয় পাহাড়। চার দিক ঘিরে থাকে বুনো গন্ধ।

Advertisement

একসময় অনাহারের জন্য যে জায়গার নাম ছিল সংবাদ শিরোনামে, এখন সেই আমলাশোলই এখন সপ্তাহান্তে ছুটি কাটানোর ঠিকানা। ঘন সবুজের বুক চিরে চলে গিয়েছে কালো পিচের মসৃণ রাস্তা। সুযোগ-সুবিধা বাড়লেও, এখনও শহুরে জীবনের সম্পূর্ণ ছাপ পড়েনি ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ির এই গ্রামটিতে। বরং, পর্যটকেরা অলস দিনযাপনে জন্য যেমন স্থান খোঁজেন, তার সবটাই মেলে এখানে। অরণ্য, পাহাড়, প্রকৃতির উন্মুক্ত আঙিনা— তারই কোলে ছোট্ট আস্তানা। খাওয়া-দাওয়ায় বিশেষ বৈচিত্র না থাকলেও, তৃপ্তিটুকু থাকে। বিলাসিতা নেই, তবে প্রয়োজনের কোনও কিছুর অভাব নেই।

বর্ষায় ঘন সবুজ হয়ে থাকে আমলাশোলের আশপাশ। ছবি: সংগৃহীত।

মাওবাদী সন্ত্রাসের ভিত্তিভূমি কাঁকড়াঝোড় লাগোয়া এই গ্রামে একসময় যাওয়ার কথা ভাবতেই পারতেন না পর্যটকেরা। সেই গ্রামের ছবি পাল্টেছে। স্কুল হয়েছে। রাস্তায় আলো জ্বলেছে। অনাহারের গ্রামে এখন ইউপিআই-এর মাধ্যমে লেনদেনও চলে।

Advertisement

আগামী শুক্রবার স্বাধীনতা দিবস। তার পরের শনি-রবি জুড়লে তিন দিনের ছুটি। লম্বা ছুটি তো আর চট করে মেলে না! ঘরেই অলস যাপন না করে বরং গাড়ি নিয়ে অথবা ট্রেনেই বেরিয়ে পড়ুন আমলাশোল, কাঁকড়াঝোড়ের উদ্দেশে।

মনোরম আবহাওয়ার জন্য পর্যটকেরা শীতেই এই স্থানগুলি ভ্রমণের জন্য রাখেন। তবে পাহাড় এবং অরণ্যঘেরা গ্রামের বর্ষার রূপ মনে করিয়ে দিতে পারে ডুয়ার্সের কথা।

আমলাশোলা এবং কাঁকড়াঝোড়ে এখন মোড়ে মোড়ে হোম স্টে। তার মধ্যে এক-দু’টি তৈরি মাটি দিয়ে। এখান থেকে ঘুরে নিতে পারেন কেতকী ঝর্না, ঢাঙ্গিকুসুম, ভৈরব মন্দির, আমঝর্না-সহ অনেক কিছুই। আর যদি মনে করেন, এ ভাবে ঘুরবেন না, তা হলে অলস দিনযাপন করতে পারেন হোম স্টে-র আঙিনায়, গ্রামের পথে হেঁটে, আড্ডা দিয়ে নিছক পারিবারিক সময় কাটিয়েও।

নাম ঝর্না হলেও, কেতকী আসলে পাহাড় এবং শাল-পিয়াল, সেগুন গাছে ঘেরা ছোট্ট একটি হ্রদ। বর্ষাস্নাত প্রকৃতির রূপই বোধ হয় সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য। কাঁকড়াঝোড় থেকে দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। শেষের দেড় কিলোমিটার রাস্তা একটু খারাপই।

এ ছাড়াও ঘুরে নিতে পারেন ঢাঙ্গিকুসুম। এটিও একটি ঝর্না। তবে উত্তরবঙ্গে সুউচ্চ ঝর্নার সঙ্গে তুলনা টানতে গেলে হতাশ হবেন। বর্ষায় গেলে ঢাঙ্গিকুসুমের পাথুরে স্থানে পা ফেলতে হবে সাবধানে।

নামে ঝর্না হলেও কেতকী জলাধার। ছবি: সংগৃহীত।

এ ছাড়া রয়েছে আমঝর্না, ভৈরববাবার মন্দির। এই গ্রামগুলি আসলে ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী। রাস্তা গিয়েছে ঘণ অরণ্যের মধ্যে দিয়ে। মন্দিরটি পড়ে ঝাড়খণ্ডে। এই জায়গাটি ভীষণ সুন্দর। এখান থেকে খানিক এগোলে চোখে পড়বে চেক ড্যাম।

আমলাশোল এবং কাঁকড়াঝোড় ২-৩ দিনে ভাল ভাবেই ঘুরে নেওয়া যায়। তবে বেলপাহাড়ির আনাচ-কানাচ ঘুরতে গেলে আরও একটু সময় লাগবে। ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলা থেকে আমলাশোল এবং কাঁকড়াঝোড়ের দূরত্ব ২৬ কিলোমিটারের মতো। হাওড়া থেকে ভোরের ট্রেন ধরলে ঘাটশিলা হয়ে দুপুরের মধ্যেই সেখানে পৌঁছোনো যায়।

ঘুরে নিতে পারেন ঢাঙ্গিকুসুমও। ছবি: সংগৃহীত।

তবে যদি সড়কপথের সৌন্দর্যও উপভোগ করতে চান, তা হলে কলকাতা থেকে ঝাড়গ্রাম, বেলপাহাড়ি হয়ে আমলাশোল আসতে পারেন। ঝাড়গ্রাম থেকেই শুরু হয় শালের জঙ্গল। এ ক্ষেত্রে বেলপাহাড়ি হয়ে আসার সময় ঘুরে নিতে পারবেন ঘাগরা, তারাফেনি জলাধার, গাড়রাসিনি, খেঁদারানি জলাধার। একরাত ঝিলিমিলিতে কাটিয়ে পরের দিন আমলাশোল আসতে পারেন। ঝিলিমিলি থেকে চাকাডোবা হয়ে ময়ূরঝর্নার পথটি ধরলে সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যাবেন। বেড়ানো মানে কি শুধু নির্দিষ্ট স্থান দর্শন? তা কিন্তু নয়। বরং সফরের মজা সকলে বা প্রিয় মানুষটির সঙ্গে কিংবা একাকী বেরিয়ে পড়াতেই। রাস্তাঘাট, মানুষজন, স্থানীয় খাবার, সবই উপভোগ্য হতে পারে।

কী ভাবে যাবেন?

হাওড়া-বারবিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেস ছাড়ে সকাল ৬টা ২০ মিনিটে। ঘাটশিলা পৌঁছোনোর সময় সকাল ৯টা ৩ মিনিট। হাওড়া-টিটলাগড় ইস্পাত এক্সপ্রেস ছাড়ে সকাল সাড়ে ছ’টায়। ঘাটশিলা পৌঁছোয় সকাল ৯টা ২২ মিনিটে। ঘাটশিলা থেকে গাড়ি বা অটো ভাড়া করে নিলে দেড়-দুই ঘণ্টার মধ্যেই কাঁকড়াঝোড় অথবা আমলাশোল পৌঁছে যাবেন। সেখানে দু’দিন থেকে বেলপাহাড়ি, ঘাটশিলা, আশপাশ ঘুরে নিতে পারেন। কলকাতা থেকে গাড়িতেও আসতে পারেন। ঘাটশিলা হয়ে যেমন আসা যায় তেমনই লোধাশুলি, ঝাড়গ্রাম, বেলপাহাড়ি হয়েও সেখানে যেতে পারেন।

কোথায় থাকবেন?

কাঁকড়াঝোড় এবং আমলাশোল, দুই গ্রামেই এখন বেশ কয়েকটি হোম স্টে তৈরি হয়েছে। অতি আধুনিক সুবিধা না মিললেও, সেখানে থাকতে কোনও অসুবিধা হবে না। ঘরোয়া খাবার মিলবে হোম স্টে-তেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement