দার্জিলিংয়ের এক অচেনা গন্তব্য। শীতে চলুন সেখানেই। ছবি: শাটারস্টক।
ঘন পাইনে ঢাকা আশপাশ, গাছের ফাঁকফোকর কখনও ঢেকে দেয় কুয়াশার চাদর। আবার মেঘ-কুয়াশার আড়াল সরলে উঁকি দেয় রবিকিরণ। আলোয় ভরিয়ে দেয় চারপাশ। শীতের হাওয়া মাখা গ্রাম যেন উষ্ণতার স্পর্শে জেগে ওঠে। অপার সেই সৌন্দর্য নিয়ে জনসমক্ষের আড়ালে রয়ে গিয়েছে পোখারিধুরা।
পোখারিধুরার পথে। ছবি: সংগৃহীত।
গত কয়েক বছরে উত্তরবঙ্গের মানচিত্রে বদল এসেছে অনেক। তরাই-ডুয়ার্স, পাহাড়ের চেনা ঘেরাটোপে হোটেল, রিসর্টের মাথাচাড়া দেওয়া পছন্দ নয় প্রকৃতিপ্রেমীদের একাংশের। শান্তি, নিরালার খোঁজে কেউ কেউ চাইছেন ‘অফবিট’ গন্তব্যে পৌঁছতে। তারই ফলস্বরূপ রামধুরা, মাঝিধুরা-সহ অসংখ্য গ্রাম এখন পর্যটন মানচিত্রে জায়গা পাচ্ছে। তেমনই এক স্থান পোখারিধুরা।
অরণ্যে ঢাকা গ্রাম। পর্যটকদের আনাগোনা তেমন নেই। নির্জনতার খোঁজে আসা পর্যটকদের জন্য রয়েছে ঝাঁ চকচটে রিসর্ট। যেখানে আতিথেয়তার জন্য প্রস্তুত পাহাড়ি মানুষেরা। এই গ্রামের আকর্ষণ কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শন। মেঘ সরলে দিনভর দৃশ্যগোচর হয় শ্বেতশুভ্র পাহাড়চূড়া।
পোখারিধুরার কাছাকাছি রয়েছে চা-বাগিচা। গাঁয়ের ইতিউতি কাঠের বাড়ি। আসলে এই গ্রাম যেন গতিময় জীবনে বেড়ি পড়াতে চায়। মোবাইলে বুঁদ হয়ে যাওয়া একটা প্রজন্মকে প্রকৃতির সৌন্দর্যে আবিষ্ট করে বোঝাতে চায়, জীবনে কখনও থমকে যাওয়ার দরকার আছে। প্রয়োজন রয়েছে সুন্দরের কাছে মাথা নোয়ানোর।
এই গ্রাম ঘোরার জন্য হাঁটাহাটিই আদর্শ। পায়ের জোর থাকলে পাহাড়ি পথ ধরে যেতে পারেন গ্রামের আনাচ-কানাচে, চা-বাগানে। প্রতিটি বাঁক এখানে মুখোমুখি করবে পাহাড়ের নতুন রূপের সঙ্গে। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা পাওয়ার সুযোগ বেশি থাকে। তবে যদি সে রূপ অধরা থেকে যায়, মন ভোলাবে পোখারিধুরার নিজস্ব রূপ। রাতে গ্রাম থেকে দেখা যায় দার্জিলিং শহরের আলোকমালা। পাহাড়ে সে যেন এক অপূর্ব নক্ষত্রজগৎ।
যদি ভিড়ভাট্টা এড়াতে চান, এখান থেকেই দিন দুই-তিন থেকে ঘুরে নিতে পারেন দার্জিলিং শহর। চলে যেতে পারেন আর এক গ্রাম দাওয়াইপানি। দূরত্ব খুব বেশি নয়। দাওয়াইপানিতে ডিসেম্বরে গেলে দেখা পাবেন গাছে ফলে থাকা কমলালেবুর। এখান থেকে ঘুরে নিন মংপুও। সিঙ্কোনা গাছের চাষ হয় এখানে। অরণ্যঘেরা মংপুও ভারি সুন্দর। এখানে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি-বিজড়িত বাংলো। সিঙ্কোনা গাছ থেকে ওষুধ তৈরি হয় এখানে। রয়েছে রবার গাছও।
কী ভাবে যাবেন?
ট্রেনে বা বাসে পৌঁছন নিউজলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়িতে। বিমানে এলে নামতে হবে বাগডোগরা। সেখান থেকে গাড়ি করে আসা সুবিধাজনক। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সড়কপথে দূরত্ব প্রায় ৫১ কিলোমিটার। দার্জিলিং থেকে দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার।
কোথায় থাকবেন
পোখারিধুরার কাছাকাছি একটি রিসর্ট আছে। মংপুতেও থাকার জায়গা রয়েছে। সেখান থেকেও পোখারিধুরা ঘুরে নিতে পারেন।