Charkhole

অপার নিস্তব্ধতায় মোড়া ভালবাসার চারখোল

এনজেপি থেকে কালিম্পং হয়ে ছোট্ট পাহাড়িয়া গ্রাম চারখোল। কান পাতলে যেন শোনা যায় প্রজাপতির ডানা মেলার শব্দ।কাঞ্চনজঙ্ঘা হাসছে। প্রথম পলকেই প্রেম। এই মন পোড়ানো প্রেমে কি বিপত্তি!

Advertisement

অঞ্জন সরকার

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২০:১২
Share:

শেষবেলায় কাঞ্চনজঙ্ঘা।

রাতের জোনাকিদের হাত ধরে চাঁদ ভেসে চলেছে ট্রেনের সঙ্গে সঙ্গে। কিছু ক্ষণ পরেই পৌঁছব এনজেপি। ডিনার শেষ। আগে থেকে জানিয়ে রাখা হোটেলে আর এক বার ফোন করলাম রাতের আশ্রয়টাকে নিশ্চিত করে নিতে। পর দিন সকাল ঠিক ৮টায় আমার বাহন এসে হাজির। চেপে বসি তাতে। গাড়ি ছাড়ে। বাতাসে ভেসে আসে সকালের চায়ের মন তাতিয়ে তোলা গন্ধ...শহুরে হইচই...শিলিগুড়ি থেকে কালীঝোরা পার হয়ে তিস্তা বাজার, তারপর কালিম্পং...। পথ জুড়ে তিস্তার গান...। সকালের সূর্যের ওম নিচ্ছে লোকেরা। বাজারের ব্যস্ততা...ঝালমিঝুলমি মাখনরঙা লোমে চোখ ঢাকা কুকুরটা কাকে যেন খুঁজছে...ধীরে ধীরে পাহাড়ি পথ ধরে উঠছে আমার গাড়ি। মন ভরানো নীল আকাশ, সবুজ পাতায় দোল খাওয়া ছোট্ট সানবার্ড...মানুষের বদলে গাছেরা জায়গা নিচ্ছে পথে...। কয়েক ঘণ্টার পথ পার করে পৌঁছলাম ছোট্ট একটা গ্রামে।

Advertisement

কাঞ্চনজঙ্ঘা হাসছে। প্রথম পলকেই প্রেম। এই মন পোড়ানো প্রেমে কি বিপত্তি! কে দেবে প্রলেপ? সূয্যিটা তখন মাথার ওপর। দুপুরের খাওয়া সারি আমার হোমস্টেতে। তার পর পায়ে পায়ে এলাচ গাছ, ঝাড়ু গাছ আর স্কোয়াশের দলে হাত মিলিয়ে তাদের মাঝে পথ করে চলতে থাকি। ছোট কমলালেবুর বাগান ঘুরে ফিরে আসি চারখোলে। গল্পে মাতি গ্রামের সরল মানুষগুলোর সঙ্গে।

হাতে সময় থাকলে চার কিলোমিটার পথ পার করে পৌঁছে যান পাবং-এ। আর এক সুন্দরী। দিনশেষে সূয্যি যখন পাটে বসছে, একটা চেয়ার টেনে নিই হোমস্টের হাতায়। লজ্জায় রাঙা সূর্যটা। সে লাজের ছোঁয়া লাগে কাঞ্চনজঙ্ঘায়। সন্ধ্যানীল আকাশের চাঁদোয়ায় অপরূপা কাঞ্চনজঙ্ঘার সেই সৌন্দর্য দেখতে দেখতে মনকে শুধোলাম, আমি কি তোমাকেই চেয়েছিলাম? চারখোলের মিষ্টি বাতাস ফিসফিসিয়ে বলল, তুমি কি নিজেকে জান? রাত গাঢ় হতে সে প্রশ্নকে প্রশ্রয় দিয়ে চাঁদ উঠল। নরম আলোয় ভিজে কাঞ্চনজঙ্ঘা। কী শান্ত অথচ কী বাঙ্ময়! ভেসে চলা সাদা মেঘেরা হঠাৎ যেন ব্যস্ত হয়ে উঠল...একমুঠো ধূসর-কালো মেঘ এসে জড়ো হল। ঢাকা পড়ল চাঁদ...। বৃষ্টি এল তার আদর নিয়ে। মেঘ ডাকল। আমার মুখে বাদলা আলো...জল আমার মাথা গড়িয়ে শরীর ভেজাচ্ছে...আমি চুপটি করে দাঁড়িয়ে। দশ মিনিটেই বৃষ্টির হাত ধরে কালো মেঘ উধাও। চাঁদ হাসল আবারও...কাঞ্চনজঙ্ঘাও...। ঘরে ঢুকে পোশাক পালটে ফায়ারপ্লেসের কাছে। সকালে পাখির ডাক, পায়ের নীচে নরম ভেজা মাটি, পাতা..., গত রাতের বৃষ্টির সাক্ষী হয়ে থাকা জলের ফোঁটারা টুপটাপ ঝরছে...ছোট্ট চারখোলের নিস্তব্ধতাকে সঙ্গত করছে প্রজাপতির পাখা নাড়ানোর শব্দ...। আপনি প্রশ্ন করবেন, তা আবার শোনা যায় নাকি? যায়। চারখোলের প্রকৃতি সেই অনুভূতি তৈরি করে দেয় আপনার-আমার মনে, যা অন্তঃসলিলা হয় ফল্গুধারার মতো।

Advertisement

চলার পথে।

আরও পড়ুন: ভুবনবিখ্যাত গুহাচিত্রের সন্ধানে অজিণ্ঠায়​

কী ভাবে যাবেন

কলকাতা থেকে এনজেপি। বাসে বা ট্রেনে। আগে থেকে জানানো থাকলে চারখোল থেকে গাড়ি এসে সরাসরি আপনাকে নিয়ে যাবে। অথবা এনজেপি থেকে শিলিগুড়ি হয়ে শেয়ার জিপে কালিম্পং। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে চারখোল।

কখন যাবেন

অক্টোবর থেকে মার্চ সব থেকে ভাল সময়।

গ্রামের পথে।

কোথায় থাকবেন

চারখোল আর পাবং, দু’জায়গাতেই থাকার জন্য হোমস্টে আছে। থাকা-খাওয়ার কোনও অসুবিধা নেই।

কমলালেবুর বাগান।

আরও পড়ুন: রূপরহস্যে মুগ্ধ করবে চেনা-অচেনা দক্ষিণ সিকিম​

বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ:

১) অরিজিৎ কর্মকার, ট্রাভেল মঙ্ক। ফোন: ০৩৩-২৫২৯৯৬৮৯, ০৮৯০২২৩২৫৫৯, ওয়েবসাইট: www.travelmonk.co.in

২) চারখোল রিসর্ট। ফোন: ৯৪৩৩৭৬৮১৩৮

৩) ব্লু পাইন রিট্রিট। ফোন: ৯৬৮১৩৫৩৬৬০

ছবি: লেখক

(লেখক পরিচিতি: অঞ্জন পেশায় শারীরবিদ্যার শিক্ষক। কিন্তু তাঁর মন ঘুরে বেড়ায় প্রকৃতির মাঝে। জল-জঙ্গল-পাহাড় চষে বেড়ান তিনি, চোখ থাকে সর্বক্ষণের সঙ্গী ক্যামেরার লেন্সে। একাধিক গ্রন্থপ্রণেতা অঞ্জনের কলম ও ক্যামেরার শাটার চলে সমান দক্ষতায়। অঞ্জন শুধু এক জন ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফারই নন, তাঁর ভ্রমণ-আলেখ্য প্রকৃতির মধ্যে খুঁজে ফেরে মানবজমিন।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন