Travel

ঘোলাটে সূর্য ছেড়ে গেল মায়াবী বিয়াসকে

পশ্চিমে টেনটু পাসের কি়ঞ্চিৎ উপর দিয়ে ঘোলাটে সূর্য টুপ করে নীচে নেমে গেল। বিয়াস তখন পড়ন্ত আলোর আভায় মাখামাখি। লিখছেন বনভূষণ নায়কইদানীং সময়ের উল্লেখ করতে গিয়ে প্রায়ই আমার ভুল হয়ে যায়। তবে এখানে যে ঘটনার কথা বলব সেটা খুব সম্ভবত অষ্টাশির জুন-টুন হতে পারে। একটা জায়গা থেকে ঘুরে এসে অন্য একটা দলের জন্য মানালিতে অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ দে-দার সঙ্গে দেখা। এই দে-বাবুটি এক্কেবারে ‘উঠল-বাই-তো-কটক-যাই’ প্রকৃতির মানুষ ছিলেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৭ ১৭:৩১
Share:

এক

Advertisement

ইদানীং সময়ের উল্লেখ করতে গিয়ে প্রায়ই আমার ভুল হয়ে যায়। তবে এখানে যে ঘটনার কথা বলব সেটা খুব সম্ভবত অষ্টাশির জুন-টুন হতে পারে। একটা জায়গা থেকে ঘুরে এসে অন্য একটা দলের জন্য মানালিতে অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ দে-দার সঙ্গে দেখা। এই দে-বাবুটি এক্কেবারে ‘উঠল-বাই-তো-কটক-যাই’ প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। কলকাতায় এক দিন দু’-চার জনের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে এক জন তাঁর সদ্য মানালি ভ্রমণ করে আসার গল্প বলতে থাকেন। সে দিনের গল্পগাছা শেষ হতেই তিনি, অর্থাৎ দে-দা কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে মানালি যাওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলেন। শুধু তাই-ই নয়, তিন সপ্তাহের মাথায় সুখময় দে পাঁচ জনের দল সঙ্গে নিয়ে সটান মানালি এসে হাজির।

মানালি অবশ্য দে-বাবু আগেও গিয়েছেন। আশপাশের দ্রষ্টব্য স্থানগুলি দেখেও গেছেন, কিন্তু বিয়াসকুণ্ড যাননি। আসলে, তেমন গাইড না মেলায় যাওয়ার ঝুঁকি নেননি। তা ছাড়া, তখন এখনকার মতো ফুসমন্তরে বিয়াসকুণ্ড পৌঁছে যাওয়া যেত না। স্বভাবতই বিপাশা নদীর উৎস মুখটি তিনি দ্বিতীয় দফায় সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দেখে নিতে চান। সব ঠিকঠাক করে মানালি ছাড়ার মুখে হঠাৎ তিনি আমাকে দেখতে পান। আর যায় কোথায়! আমার কোনও ওজরই তিনি কানে তুললেন না। তাঁর একটাই কথা— তুমি আমাদের বিয়াসকুণ্ডে পৌঁছে দিয়েই ফিরে আসতে পার। বাকিটা আমি বুঝে নেব।

Advertisement

আসলে সুখময় দে হলেন, যাকে বলে, এক জন অত্যন্ত পরোপকারী মানুষ। পর্বত-অভিযান বা ট্রেকিং করার সময়ে উনি প্রায়ই আমাদের সাহায্য করতেন। ফলে বার ছয়-সাত বিয়াসকুণ্ড ঘুরে এলেও দে-দাকে না বলা সম্ভব হয়নি। তবে এটাও ঠিক, বিয়াসকুণ্ড সত্যিই অতি মনোরম স্থান। সেখানে বার বার গেলেও ফের যেতে মন চায়। কুণ্ডের ধারে দাঁড়িয়ে ঈষৎ চোখ ঘোরালেই হিমবাহ, মোরেন, তুষারাবৃত পর্বতশৃঙ্গ, গিরিশিরা, গিরিবর্ত্ম এবং বরফ ও পাথরে মাখামাখি পাহাড়ি ঢাল দেখতে পাওয়া যায়। চতুর্দিকে গিরিশিরা দিয়ে ঘেরা বিয়াসকুণ্ড নিঃসন্দেহে এক অনবদ্য দর্শনীয় স্থান। একদা তার গরিমা ছিল ভুবনজোড়া। তবে বর্তমানে পর্যটনের মাফিয়াবৃত্তিতে কুণ্ডর কী হাল হয়েছে তা অবশ্য আমার জানা নেই।

সেই ভ্রমণ, একটা বিশেষ কারণে, আমার কাছে অদ্ভুত ভাবে এখনও স্মরণযোগ্য হয়ে আছে। ধুনদি থেকে বিয়াসকুণ্ড যাওয়ার ন’ কিলোমিটার পথে, তেমন চড়াই না থাকলেও, অনভ্যস্ত মানুষজন কিছুটা অসুবিধেয় পড়েন। একদা, অসুবিধেয় পড়া মানুষজন আমার সঙ্গ পেলে অনুপ্রাণিত বোধ করতেন। আগলে আগলে নিয়ে যাওয়ার স্বাভাবিক অভ্যাস থাকায় বর্ষীয়ান মানুষজন আমার কাছে স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন। পাহাড়ের গল্প শুনতে শুনতে কখন যে তাঁরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যেতেন টেরই পেতেন না।

অন্য দিকে, আমাদের সঙ্গে আরও একটা ছোট দল সে বার বিয়াসকুণ্ড যাচ্ছিল। ছোট মানেই খুবই ছোট— স্বামী ও স্ত্রী মিলে দু’জন। সম্ভবত রিংঝিং-এর (মানালিতে ওই সময়কার বিখ্যাত সরঞ্জাম ও পাহাড়ি মালবাহক সরবরাহকারী) কাছ থেকেই গাইড ও মালবাহক নিয়েছিলেন ডাঃ ধবল গোলকার। তাঁর স্ত্রী পুতুল গোলকারও ডাক্তার ছিলেন। পথে তিনি দে-দার অনুমতি নিয়ে সবার শরীর পরীক্ষা করেও দেখেন। উচ্চতায় শরীর সুস্থ রাখতে কী ভাবে থাকতে হবে তা জানানোর পর প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও তিনি সঙ্গে দিয়ে দিয়েছিলেন। দে-দা ও বাকি সদস্যরা ডাক্তার ম্যাডামের ব্যবহার ও আন্তরিক মমতায় ভীষণ মুগ্ধ হয়ে পড়েন। ওই সময় দলের প্রয়োজনেই আমি কিছুটা দূরে থাকায় এমন চমৎকার একটি মুহূর্ত চাক্ষুষ করা সম্ভব হয়নি।

আমাদের মনে হয়েছিল, ডাক্তারবাবু এবং তাঁর স্ত্রী বিয়াসকুণ্ড দেখে আমাদের সঙ্গেই নীচে নেমে যাবেন। কিন্তু গাইডের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে হোচট খেলাম। পরিষ্কার করে কিছু বলছিল না। ডাক্তারবাবুর সঙ্গে ঘনতুরামের (এক জন অভিজ্ঞ গাইড) আসার কথা ছিল। কিন্তু সে আসেনি। কেবল ওই তথ্যটি আমি কৌশল করে বের করেছিলাম। বিশ-বাইশ বছরের কিষণরামই গাইড হিসেবে সঙ্গে এসেছে। ঘনতু যে আমার বিশেষ পরিচিত এবং আমি যে প্রায়ই জগৎসুখ-এ গিয়ে তার বাড়িতে থাকি এটা কিষণকে জানিয়ে দিলাম। আমার দৌড়টা জানার পর সে অল্প বিষম খেয়ে গেল। বলব-না বলব-না করেও শেষ পর্যন্ত আসল কথাটা কিষণ বলেই ফেলল। ডাক্তারবাবুই নাকি টেনটু পাস (১৬৪০০ ফুট) টপকে পশ্চিম প্রান্তে চলে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

এমন খবরে দে-দা ব্যাপক খাপ্পা হয়ে পড়েন। অথচ তাঁর কিছু করারও উপায় ছিল না। তাঁর নিশ্চিত ধারণা হয়েছিল, টেনটু পাসের ঢালেই পুতুল গোলকার মারা যেতে পারেন। এমন দুর্বুদ্ধি ধবল গোলকারের হল কী কারণে ভেবে দে-দা কুলকিনারা পেলেন না। ডাক্তারবাবুকে আটাকতে তিনি শেষমেশ আমার শরণাপন্ন হলেন। আমি তাঁকে পরিষ্কার জানিয়ে দিলাম— চেষ্টা একটা অবশ্যই করা দরকার। কিন্তু ডাক্তারবাবুকে আটকানোর এক্তিয়ার আমার নেই। চাইলে, তিনি যেতেই পারেন।

দুই

আশ্চর্য ব্যাপারটি হল, টেনটু পাস সম্বন্ধে আমার তেমন কোনও ধারণা ছিল না। এত বার বিয়াস উপত্যকায় হেঁটে-চলে বেড়ালেও টেনটু গিরিবর্ত্ম (পাস) সে ভাবে আমার মগজে ঢোকেনি। নামটা শোনা, এই যা। হঠাৎ মনে পড়ল, কিছু পূর্বে স্লাইড দেখানোর সময় কেউ এক জন (নামটি মনে পড়ল না) ওই গিরিবর্ত্মটি সম্বন্ধে দু-চার কথা বলেছিলেন। তিনি সম্ভবত এ-ও বলেছিলেন, ওই পথে যেতে হলে ভাল রকমের প্রস্তুতি দরকার। ওঠা আর নামা দুটোই যথেষ্ট সতর্ক থেকে করতে হয়। কারণ পাথর পড়ার আশঙ্কা থাকে খুব। তা ছাড়া, ওঠার সময় নাকি দু’ কিলোমিটারে চার হাজার ফুটেরও বেশি উঠতে হয়। ব্যাপারটা অভিজ্ঞ আরোহীদের পক্ষেও যথেষ্ট দুরূহ। ধীরে ধীরে খোসা ছাড়িয়ে ভিতরে ঢুকতেই আমি তাজ্জব বনে গেলাম। তবে একটা তথ্য সবার আগে জানা দরকার, টেনটু দিয়ে ও পারে যাওয়ার পরিকল্পনাটা আদতে কার— ডাক্তারবাবুর না কিষণের।

আমি কিষণকেই টার্গেট করলাম। জানতাম, রাত্রে ও উঠে বার বার বাইরে আসবে। মূলত, বিড়িটিড়ি খেতে। আমিও তখন জবরদস্ত ধূমপায়ী ছিলাম। আমার চোখে ঘুম এল না। অপেক্ষায় থাকলাম। আমার অনুমান এক্কেবারে ঠিক ছিল। কিছু ক্ষণ পর নিঝুম পরিমণ্ডলে বেরিয়ে এসে এদিক-ওদিক করতে করতে একটা বোল্ডারে গিয়ে বসল কিষণ। ক্যাম্পে ঢোকার সময় কিষণকে কিছু চোখা প্রশ্ন করে জল মাপতে চেয়েছিলাম। হয়তো ওই সব প্রশ্নবানে ও কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেছিল। কী করা উচিত ভেবে সম্ভবত কূল পাচ্ছিল না। আবছা অন্ধকারে মিনিট দুই-তিন বসে থাকার পর পিছন ফিরে তাকাতেই কিষণ আমাকে দেখতে পেল।

—সাব, আপ!

—হাঁ কিষণ, ম্যায়। তুঝে কুছ বোলনে চাহাতা, অগর তু বুরা নেহি মানে তো!

থতমত খেয়ে নিজেকে সামলে নিল কিষণ।

—নেহি সাবজি, ম্যায় বুরা নেহি মানুঙ্গা। আপ বলিয়ে।

চম্পাহাটির বিড়ির পাহাড়ে তখন বিপুল চাহিদা। সেই বিড়ি এক সঙ্গে দুটো ধরিয়ে ওকে দিয়ে আমিও নিলাম। ধূমপায়ী খুব কাছের হলেই এমনটা করা যায়। কিষণকে একটা বার্তা দেওয়া হল— আমি তোর কাছেরই মানুষ। তার পরই আমি শুরু করলাম।

—কিষণ, টেনটু পাস হয়ে ও পারে যাওয়ায় প্ল্যানটা তোরই— আমি জানি। তুই এমন ভাবে কথা বলেছিস, যাতে ডাক্তারবাবুর মনে হয়েছে ওই পাসে উনি উঠতে পারবেন। ও পারে গেলে তোর বেশি রোজগার হবে। সেটা কোনও দোষের নয়। কিন্তু ডাক্তারবাবুর স্ত্রী কি ওই পথ ধরে যেতে পারতেন? তোর কী মনে হয়?

কোনও উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকল কিষণ। আমিও অপেক্ষা করে থাকলাম। সে প্রায় তিন মিনিট।

—মাতাজি তুঝে আপনা ল্যাড়কা জ্যায়সা মানতা। পাততা হ্যায় তেরে কো?

তবু সে চুপ করে থাকল। কোনও জবাব দিল না। ফের আমি অপেক্ষায় থাকলাম।

—ডাক্তারবাবুদের কিছু ঘটে গেলে কিন্তু প্রথমেই রিংঝিং-কে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে। তার পর ঘনতু— তার ঠিক পরেই তোরা তিন জন। মনে হয় না তোরা কেউ আর বেরিয়ে আসতে পারবি। সেটা কি খুব ভাল হবে?

সে বারও চুপ থাকলেও আরও একটা চম্পাহাটির বিড়ি চাইল কিষণ। দিলাম। বিড়িটা ধরিয়ে দেশলাই ফেরত দেবার আগেই শেষ কথাটা জানিয়ে দিলাম।

—তুই তোর কথা মতো ওদের নিয়ে টেনটু পাসের দিকে এগিয়ে যেতে পারিস। আমার ধারণা, কাছ থেকে উপরে ওঠার পথটা দেখলে ডাক্তারবাবুকে আর কিছু বলতে হবে না।

বাইরে প্রবল ঠান্ডা আর বিদঘুটে ঝোড়ো হাওয়া। আর দাঁড়ালাম না। তাঁবুতে ঢুকে সটান স্লিপিংব্যাগে। দে-দা অপেক্ষায় ছিলেন। কী হল, জানতে চাইলেন। ঘুম চোখেই বলে দিলাম— কিছুই হয়নি। আপনি শুয়ে পড়ুন।


বিস্তারিত দেখতে ক্লিক করুন

তিন

সকালে উঠে দেখা গেল কিষণরা নেই, কিন্তু একটা তাঁবু থেকে গেছে। অর্থাৎ মোটামুটি পথের সন্ধান নিয়ে ওরা ক্যাম্পে ফিরে আসতে পারে। ওই দিন বিয়াসে ক্যাম্প করে আমাদের থাকার কথা ছিল। দুপুর পর্যন্ত ঘোরাঘুরির পর রান্না চড়ল। অনেকটা সময় অকারণ আলাপ-আলোচনাতে কাটল। রান্না প্রায় শেষ হওয়ার মুখে টেনটু পাসের দিকে তাকাতে গিয়ে দেখি ডাক্তারবাবু অর্থাৎ ধবল গোলকার মাত্র একশো ফুট দূরে দাঁড়িয়ে। আরও অবাক কাণ্ড, তাঁর অল্প পিছনেই ম্যাডাম। এক দৌড়ে আমি তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমাকে সামনে দেখে অসম্ভব ক্লান্তি সত্ত্বেও তিনি খুশিতে উপচে পড়লেন। আমার হাতটা ধরে প্রবল অস্থিরতায় বলতে থাকলেন— ‘কী জায়গায় পাঠিয়েছিলে তুমি, বনভূষণ। না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারবে না। উপরে উঠলে আমি কিন্তু ঠিক পড়ে যেতাম।’

তার পর হাসতে হাসতে বললেন, ‘ভাগ্যিস যাইনি!’

বয়স ষাট পেরিয়ে গেলেও পুতুল গোলকার মোটামুটি সক্ষম ছিলেন। সর্বদাই চলমান থাকতে ভালবাসতেন। তাঁর সামনে দাঁড়ালেই মনে হত— কত আপন! তাঁর পাশে পাশে নিঃশব্দ মন্থরতায় আমি এগিয়ে চলেছি দেখে ডাক্তারবাবু অপেক্ষা না করে দ্রুত ক্যাম্পের পথ ধরলেন। আমরা ক্যাম্পে পৌঁছে দেখলাম ডাক্তারবাবুর চা খাওয়া শেষ। শুধু তাই-ই নয়, অভিযাত্রীদের হাতে গরম লাঞ্চ সার্ভ করার বন্দোবস্তে হাত লাগিয়েছেন। সে দিন আমাদের খেতে অল্প দেরি হয়েছিল ঠিক, কিন্তু সব মিলিয়ে একটা সুন্দর অনুভূতি সর্বক্ষণ ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিল। যেন পুরো পরিবার, অবশেষে, একত্রে।

খাওয়া-দাওয়া শেষ হতেই পুতুল ম্যাডামের সামনে বসে আমরা সবাই তার টেনটু পাসের কাছে যাওয়ার কাহিনি শুনছিলাম। ওই সময় কথার ফাঁকে দে-দা জানতে চাইলেন— কেমন দেখলেন? আমরা কি ওই পথ দিয়ে যেতে পারব?

এমন প্রশ্ন শুনে এ দিক-ও দিক তাকিয়ে উনি শেষ পর্যন্ত আমাকে খুঁজে পেলেন।

—সেটা আপনি বনভূষণকেই জিজ্ঞাসা করুন। ভোর রাত থেকে ছায়া ধরে ধরে এগোতে কারই বা ভাল লাগে বলুন তো। এমনটা হবে ডাক্তারবাবুও কিন্তু জানতেন না।

ম্যাডাম হঠাৎ আমার নাম করায় দে-দা কিছুটা অবাক হলেন। কারণ তিনি বুঝেই পেলেন না এর মধ্যে বনভূষণের নাম আসে কী ভাবে! তিনি বোধহয় সেটাই বলতে যাচ্ছিলেন।

—কিন্তু ম্যাডাম, বনভূষণ কী ভাবে...?

পুতুল গোলকার দে-দাকে পুরো কথা শেষ করতেই দিলেন না।

—বনভূষণই তো দায়ী। ও যদি ডাক্তারবাবু বা কিষণকে সব কিছু জানিয়ে দিত, তা হলে আমাদের এমন ঝক্কি নিতেই হত না। তাই নয় কি?

আসলে পুতুল গোলকার তাঁরই মতো— নিখাদ, শুদ্ধপ্রাণা। তাঁর ইচ্ছাপূরণে তাঁরই অন্তরালে বনভূষণকে যে কী অসাধ্য সাধন করতে হয়েছে তা উনি জানবেনই কী করে!

তাঁর ধন্দ সম্ভবত তখনও দূর হয়নি। দে-দা তাই আরও কিছু বলতে চাইছিলেন। আমি তাঁকে সে সুযোগই দিলাম না। ম্যাডামের সামনে গিয়ে দু-কান ধরে অল্প মাথা নিচু করে থাকলাম। তাই দেখে তিনি তুমুল অট্টহাসিতে ভেঙে পড়লেন। তার পর বোল্ডার থেকে উঠে এসে প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে তিনি আমার মাথায় হাত রাখলেন।

আর ঠিক ওই সময় পশ্চিমে টেনটু পাসের কি়ঞ্চিৎ উপর দিয়ে ঘোলাটে সূর্য টুপ করে নীচে নেমে গেল। বিয়াস তখন পড়ন্ত আলোর আভায় একাকার, মাখামাখি।

কী ভাবে এখন আর ঠিক মনে পড়ে না। তবে সে দিন বিয়াসকুণ্ডের এক অপরূপ পরিমণ্ডলে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে পরিণত বিহ্বলতায় ও পূর্ণমাত্রায় আমরা সবাই যেন বিকশিত হচ্ছিলাম, মনে পড়ে আজও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন