Day Trip from Kolkata

হিমেল পরশ, নরম রোদ্দুর গায়ে মেখে বেড়িয়ে পড়ুন ইতিহাসের সন্ধানে, রইল এমনই ৩ ঠিকানা

শীত মানেই চড়ুইভাতি, হইহই করে বেরিয়ে পড়া। এ বার চলুন কলকাতার আশপাশের জেলাগুলি ঘুরে দেখতে। আনাচ-কানাচে রয়েছে অসংখ্য মন্দির, রয়েছে তার সুপ্রাচীন ইতিহাসও।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:৫৮
Share:

জেলায় জেলায় রয়েছে ইতিহাস। ঘুরে নিন পুরনো মন্দির। দেখুন ধ্বংসাবশেষ। ছবিটি গুপ্তিপাড়ার বৃন্দাবনচন্দ্র মন্দিরের। ছবি: সংগৃহীত।

বছরভর সূর্যের চোখরাঙানি। মাঝে কয়েকটা মাত্র মাসই তো মেলে, যখন দিনেও আরামে ঘুরে কাটানো যায়। রোদের তেজকে বুড়ো আঙুল দেখায় হিমেল পরশ। শীত মানেই নীল আকাশ, মিঠেকড়া রোদ, আর হইহই করে বেরিয়ে পড়া। বনভোজন, মিউজ়িয়াম দেখা, গ্রাম-ক্ষেতে চষে বেড়ানো। তা শীত তো এসেই গিয়েছে। ছুটির দিনে ঘরে না থেকে কোথায় যাবেন? এ বার চলুন ইতিহাসের সন্ধানে।

Advertisement

গুপ্তিপাড়া

গুপ্তিপাড়ার রথের খ্যাতি সকলে জানেন, তবে এই স্থানের প্রাচীন মন্দিরগুলির কথা জানেন কি? হাওড়া-কাটোয়া লোকালে চেপে বসলে পৌনে ২ ঘণ্টায় পৌঁছনো যায় গুপ্তিপাড়া স্টেশনে। সেখান থেকে অটো-টোটো বুক করে নিলেই হল। কিংবা বাসও পেয়ে যেতে পারেন। চলুন গুপ্তিপাড়ার মঠের উদ্দেশ্যে। মঠ পাঁচিল ঘেরা। সেখানেই চার মন্দির।

Advertisement

কথিত, জগদ্ধাত্রী পুজোর সূত্রপাত হুগলির এই গুপ্তিপাড়ায়। নবাব সিরাজের অন্যতম সেনানায়ক মোহনলাল জন্মেছিলেন গুপ্তিপাড়ায়। কবিয়াল ভোলা ময়রার শহরও এটি। তবে, গুপ্তিপাড়ার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ একলপ্তে চারটি প্রাচীন মন্দির। বৃন্দাবনচন্দ্র মন্দির পড়বে প্রথমে। এর বাঁ দিকে, বিশাল ওই প্রাচীর ঘেরা চত্বরে রামচন্দ্র মন্দির, ডান দিকে কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির ও শ্রীচৈতন্য মন্দির। বৃন্দাবন মন্দিরের ভিতরের প্রবেশ পথের দু’পাশে দেওয়াল ১৬ ইঞ্চি লম্বা, ১২ ইঞ্চি চওড়া ব্লকে ভাগ করা। কোনওটিতে ফুল, কোথাও পৌরাণিক নানা আখ্যান। মন্দিরে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার আসন। মন্দিরের টেরাকোটার কাজ দেখার মতো। শ্রীচৈতন্য মন্দির সবচেয়ে পুরনো। কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির তৈরি হয়েছিল নবাব আলিবর্দি খানের আমলে। গুপ্তিপাড়ার চার মন্দির দর্শন করে বলাগড় স্টেশন হয়ে যেতে পারেন শ্রীপুরেও। সেখানেও দোলমঞ্চ, রাসমঞ্চ, চণ্ডীমণ্ডপ-সহ বেশি কয়েকটি দর্শনীয় স্থান পাবেন।

গুপ্তিপাড়ার রথের বয়সও ৩০০-র কাছাকাছি। প্রতি বছর রথযাত্রায় বিশাল আয়োজন হয়। বসে মেলাও।

চন্দ্রকেতুগড়

ইতিহাসের গন্ধ মাখা চন্দ্রকেতুগড়ও ঘুরে নেওয়া যায়। ছবি:সংগৃহীত।

জনবহুল শহর, ঘিঞ্জি সড়ক— তারই পাশে ইতিহাসের সাক্ষ্য বয়ে নিয়ে চলেছে চন্দ্রকেতুগড়। কলকাতা থেকে যেতে হবে দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা মোড়। সেখান থেকে হাড়োয়া হয়ে এগোলেই চোখে পড়বে চন্দ্রকেতুগড়। উনিশ শতকের শেষে এই স্থান খনন করে মৌর্য যুগের মুদ্রা মেলে। পরবর্তীতে খননকাজ চালিয়ে প্রাচীন ইট, তামার মুদ্রা, মূর্তি, মৃৎপাত্রের নমুনা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ চন্দ্রকেতুগড়কে সংরক্ষিত স্থান বলে ঘোষণা করে বোর্ড লাগিয়ে দেয়। বেড়াচাঁপার মোড়ে ডাইনে-বাঁয়ে দুই দিকেই রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এখানেই রয়েছে খনা-মিহিরের ঢিবি।এই স্থানকে কেন্দ্র করে রাজা চন্দ্রকেতুর এক কাহিনিও প্রচলিত রয়েছে।

ট্রেনে গেলে শিয়ালদহ-হাসনাবাদ লোকালে উঠে নামতে হবে হাড়োয়া রোড স্টেশন। সেখান খেকে টোটো বা অটোয় গন্তব্য।

কুরুমবেড়া দুর্গ

ঘুরে নিন কুরুমবেড়া দুর্গ। ছবি:সংগৃহীত।

পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে গগনেশ্বর গ্রামে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে কুরুমবেড়া দুর্গ। জায়গাটি বেশ চোখে পড়ার মতোই। শীতের গন্তব্য হিসাবেও আকর্ষক। মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়বে ল্যাটেরাইট পাথরের খিলানসমৃদ্ধ দীর্ঘ বারান্দা। বিশাল উঠোনের মাঝখানে তিনটি গোলাকার গম্বুজ। একটি বেদিও রয়েছে। আসলে এটি এক প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভ, দুর্গের মতো। এই দুর্গের ইতিহাস সম্পর্কে নানা কথা শোনা যায়। কেউ বলেন, ওড়িশার রাজা গজপতি কপিলেন্দ্র দেবের শাসনকালে (১৪৩৮- ১৪৬৯) এটি তৈরি হয়েছিল। কেউ আবার বলেন, আওরঙ্গজেবের আমলে এটি তৈরি হয়। ওড়িশি স্থাপত্যের সঙ্গে মিল রয়েছে কাঠামোটির। আয়তাকার এই সৌধটির চার দিকেই প্রায় আট ফুট প্রশস্ত খোলা বারান্দা। এবড়ো-খেবড়ো ঝামা পাথরের উপর চুন-বালির পলেস্তারা। দুর্গটিতে মন্দির-মসজিদের মতো কাঠামো রয়েছে। কারও মতে, মুসলিম সৈনিকদের নমাজের জন্য এটি তৈরি হয়েছিল।

কুরুমবেড়া ঘুরে চলুন মোগলমারি বৌদ্ধ বিহারের উদ্দেশে। দূরত্ব সড়কপথে ২০ কিলোমিটারের মতো।

পুরাতাত্ত্বিকদের মতে, মোগলমারি পশ্চিমবঙ্গের সর্ববৃহৎ বৌদ্ধবিহার। নালন্দার সমসাময়িক। চিনা পর্যটক হিউ-এন-সাং এসেছিলেন এখানে, তিনি তাঁর ‘সি-ইউ-কি’ ভ্রমণ বৃত্তান্তে উল্লেখ করেছেন এই বৌদ্ধবিহারের কথা। ন’দফায় এখানে খননকার্য চালিয়েছে পুরাতত্ত্ব বিভাগ।

হাওড়া থেকে ট্রেনে বা কলকাতা থেকে বাসে খড়্গপুর গিয়ে সেখান থেকে গাড়ি করে কুরুমবেড়া ফোর্ট এবং মোগলমারি দেখে নিতে পারেন। খড়্গপুর থেকে ভুবনেশ্বরের দিকে লোকাল ট্রেন ধরে নেকুরসেনি রেল স্টেশনে নেমে যেতে পারেন। এখান থেকে মোগলমারি খুব কাছে। টোটো-অটো ধরে নিলেই হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement