ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল ছাড়াও কলকাতায় ঘোরার আছে অনেক জায়গা। ছবি: শাটারস্টক।
কলকাতা মানেই শহিদ মিনার, ময়দান, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, জাদুঘর, চিড়িয়াখানা। বেড়ানোর ঠিকানা বলতে এই নামগুলি কিন্তু সবচেয়ে আগে মাথায় আসে। তবে এই শহরের চেনা অলিগলির ভিড়ে রয়ে গিয়েছে এমন অনেক ঠিকানা যা যাবেন ভেবেও যাওয়া হয়নি কিংবা সে ভাবে হদিসটাই জানা নেই।
শীতের দিনে ভিক্টোরিয়া, চিড়িয়াখানা যাওয়াই যায়। তবে বাড়তি ভিড় এড়াতে তিলোত্তমাকেই আবিষ্কার করুন নতুন ভাবে। চেনা শহরের ৫ স্বল্পচেনা ঠিকানা বা না যাওয়া স্থানই হতে পারে এ বারের শীতের গন্তব্য।
মাগেন ডেভিড সিনাগগ
কলকাতার কংক্রিট কাঠামোয় হারাতে বসা সিনাগগটি ঘুরে নিন এই শীতে। ছবি:সংগৃহীত।
ক্যানিং স্ট্রিট ও ব্র্যাবোর্ন রোডের সংযোগ স্থলের অদূরেই রয়েছে ইহুদিদের উপাসনাগৃহ। নাম মাগেন ডেভিড সিনাগগ। এমন সুন্দর সিনাগগ সমগ্র প্রাচ্যেই দুর্লভ। ভিতরে ঢুকলে মনে হবে, শহরের কোলাহল যেন থমকে গিয়েছে এখানে। বড় শান্তির এই স্থান। সিনাগগের স্থাপত্যশৈলীও দেখার মতো সুন্দর। জানলা ও ছাদে লাগানো রঙিন কাচের টুকরো দিয়ে সূর্যের রশ্মি ভিতরে এসে তৈরি করে মায়াময় পরিবেশ। বিরাট হলের মাঝে উঁচু জায়গাটি প্রার্থনার জন্য।
সময়: সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্র এবং শনিবার বাদ দিয়ে যাবেন।
আরবিআই মিউজ়িয়াম
আরবিআই মিউজ়িয়াম। ছবি: সংগৃহীত।
কলকাতার জাদুঘর খুব পুরনো, দর্শনীয় তো বটেই। তবে ছোটদের মনোরঞ্জনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন বিবিডি বাগে আরবিআই মিউজ়িয়ামে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই সংগ্রহশালায় দেখতে পাবেন অসংখ্য নোট। বিভিন্ন সময় তাদের জন্ম। সেই সব নোটের ইতিহাস এখানে তুলে ধরা হয়েছে। রয়েছে বাতিল নোটও। এখানে বিভিন্ন সময়ের মুদ্রার ইতিহাসও জানা যাবে। রয়েছে ১ টাকার মুদ্রার বিশাল রেপ্লিকা। আর পাঁচটি সংগ্রহশালা ভ্রমণের চেয়ে এই অভিজ্ঞতা হবে একেবারেই আলাদা। ‘গোল্ড ভল্ট’ কেমন হয়, মডেলের মাধ্যমে তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
সময়: সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সোমবার বন্ধ।
ইডেন গার্ডেন্স উদ্যান
উদ্যানে রয়েছে সুদৃশ্য প্যাগোডা। ছবি:কলকাতা. কানেকশন
ইডেন গার্ডেন্স স্টেডিয়ামের কথাই সকলে জানেন, যেখানে ক্রিকেট খেলা হয়। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রীড়াক্ষেত্র এটি। তবে বাবুঘাট এবং স্টেডিয়ামের মাঝে ইডেন গার্ডেন উদ্যানও রয়েছে। পার্কটি বেশ সাজানো। অনেকটা বড় চত্বর। টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হয়।বাগানে একটি সুন্দর প্যাগোডা রয়েছে। শোনা যায়, মায়ানমার থেকে থেকে জিনিস এনে এটি তৈরি করা হয়েছিল। গাছগাছালি ভরা উদ্যানটি শীতের দিনে বেড়ানোর জন্য বেশ ভাল।
পার্শ্বনাথ জৈন মন্দির
কলকাতার আর পাঁচটি মন্দিরের চেয়ে এর নির্মাণশৈলী একেবারে ভিন্ন। ছবি:সংগৃহীত।
মানিকতলা থেকে এগিয়ে গৌরীবাড়ির কাছে বদ্রিদাস টেম্পল স্ট্রিটে রয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন জৈন মন্দির। একসঙ্গে চারটি। মূল মন্দির শীতলনাথজির। তারই ডান পাশে চন্দ্রপ্রভুজির মন্দির। আরও দুই মন্দির রয়েছে তার কাছেই, দাদাওয়াড়ি ও মহাবীর স্বামী মন্দির। মূল মন্দিরে প্রবেশের মুখে বিশাল ফটক। ভিতরে ঢুকলেই সাজানো বাগান। এক ঝলকে মনে হবে, এ কী দেখছি! চারপাশে মার্বেলের অপরূপ কারুকাজ, ফুলের বাহার, ফোয়ারা। স্বচ্ছ জলাশয়ে খেলছে মাছেরা। রঙিন পাথর ও আয়নাখচিত শীতলনাথজির মন্দির মনে করিয়ে দেবে রাজস্থানের কোনও দুর্গের শিশমহলের কথা। ১৮৬৭ সালে বদ্রিদাস বাহাদুর মুকিম মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জৈন তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের স্মরণে। চন্দ্রপ্রভুজি মন্দিরও বেশ প্রাচীন। দাদাজি মন্দির পুরোটাই সাদা মার্বেলের। তারই পাশে মহাবীর স্বামী মন্দিরের স্থাপত্যও কম প্রশংসনীয় নয়।
সময়: প্রতি দিন সকাল ৬টা থেকে ১১টা ও বিকেলে ৩টে থেকে ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে মন্দির।
সোলার ডোম
সৌরশক্তি পরিচালিত গম্বুজটি রয়েছে ইকোপার্কের ৬ নম্বর প্রবেশ দ্বারের কাছে। ছবি:সংগৃহীত।
গত কয়েক বছরে নিউ টাউনের ইকো পার্কও পর্যটক মহলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পুরো পার্ক একদিনে ঘুরে দেখা কষ্টকর। ভাল ভাবে ঘুরতে হলে বেছে নেওয়া ভাল কোথায় যাবেন। তালিকায় রাখতে পারেন সোলার ডোম। বাইরে থেকে দেখেই যে কেউ এখানে প্রবেশে উৎসাহী হবেন। সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে কী কী করা সম্ভব, সে ব্যাপারে ধারণা দিতেই তা তৈরি হয়। বিশেষত পড়ুয়াদের বিজ্ঞান সম্পর্কে, সৌরজগত সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে, এই বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতেই তা তৈরি রয়েছে। ভিতরে কোথায়, কী রয়েছে তা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য রোবটও ভাড়া করা যায়।
সময়: সোমবার ছাড়া অন্য দিন দুপুর আড়াইটে থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত সোলার ডোম দেখা যায়। ছুটির দিনে সময় এগিয়ে আসে। রবিবার ১২টা থেকেই সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।