একলা না কি দলের সঙ্গে বেড়াতে যাবেন? সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাল-মন্দ দুই দিক বিবেচনা করে নিন। ছবি: সংগৃহীত।
একলা গিয়ে স্বপ্নপূরণ করছেন কেউ। পাহাড়ে চলে যাচ্ছেন প্যারাগ্লাইডিং করতে। কারও স্বপ্ন সুইৎজ়ারল্যান্ডে গিয়ে আল্পসের সৌন্দর্য উপভোগ করার। সেই স্বপ্নপূরণ করছেন একেবারে নিজের মতো করে। সমাজমাধ্যমে খুললেই এখন একলা ভ্রমণের ছবি। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে ঘুরছেন, উপভোগ করছেন জীবন। তা দেখেই মনের কোণে থাকা স্বপ্নগুলো ডানা মেলতে চাইছে?
নিজের ইচ্ছার সঙ্গে কোনও রকম আপস না করে বেরিয়ে পড়ার এই যে আনন্দ তা একলা ভ্রমণেই সম্ভব, বলেন একক ভ্রমণকারীরা। আবার কারও মত, বেড়াতে গেলাম, কিন্তু সঙ্গী ছাড়া? সারা দিন আড্ডা, গল্প না হলে কি চলে?
একলা ভ্রমণের যেমন চল বাড়ছে, তেমনই জনপ্রিয় দলবেঁধে ঘোরাও। চেনা সঙ্গী না থাকলেও অসুবিধা নেই, ভ্রমণপিপাসুদের দলে ভিড়ে গেলেই হল। কয়েক দিনেই নতুন বন্ধু হয়ে যাবে।
বেড়াতে যেতে ইচ্ছুক। তবে দলে যাবেন না একলা— সেই সিদ্ধান্তটাই নিয়ে উঠতে পারছেন না। তা হলে জেনে নিন, দুই ধরনের ভ্রমণের সুবিধা, অসুবিধাগুলি কী কী।
স্বাধীনতা: বেড়ানোর সঙ্গে যদি সম্পূর্ণ ভাবে স্বাধীনতা দরকার হয়, আপসহীন ঘোরাঘুরি যদি স্বপ্ন হয়, তা হলে একলা ভ্রমণ আদর্শ। সঙ্গে যদি আরও এক জন সঙ্গীও থাকেন, কোথাও না কোথাও দু’জনের তাল-মিল জরুরি। আর দলগত ভ্রমণে সেটা প্রয়োজন একান্তই। দলে যেতে হলে, আর পাঁচজনের ইচ্ছাকেও মর্যাদা দিতে হবে। হয়তো সকালে পাহাড়ের নির্দিষ্ট পয়েন্টে গিয়ে সূর্যোদয় দেখার ইচ্ছা, সেটা বাদ পড়ে যেতে পারে দলের এক বা দু’জন দেরি করলে। এমনটা হয়-ও। দলে যেতে হলে নিয়মানুবর্তিতার দরকার। তবে, অতিরিক্ত স্বাধীনচেতা হলে, নিজের উপর বিশ্বাস থাকলে, বেরিয়ে পড়ুন একাই।
আত্মবিশ্বাস এবং দায়িত্ব: স্বপ্ন সফল করার ইচ্ছা থাকলেও, সকলে সেই সাহস জুটিয়ে উঠতে পারেন না। নিজের উপর একটু আস্থা এবং বিশ্বাস থাকলে ছোট সফর দিয়েই শুরু করতে পারেন। একলা ঘুরতে আদৌ ভাল লাগছে কি না, পরখ করা দরকার। এক বার নির্ঝঞ্ঝাটে ঘুরে আসতে পারলে, তা মনোবল বাড়িয়ে দেবে কয়েক গুণ। একই সঙ্গে দায়িত্ববোধও। কারণ, একলা যেতে গেলে সমগ্র বেড়ানোর পরিকল্পনা নিজেকে করতে হয়। নিজের সুরক্ষা, মালপত্র দেখে রাখা, সুস্থতার দিকে নজর দেওয়া, সময়ে ঘুম থেকে ওঠা— এমন ছোটখাটো অনেক বিষয় দায়িত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত।
নিজেকে চেনা: নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় কমে যাচ্ছে ব্যস্ত জীবনে। একলা জীবনে প্রকৃতিকে যে ভাবে উপভোগ করা যায়, সঙ্গে কেউ থাকলে ততটা যায় না। সমুদ্র সৈকতে সূর্যাস্ত হোক বা অরণ্যে ভোর হওয়া দেখা— অনেক গভীর ভাবে নিজের এবং প্রকৃতির সঙ্গে থাকার সুযোগ মেলে। নিজের চাওয়া-পাওয়াকেও ঝালিয়ে নেওয়া যায়।
আড্ডা, হইচই: দিনভর ঘোরাঘুরির পর আগুন জ্বালিয়ে খাওয়া, নাচ-গান, আড্ডার আকর্ষণ কিন্তু একেবারেই কম নয়। হইহই করে ঘোরার মধ্যেও আলাদা আনন্দ আছে। এখানে হয়তো নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ কমে যায়,তবে আর পাঁচজনের সাহচর্য পাওয়া যায়। দলগত ভ্রমণে এটাই বাড়তি পাওনা।
নিরাপত্তা এবং সঙ্গ: কঠিন কোনও স্থানে ট্রেক করতে যাচ্ছেন বা এমন জায়গায় বেড়াতে যাচ্ছেন, যেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে সমস্যা হতে পারে। তেমন ক্ষেত্রে কিন্তু সঙ্গীরাই আগলে রাখতে পারেন। বিপদে পড়লে এককাট্টা হয়ে সমাধান খোঁজা যায়। তেমন ক্ষেত্রে দলই যেন হয়ে ওঠে পরিবার।
খরচ: দলগত ভ্রমণের বড় সুবিধা হল খরচ। বিশেষত থাকা এবং যাতায়াতের খরচ অনেকটাই ভাগ হয়ে যায়। যে সব জায়গায় গাড়ি ভাড়া করে ঘুরতে হয়, সেই জায়গায় দল থাকলে অনেক কম খরচে ঘোরা যায়।
একলা বা দলগত ভ্রমণের অসুবিধা কোথায়?
· যে কোনও ভ্রমণের ভাল দিকে যেমন আছে, কিছু নেতিবাচকও দিকও থাকে। একলা ভ্রমণে গাড়িভাড়ার খরচটা অনেক সময় বেশি হয়ে যায়। সব জায়গায় শেয়ার গাড়িতে ঘোরা সম্ভব হয় না। শেয়ারের অপেক্ষা করতে গেলে সময়ও নষ্ট হয়। তা ছাড়া, আচমকা বিদেশ-বিভুঁইয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে দেখার বা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার লোক পাওয়া মুশকিল হয়। বিপদে-আপদে পড়লে স্থানীয় লোকজনই একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠেন।
· আবার দলে বেড়ানোর সমস্যা হল স্বাধীনতার অভাব। বিশেষত দলের অন্যেরা সমমনস্ক না হলে বেড়ানোর আনন্দই ভেস্তে যেতে পারে। খাওয়া থেকে ঘোরা— সবটাই নিয়মমাফিক না করলে দলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। গাড়িতে সব সময়ে সামনের আসনটিতে বা সামনের দিকে বসা যায় না। সকলে মিলে মানিয়ে নিতে হয়। নিজের ইচ্ছার সঙ্গে অনেক সময়ই আপস করতে হয় এ ক্ষেত্রে।
· দলে বেড়াতে গেলে নিজের চেনা সঙ্গী না থাকলে অন্যের সঙ্গে ঘর ভাগ করে নেওয়া, গাড়িতে বসা, ঘোরাঘুরি কোনওটাই মনঃপূত না-ও হতে পারে। তবে দলে গেলে এমন অনেক কিছু ভাল না লাগলেও মানিয়ে নিতে হয়।