Gurpa Hill

পাথরের সরু ফাটলের মধ্যে দিয়ে উঠেছে সিঁড়ি, গুরপা পাহাড়ের মাথায় বসে আছেন কে?

ট্রেন সফরের মজা কখনও কোনও স্টশনের নামে চোখ আটকে যায়, মনে রয়ে যায় আজীবন, কখনও ছুটন্ত ট্রেন থেকে এক ঝলক দেখতে পাওয়া টিলা, পাহাড়, প্রকৃতিও মন ছুঁয়ে যায়। মনে হয়, যদি একটি বার সেখানে ঘুরে আসা যেত। তেমনই এক ঠিকানা গুরপা পাহাড়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৫ ১১:৩০
Share:

গুরপা পাহাড় কোথায়, কী ভাবে যাবেন? ছবি: সংগৃহীত।

গাছগাছালি ঘেরা পাহাড়। দূর থেকে দেখলে টিলাই মনে হয়। তারই মাথায় সোনালিরঙা চোর্তেন বা বৌদ্ধ স্তূপ। ট্রেনে গয়া যাওয়ার সময় নজরে হয়তো পড়ে থাকবে অনেকেরই। ট্রেন সফরের এটাই মজা। কখনও কোনও স্টশনের নামে চোখ আটকে যায়, মনে রয়ে যায় আজীবন, কখনও ছুটন্ত ট্রেন থেকে এক ঝলক দেখতে পাওয়া টিলা, পাহাড়, প্রকৃতিও মন ছুঁয়ে যায়। মনে হয়, যদি একটি বার সেখানে ঘুরে আসা যেত।

Advertisement

গুরপা পাহাড়ের মাথায় বৌদ্ধ স্তূপ এবং মন্দির। ছবি: সংগৃহীত।

এমনই এক ঠিকানা গুরপা পাহাড়। ভালনাম অবশ্য ‘গুরুপাদগিরি’ বা ‘কুক্কুটপদগিরি’। গয়া যাওয়ার পথেই পড়ে গুরপা স্টেশন। সেখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরের পাহা়ড় চোখে পড়ে ট্রেন থেকেই।

সামনেই ১৫ অগস্টের ছুটি। শনি-রবি মিলিয়ে নিলে হাতে থাকছে তিনটি দিন। বৃহস্পতিবার রাতে ট্রেন ধরলে হাতে সময় থাকবে আরও কিছুটা। এই ফাঁকে বরং ঘুরে নিতে পারেন বুদ্ধ গয়া, গুরপা পাহাড়।

Advertisement

কিন্তু যাবেন কেন? নিছক একটি টিলা, সেখানে কী এমন আছে? স্বল্পচেনা জায়গায় যাওয়ার একটি বাড়তি উত্তেজনা থাকে। এখানে আছে নির্ভেজাল প্রকৃতি আর লোককথা। হিন্দু এবং বৌদ্ধধর্মের অপূর্ব মেলবন্ধন চোখে পড়বে এখানে। তা ছাড়া, বৃষ্টিস্নাত পাহাড়, ঘন শ্যামলিমাও কি কম উপভোগ্য?

গুরপা স্টেশন থেকে পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত হেঁটেই যাওয়া যায়। তবে সড়কপথে গাড়ি নিয়ে এলে আরও অনেকটা এগিয়ে যেতে পারবেন। শ্রাবণী মেলায় প্রচুর পুণ্যার্থীর আগমন হয় এখানে। বাকি সময় অবশ্য স্থানীয়েরা ছাড়া খুব বেশ পর্যটক বা পুণ্যার্থী আসেন না।

স্টেশন থেকে যদি হাঁটাপথ ধরেন তা হলে পাবেন গ্রাম্য পরিবেশ। বর্ষায় বেড়ে ওঠা গাছগাছালি, লতা সঙ্গ দেবে আপনাকে। ভ্যাপসা গরম থাকলেও, প্রকৃতির রং ভুলিয়ে দেবে হাঁটার কষ্ট। পাহাড়ের পাদদেশ থেকেই শুরু হয়েছে ধাপ। চূড়ায় উঠে গিয়েছে বাঁধানো সিঁড়ি। লোকে বলেন, ১৮০০-এর বেশি ধাপ চড়তে হয় এখানে।

কিন্তু এত কষ্টের ফল কী, প্রশ্ন জাগতেই পারে। সেটি বুঝতে উঠতে হবে পাহাড়ের মাথায়। কষ্ট লাঘবে সঙ্গে নুন-চিনির জল রাখতে পারেন। আর মাঝে মধ্যে জিরিয়েও নিতে পারেন। যে পাহাড়ে যাবেন, তার নামকরণের বিষয়টিও তো জানা দরকার। প্রতি বছর শ্রাবণ মাসে পাহাড়ের চূড়ায় মেলার আয়োজন হয়। লোককথা, এখানেই বুদ্ধের শিষ্য মহাকশ্যপ নির্বাণ লাভ করেছিলেন। তাই এই স্থান বৌদ্ধদেরও পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। আবার পাহাড়টির আকৃতিকে মুরগির পায়ের সঙ্গে তুলনা করে একে কেউ কেউ কুক্কুটপাদগিরিও বলেন।

পাহাড়ি ফাটল দিয়েই এগিয়েছে সিঁড়ি। ছবি: সংগৃহীত।

নাম যা-ই হোক না কেন, সিঁড়ি চড়লেই দৃশ্যগোচর হবে আশপাশ। যত উপরে উঠবেন চারপাশের সৌন্দর্য ততই মুগ্ধ করবে। এমন সময় পথ আটকাবে পাহাড়। আর চওড়া স্থান নয়। বরং গুহা-ফাটলই পথ। শরীরকে কায়দা করে বেঁকিয়ে সেই পথে ওঠা যায়। তবে কারও বদ্ধ স্থান নিয়ে আতঙ্ক বা ‘ক্লস্ট্রোফোবিয়া’ থাকলে সাবধান। সেই পথ পেরোলেই শান্তি। ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপট, পাহাড়ের মাথা থেকে দেখতে পাওয়া সর্পিল পথ, অরণ্যভূমি ভুলিয়ে দেবে পথশ্রমের ক্লান্তি। পাহাড়ের মাথায় রয়েছে সোনালি রঙা স্তুপে ধ্যানরত মহাকশ্যপের মূর্তি। অজস্র রংবেরঙের ধর্মীয় পতাকা। সুদৃশ্য চোর্তেনটির পাশেই দু’টি মন্দির।

বুদ্ধ গয়া: গুরপা পাহাড় থেকে বুদ্ধ গয়া যাওয়ার দু’টি পথ। রাজৌলির রাস্তা ধরে গেলে দূরত্ব পড়বে ৬০ কিলোমিটারের মতো। বুদ্ধ গয়া শুধু আধ্যাত্মিক স্থান নয়, বৌদ্ধ মন্দিরের স্থাপত্য, সৌন্দর্যও বিস্ময় উদ্রেক করে।

বুদ্ধ গয়ার মহাবোধি মন্দির। ছবি: সংগৃহীত।

এখানকার অন্যতম আকর্ষণ মহাবোধি মন্দির। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে মন্দিরটি। অপূর্ব তার স্থাপত্যশৈলী। শান্ত সেই স্থান। সুবিশাল চত্বর যত্নে সাজানো, পরিচ্ছন্ন। মন্দিরের ভিতরে রয়েছে বিশাল বুদ্ধমূর্তি। কষ্টিপাথরের ভূমিস্পর্শ মুদ্রায় বুদ্ধের বসে থাকার মূর্তি তৈরি করেন পাল রাজারা। দিনের পড়ন্ত আলোয় মহাবোধি মন্দির চত্বরে বসে থাকলে, সত্যিই মন জুড়িয়ে যায়। মন্দিরের পিছনে রয়েছে, ‘মহাবোধি বৃক্ষ’ বা অশ্বত্থ গাছ।

৮০ ফুটের বুদ্ধ: বুদ্ধ গয়ার অন্যতম আকর্ষণ হল ৮০ ফুটের বুদ্ধমূর্তি, যা খোলা আকাশের নীচে পদ্মের উপর ধ্যানমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। বুদ্ধের মূর্তিটি ৬৪ ফুট পদ্মের অংশটি ৫ ফুট এবং ভিত্তিটি ১০ ফুটের। বিশ্বনাথ গণপতি স্থপতি বুদ্ধের মূর্তির নকশা করেছিলেন। ৭ বছর সময় লেগেছিল কাজটি সম্পূর্ণ করতে।

অজস্র বৌদ্ধ মন্দির: বুদ্ধ গয়া জুড়ে ২০টির বেশি বৌদ্ধ মন্দির নির্মিত হয়েছে। এক একটির স্থাপত্যশৈলী এক এক রকম। ভুটানি স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে সেখানে। আছে মেটা বুদ্ধরম টেম্পল যেখানে তাইল্যান্ডের স্থাপত্য চোখে পড়বে। এগুলি ছাড়াও আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে সেখানে।

কোথায় থাকবেন?

বুদ্ধ গয়ায় অসংখ্য থাকার জায়গা আছে। বিভিন্ন মানের হোটেল আছে।

কী ভাবে যাবেন?

হাওড়া থেকে গয়া যাওয়ার অসংখ্য ট্রেন আছে। হাওড়া-জোধপুর সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস, হাওড়া-গয়া বন্দেভারত-সহ আরও অনেক ট্রেন আছে। প্রথমে গয়া গিয়ে সেখানে ঘুরে গুরপা পাহাড় আসতে পারেন। আবার ট্রেনে কোডরমা বা আসানসোল পৌঁছে প্যাসেঞ্জার ট্রেন ধরে গুরপা স্টেশনে নেমে পাহাড় দেখে গাড়িতে বুদ্ধ গয়া চলে যেতে পারেন। গুরপা পাহাড় দেখে গিরিডিতেও চলে আসা যায়। দূরত্ব ১৫৮ কিলোমিটার। গুরপা পাহাড়ের খুব কাছে থাকার জায়গা নেই। তাই গিরিডি বা বুদ্ধ গয়ায় থাকতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement