ডুয়ার্সে পর্যটনের নতুন

দুই ঠিকানা মালবাজারে

সবুজ জঙ্গল থেকে বার হচ্ছে হাতির দল। সন্ধের আগে পাহাড়ি নদীর ধারে পাথরে আসছে হরিণেরা। আর বর্ষার আকাশে মেঘ দেখে পেখম মেলেছে ময়ুরের দল। বনবাংলোর সামনে দাঁড়িয়ে কিংবা ঝুলবারান্দায় বসে এমন দৃশ্য উপভোগ করতে কার না মন চায়! তবে সে জন্য প্রাথমিক ঝক্কি হল বনবাংলোর বুকিং পাওয়া। আর তা পেলেও একরাতের ভাড়া বাবদ পকেট থেকে বেড়িয়ে যায় অন্তত তিন হাজার টাকা।

Advertisement

সব্যসাচী ঘোষ

মালবাজার শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২৭
Share:

গরুমারার কাছে মঙ্গলবাড়িতে তৈরি হচ্ছে কটেজ। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

সবুজ জঙ্গল থেকে বার হচ্ছে হাতির দল। সন্ধের আগে পাহাড়ি নদীর ধারে পাথরে আসছে হরিণেরা। আর বর্ষার আকাশে মেঘ দেখে পেখম মেলেছে ময়ুরের দল।

Advertisement

বনবাংলোর সামনে দাঁড়িয়ে কিংবা ঝুলবারান্দায় বসে এমন দৃশ্য উপভোগ করতে কার না মন চায়! তবে সে জন্য প্রাথমিক ঝক্কি হল বনবাংলোর বুকিং পাওয়া। আর তা পেলেও একরাতের ভাড়া বাবদ পকেট থেকে বেড়িয়ে যায় অন্তত তিন হাজার টাকা। এ বারে সেই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছে মালবাজার মহকুমা প্রশাসন। মহকুমার দুটি প্রান্তে কটেজের আদলে পর্যটক আবাস তৈরি করে ফেলা হয়েছে। একটি পশ্চিম ডামডিম, অন্যটি মঙ্গলবাড়ি। দুটিরই একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ শেষের পথে রয়েছে। এক মাসের মধ্যেই দুটিই পর্যটকদের জন্যে খুলে দেওয়া হবে বলেও জানান মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি। কোনও কটেজের ভাড়াই এক হাজার দুশো টাকা ছাড়াবে না বলেও জানান তিনি।

মালবাজার শহর থেকে ঠিক ১৬ কিলোমিটার দূরে কাঠামবাড়ির জঙ্গলের পাশে চেলনদী লাগোয়া এলাকায় পশ্চিম ডামডিমে থাকছে ছ’টি কটেজ। জঙ্গল থেকে বেরিয়ে বুনোদের জল খেতে আসার দৃশ্য দেখতে এই কটেজই সেরা ঠিকানা হতে পারে বলেই জানাচ্ছেন জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। নদীর পশ্চিম প্রান্তে জঙ্গল আর পূর্ব প্রান্তে ডামডিম চা বাগান। মাঝখানে প্রায় সাড়ে আট একর জায়গায় গড়ে ওঠা এই কটেজ এককথায় যাবতীয় নাগরিক সভ্যতাকে ছিন্ন করার সেরা ঠিকানা হয়ে উঠতে পারে। শিলিগুড়ি থেকে ৩১নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে সেবকের পথে ডামডিম মোড় থেকে ডানদিকে বেঁকে আট কিমি এগোলেই মিলবে এই নতুন ঠিকানার হদিশ।

Advertisement

এ ছাড়াও, চালসা পেরিয়ে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই গরুমারা জাতীয় উদ্যানের কাছে খড়িয়ার বন্দর বিটের জঙ্গল লাগোয়া মঙ্গলবাড়ির চারটি কটেজ তৈরি হয়েছে এক একর জায়গায়। জঙ্গলের খুব কাছাকাছি থাকার অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে মঙ্গলবাড়ির কটেজে। তেমনই মাত্র ১২ কিমি দূরত্বে থাকা গরুমারা জাতীয় উদ্যান এবং চার কিমি দূরত্বে থাকা মূর্তি নদীর পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে আসার সুযোগও থাকছে এখানে। একেকটি কটেজ তৈরিতে খরচ প্রায় ৮৩ লক্ষ টাকা করে বলে জানান মালবাজারের মহকুমাশাসক।

প্রশাসন সূত্রে খবর, জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন জেলা জুড়ে পর্যটনের জন্যে যে নতুন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে তারই অন্যতম অংশ হল এই দুটি পর্যটন কেন্দ্র। কটেজগুলোতে পর্যটকদের রান্নার দায়িত্ব দেওয়া হবে এলাকারই স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের হাতে। স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করাতে স্থানীয় আদিবাসী নাচগানও পর্যটকদের শোনাবেন বাসিন্দারা। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির হাতে তৈরি ডুয়ার্সের বুনো জন্তুদের মূর্তিও কিনতে পারবেন। সব মিলিয়ে পুজোর মরশুমে যখন ডুয়ার্সের রিসর্টগুলিতে রীতিমতো ‘ঠাঁই নাই’ অবস্থা হয়, তখন এই নতুন দুই ঠিকানা পর্যটকদের অনেকটাই স্বস্তি দিতে পারবে বলেই মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সম্পাদক সম্রাট সান্যালের কথায়, ‘‘ডুয়ার্সে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। তবে ডুয়ার্সে পর্যটকদের ভিড় মূলত প্রথাগত এলাকাতেই সারাবছর বেশি থাকে। তার বাইরে বেরিয়ে এই দুটি প্রকল্প পর্যটনের নতুন দিশা খুলে দিতে পারে বলেই মনে করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন