বিষমদের হানা এ বার শান্তিপুরে, মৃত ১০

শান্তিপুরের হরিপুর পঞ্চায়েতের চৌধুরীপাড়ায় মঙ্গলবার চোলাই খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। বুধবার রাত পর্যন্ত ১০ জন মারা গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত চন্দন ওরফে গুলবার মাহাতোও। এ ছাড়া, শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ২০ জন ভর্তি আছেন। 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:২৮
Share:

স্বজনহারা: নদিয়ার শান্তিপুরের চৌধুরীপাড়ায় বিষমদে মৃত ভুটান মাহাতোর স্ত্রী। ছবি: প্রণব দেবনাথ

সংগ্রামপুর, ময়না, গলসির পরে এ বার শান্তিপুর। বিষমদের মৃত্যুমিছিলে নবতম সংযোজন।

Advertisement

শান্তিপুরের হরিপুর পঞ্চায়েতের চৌধুরীপাড়ায় মঙ্গলবার চোলাই খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। বুধবার রাত পর্যন্ত ১০ জন মারা গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত চন্দন ওরফে গুলবার মাহাতোও। এ ছাড়া, শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ২০ জন ভর্তি আছেন।

যদিও এই মৃত্যু ও অসুস্থতার পিছনে বিষমদ রয়েছে কি না, তা এ দিন স্পষ্ট করে বলেনি রাজ্য প্রশাসন। অর্থ তথা আবগারিমন্ত্রী অমিত মিত্র বিধানসভায় বলেন, ‘‘বিষাক্ত কিছু খেয়ে মৃত্যু হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘রিপোর্ট আছে, বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে ভ্যানে কিছু মাল ঢুকেছে, উপরে অন্য কিছু চাপা দিয়ে। কারা এ সব এনেছে, কোথা থেকে এনেছে, সিআইডি তদন্ত করবে।’’ অমিতবাবুর মতে, কী খেয়ে মৃত্যু হয়েছে জানা গেলে, কোথা থেকে ওই বিষাক্ত জিনিস এল, তা-ও জানা যাবে।

Advertisement

আরও পড়ুন: তিন বার ধরা পড়েও বেপরোয়া চোলাই-চাঁইরা

রাজ্য প্রশাসন সরাসরি বিষমদের কথা না বললেও আবগারি দফতরের ডেপুটি কালেক্টর (রানাঘাট), এক বর্তমান ও এক প্রাক্তন ইনস্পেক্টর এবং আট কনস্টেবলকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আগের বিষমদ কাণ্ডের মতো এ ক্ষেত্রেও পরিবার পিছু দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। বুধবার রাত পর্যন্ত চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: নৌকা আর বাইকেই চলাচল চোলাইয়ের

সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে বেশ কিছু মহিলা-পুরুষ চৌধুরীপাড়ায় চন্দনের বাড়িতে চোলাই মদ খেয়েছিলেন। রাত থেকেই তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকেন। পেটে জ্বালা, সঙ্গে বমি। অসুস্থ ছ’জনকে কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মারা যান ভুটান মাহাতো (২৫), সুনীল মাহাতো (৩০) ও কাশীনাথ মাহাতো (৪০)। মৃত অবস্থাতেই শান্তিপুরের হাসপাতালে আনা হয় দুলাচাঁদ মাহাতোকে (৪৫)। সেখানেই পরে মারা যান গৌতম শর্মা (২০) এবং মুন্না রায় (২৮)। ভালোয়া মাহাতো (৬০) আনাজ নিয়ে ট্রেন ধরেছিলেন। বালি স্টেশনে অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া যায় তাঁকে। হুগলির উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে একমাত্র তিনিই মহিলা। বুধবার সন্ধ্যায় শান্তিপুর থেকে কৃষ্ণনগরে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান বাসুদেব মাহাতো (৪৯)। রাতে কল্যাণী হাসপাতালে মারা যান চন্দন এবং তাঁর ভাই লক্ষ্মী মাহাতো (২৮)।

মৃতদের মধ্যে মুন্নার বাড়ি ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জে। তিনি স্থানীয় ইটভাটার শ্রমিক। গৌতমের বাড়িও ঝাড়খণ্ডের রাঁচীতে। তাঁর বৌদি স্থানীয় ইটভাটায় কাজ করেন। দিন দুয়েক আগে তিনি বেড়াতে এসেছিলেন। বাকি সকলেই চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা।

বুধবার বিকেলে সিআইডি-র দল ঘটনাস্থলে যায়। নদিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে সাধন বিশ্বাস, জয়দেব সাঁতরা, জয়ন্তী মাহাতো ও গুচিয়া মাহাতোকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুন-সহ ছ’টি ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। যদিও চন্দনের বাড়িতে মদ তৈরির সরঞ্জাম মেলেনি। স্থানীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, ওই এলাকায় এখন আর চোলাইয়ের ভাটি নেই। জোগান আসে ভাগীরথীর ও পারে পূর্ব বর্ধমানের কালনা থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন