Gyaneshwari Case

জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডের ১০ বছর, মৃত্যুর শংসাপত্রের অপেক্ষা এখনও

জ্ঞানেশ্বরীর চালকের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করেছিল পুলিশ। পরে তদন্তভার নেয় সিবিআই। গ্রেফতার হন ২০ জন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সরডিহা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২০ ০২:০৪
Share:

জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় মালগাড়ির ইঞ্জিনের ধ্বংসাবশেষ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

বুধবার দশ বছর পূর্ণ হল জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডের। দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ১৪৮ জন। ক্ষতিপূরণ মিললেও এখনও কয়েকটি পরিবার মৃত্যুর শংসাপত্র পায়নি। ২০১০ সালের ২৭ মে গভীর রাতে ঝাড়গ্রামের সরডিহার রাজাবাঁধ এলাকায় লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় হাওড়া থেকে মুম্বইগামী আপ জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। ঠিক ওই সময়ে ডাউন লাইনে উল্টোদিক থেকে আসা একটি মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে হয় এক্সপ্রেস ট্রেনটির। মৃত্যু হয় জ্ঞানেশ্বরীর ১৪৮ জন যাত্রীর। শতাধিক যাত্রী আহত হন। মালগাড়ির চালকও নিহত হন। অভিযোগ, মাওবাদীদের মদপুষ্ট জনসাধারণের কমিটির লোকজন আপ লাইনের প্যানড্রোল ক্লিপ ও ফিসপ্লেট খুলে দেওয়ায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছিল জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস।

Advertisement

জ্ঞানেশ্বরীর চালকের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করেছিল পুলিশ। পরে তদন্তভার নেয় সিবিআই। গ্রেফতার হন ২০ জন। পরে দু’জন জামিন পান। ১৮ জন এখন জেলবন্দি। মামলার বিচার চলছে মেদিনীপুরের অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের (আরডি কোর্ট অর্থাৎ রি-ডেজিগনেটেড কোর্ট) আদালতে। অভিযুক্তপক্ষের অন্যতম আইনজীবী দেবাশিস মাইতি জানান, ২২৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন জেলবন্দি রয়েছেন। দ্রুত মামলার নিষ্পত্তির জন্য আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

রেল প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার পরে রেল ও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন মৃতের পরিবারগুলি। এখনও অনেকের মৃত্যুর শংসাপত্র মেলেনি। এস-৫ কামরাটি এমন ভাবে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল যে, অনেকের দেহ শনাক্তই করা যায়নি। মৃতের পরিজনদের আইনজীবী তীর্থঙ্কর ভকত বলেন, ‘‘১৪৮ জন মৃত যাত্রীর মধ্যে ২৩ জন যাত্রীর এখনও মৃত্যুর শংসাপত্র পাওয়া যায়নি। যদিও তাঁদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। মৃত্যুর শংসাপত্র না পাওয়ার ফলে মৃতের পরিবারগুলি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। মামলাটি ঝাড়গ্রাম দেওয়ানি আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।’’ তীর্থঙ্করের অভিযোগ, তৎকালীন রেলমন্ত্রী বর্তমানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও এ বিষয়ে মৃতের পরিবারগুলিকে সহযোগিতা করেননি।

Advertisement

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের টাটা-খড়্গপুর শাখার খেমাশুলি-সরডিহার মাঝে রাজাবাসায় এখনও আপ লাইনের ধারে পড়ে রয়েছে জ্ঞানেশ্বরীর দোমড়ানো মোচড়ানো কামরার কঙ্কাল। চারপাশে আগাছার ঝোপ। এখন ওই শাখায় রেলের তৃতীয় লাইন পাতা হয়েছে। সেই কারণে ডাউন লাইনের ধারে জ্ঞানেশ্বরী ও মালগাড়ির দুর্ঘটনাগ্রস্ত ইঞ্জিন দু’টি কিছুটা সরানো হয়েছে। এখনও এলাকাটি আগের মতোই নির্জন। বুধবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, শুনশান ঠা-ঠা দুপুরে নিস্তব্ধ চারপাশ। আচমকা ডাউন লাইন দিয়ে খড়্গপুরের উদ্দেশে চলে গেল পরিযায়ী শ্রমিক স্পেশল একটি ট্রেন। এখনও রেল লাইনের ধারে সেই বীভৎস ঘটনার সাক্ষী হিসেবে রয়ে গিয়েছে কামরার কঙ্কালগুলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন