বিজয় মিছিলে বোমা, জখম শিশু-সহ ১১

বিজয় মিছিল এগোচ্ছিল তাসা-ব্যান্ড পার্টি সহযোগে। আবির খেলা চলছে। বাজি পুড়ছে। দু’চারটে পটকাও ফাটছে। হঠাৎই ঘটল প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। পর পর তিন বার। ধোঁয়া-ধুলোয় ঢেকে গেল চারদিক।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৬ ০৩:৩২
Share:

বসিরহাটে বোমা ফেটে আহত শিশু। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

বিজয় মিছিল এগোচ্ছিল তাসা-ব্যান্ড পার্টি সহযোগে। আবির খেলা চলছে। বাজি পুড়ছে। দু’চারটে পটকাও ফাটছে। হঠাৎই ঘটল প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। পর পর তিন বার। ধোঁয়া-ধুলোয় ঢেকে গেল চারদিক। ধোঁয়া সরতে দেখা গেল, এ দিক ও দিক ছড়িয়ে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে অনেকে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঠো পথ। তারই মধ্যে কারা যেন মোটর বাইকে তুলে কয়েকজন জখমকে নিয়ে পালাল গ্রামের রাস্তা ধরে।

Advertisement

পরে জানা গিয়েছে, বিস্ফোরণে জখম হয়েছেন ছ’জন শিশু-কিশোর সহ অন্তত ১১ জন। আরও জনা পাঁচেক আহতকে নিয়ে বাইক বাহিনী পালিয়েছে বলে জানাচ্ছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাদের খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। যদিও গোটা ঘটনায় মুখ খুলতে চাননি জেলা পুলিশ কর্তারা।

শনিবার সকাল ৯টা নাগাদ বসিরহাটের কৃপালপুর মাঝেরপাড়ায় এই ঘটনায় মিছিলের বাইরে থেকে কেউ বোমা মেরেছে, নাকি মিছিলের লোকজনই বোমা নিয়ে লোফালুফি করতে গিয়ে বিপদ বাধিয়েছে— তা নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। মিছিলের বাইরে থেকে বোমা ফাটানোর তত্ত্ব প্রমাণ করতে গেলে গ্রামের লোকজন ক্ষেপে ওঠে তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে।

Advertisement

বাপ্পা মণ্ডল নামে এক তৃণমূল নেতাকে হাতের সামনে পেয়ে শুরু হয় মারধর। পুলিশ হালকা লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। জখমদের পাঠানো হয় হাসপাতালে। ৪ জনকে ভর্তি করা হয়েছে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে। একজনকে পাঠানো হয়েছে কলকাতায়।

যে এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেটি বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। যেখানে জয়ী হয়েছেন জোট প্রার্থী সিপিএমের রফিকুল ইসলাম। তা হলে কেন সেখানে বিজয় মিছিল বেরোল?

স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের যুক্তি, শুক্রবার শপথ নিয়েছে নতুন সরকার। সেই আনন্দ উদযাপনের জন্যই বেরিয়েছিল মিছিল, উদ্যোক্তা খামারহাটি গ্রামের তৃণমূল নেতৃত্ব। আশপাশের আরও কিছু গ্রামের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরাও যোগ দেন মিছিলে। কৃপালপুর গ্রাম থেকেও এসেছিলেন অনেকে।

সেখানকারই বাসিন্দা তৃণমূল কর্মী আয়নাল মণ্ডল জখম হয়েছেন বোমায়। রক্তাক্ত শরীরে তখনও সবুজ আবির মাখা। বললেন, ‘‘খামারহাটির বাসিন্দা আলাউদ্দিন মণ্ডল আর একটা অন্য লোক মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে বোমা নিয়ে নিজেদের মধ্যে লোফালুফি খেলছিল। হঠাৎ আলাউদ্দিনের পায়ের কাছে একটা চকলেট বোম ফাটে। চমকে গেলে ওর হাত থেকে বোমা পড়ে যায় মাটিতে। সেটা প্রবল শব্দে ফেটেও যায়। আমি ছিটকে পড়ি। আরও অনেকে চোট পায়। তারপরে আরও দু’টো একই রকম শব্দ শুনেছি।’’

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই জানাচ্ছেন, খামারহাটির কিছু যুবক জখম কয়েকজনকে মোটরবাইকে তুলে নিয়ে পালিয়েছে গ্রামের দিকে।

স্থানীয় সিপিএম নেতা রসুল মণ্ডল, কুতুবুদ্দিন মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘ক্ষমতা দেখাতেই ওরা এই কেন্দ্রে ভোটে হেরেও বিজয় মিছিল করছিল। আশপাশের এলাকা থেকে লোক জুটিয়ে বোমা নিয়ে লোফালুফি খেলে ভয় দেখাতে চেয়েছিল। তারই মধ্যে তিনটে বোমা ফেটে এই কাণ্ড। তৃণমূলের লোকজন জখম অনেককে নিয়ে পালিয়েছে।’’

দুর্ঘটনার পরে গ্রামেরই একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় আহতদের। একে তো বিজয় মিছিলে এ হেন কাণ্ড, তার উপরে শিশু-কিশোরেরা জখম হওয়ায় লোকজন তখন ক্ষিপ্ত। এক হাতুড়ে চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করেন। ইতিমধ্যে পুলিশ পৌঁছয় গ্রামে।

তাপস ঘোষ নামে স্থানীয় এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘ঘটনার সময়ে আমি এলাকায় ছিলাম না। তবে শুনেছি, বাইরে থেকে কে বা কারা বোমা ছুড়েছে।’’ বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিশ আলি অবশ্য বলেন, ‘‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। যে-ই ঘটিয়ে থাকুক না কেন, অন্যায় করেছে। তদন্ত করে দলমত নির্বিশেষে পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন