দুই শহিদ, জয়জিৎ ও আজিজুল।
কাশ্মীরের বারামূলায় জঙ্গি হামলায় মারা গেলেন উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার হিঙ্গলগঞ্জের ছেলে সেনাকর্মী জয়জিৎ ঘোষ (৩২)। ওই একই হামলায় মৃত্যু হয়েছে বাদুড়িয়ার বাজিতপুর গ্রামের বাসিন্দা সেনাকর্মী আজিজুল মোল্লার (৩০)।
বুধবার এই খবর ছড়িয়ে পড়লে হিঙ্গলগঞ্জ এবং বাদুড়িয়ার গ্রামে শোকের ছায়া নামে। তবে আজিজুলের মৃত্যুসংবাদ তাঁর শ্বশুর মোজাফ্ফার আহমেদ মঙ্গলবার গভীর রাতেই টেলিফোনে জানতে পেরেছিলেন। আর জয়জিতের মৃত্যুর কথা তাঁর পরিবারের লোকেরা বুধবার স্থানীয় থানা সূত্রে জানতে পারেন। পুলিশ জানিয়েছে, দুই সেনাকর্মীর দেহ কাশ্মীর থেকে প্লেনে করে দিল্লি হয়ে দমদম বিমানবন্দরে আসতে শুক্রবার রাত হয়ে যাবে। সেখান থেকে বসিরহাটে গ্রামের বাড়িয়ে নিয়ে যেতে ভোর হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় কৃষিজীবী গোবিন্দবাবুর এক ছেলে এবং দুই মেয়ে। বছর পাঁচ আগে জয়জিতের বিয়ে হয়। তাঁর এক মেয়ে। গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন জয়জিৎ। দিন বারো আগে বাড়িতে এসেছিলেন চাষবাসের খোঁজ নিতে। গোবিন্দবাবু বলেন, ‘‘ক’দিন আগে বাড়ি এসে ছেলে বলেছিল, দুর্গাপূজোর সময়ে বাড়িতে ফিরবে।’’
স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, সুশান্ত ঘোষরা বলেন, ‘‘খুব ভাল ছেলে ছিল ও। সকলের সঙ্গে হেসে কথা বলত।’’
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ বারামূলা থেকে হিঙ্গলগঞ্জ থানায় ফোনে জানানো হয়, মঙ্গলবার রাতে জয়জিৎরা জঙ্গি আক্রমণের শিকার হয়েছেন। খবর শুনে পাড়া-প্রতিবেশীরাও চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, মঙ্গলবার রাত আড়াইটে নাগাদ যখন বারামূলায় দু’ধারে পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে মিলিটারিদের কনভয় আসছিল, সে সময়ে বরফে ঢাকা পাহাড়ের উপর থেকে জঙ্গিরা গুলি বৃষ্টি শুরু করে। সে সময়ে কনভয়ের একটি ছোট জিপে ছিলেন জয়জিৎ। জঙ্গিদের গুলি তাঁকে ঝাঁঝরা করে দেয়।
পুলিশ জানিয়েছে, বাদুড়িয়ার বাজিতপুর গ্রামের আরসাব মোল্লার ছেলে আজিজুল গত এগারো বছর ধরে সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। তাঁর দুই সন্তান। এ দিন বারামূলায় সেনাদের যে কনভয় দুই পাহাড়ের মাঝ দিয়ে যাচ্ছিল, তার একটি গাড়িতে ছিলেন আজিজুল। জঙ্গিদের ছোড়া গুলি তাঁর বুক ও হাত ফুটো করে বেরিয়ে যায়। ওই কনভয়ের সঙ্গে রওনা দেওয়ার আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ তিনি শ্বশুরমশাইকে ফোন করে স্ত্রী-সন্তান সহ পরিবারের বাকিদের খোঁজ নিয়েছিলেন। এ দিন মোজাফ্ফার বলেন, ‘‘ইদের সময়ে বাড়িতে এসে জামাই কত আনন্দ করেছিল। তবে কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার আগে বলেছিল, এ বার যেখানে যেতে হচ্ছে, সেই জায়গা অত্যন্ত দুর্গম। জঙ্গি অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় রাতে আলো জ্বালানো পর্যন্ত সম্ভব হয় না।’’