রোগীর সেবায় রূপান্তরকামীরা

২০১৪-য় সুপ্রিম কোর্টের নালসা রায়ের পরে ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামী, হিজড়েদের মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কাজের অধিকার নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে।

Advertisement

কলকাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৭ ১৩:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

ঘর ছেড়ে বিয়ের মরসুমে বিহার-উত্তরপ্রদেশের ‘লন্ডা নাচ’-এর জীবনটাই হয়তো ভবিতব্য ছিল। কিংবা হিজড়েদের দলে ঢুকে রাজপথে বা ট্রেনে ট্রেনে ভিক্ষাবৃত্তি।

Advertisement

তার বদলে অচিরেই অ্যাপ্রন গায়ে হাসপাতালে সেবাকর্মী হিসেবে কাজের দরজা খুলে যাচ্ছে তাঁদের সামনে। হাসপাতালের ইমার্জেন্সি, অপারেশন থিয়েটার বা অন্যত্র টেকনিশিয়ান কিংবা রোগীদের পরিচর্যাকারীর দায়িত্ব সামলাবেন তাঁরা। পারিবারিক দায়িত্বের চাপে কাজ পেতে মরিয়া, এমন দু’জন রূপান্তরকামী নারী পেয়ে গিয়েছেন নতুন রাস্তার খোঁজ। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্যারামেডিক্যাল কোর্সের তালিম নিয়ে ইনিংস শুরু করছেন তাঁরা। এ রাজ্যে যেটা নজিরবিহীন বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

২০১৪-য় সুপ্রিম কোর্টের নালসা রায়ের পরে ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামী, হিজড়েদের মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কাজের অধিকার নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে। ট্রান্সজেন্ডার উন্নয়ন বোর্ড গড়ে রূপান্তরকামীদের জন্য মূল স্রোতে চাকরিবাকরি নিয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে রাজ্য প্রশাসনকেও। সমাজকল্যাণ দফতরের সচিব রোশনী সেন বলেন, ‘‘আমরা ট্রান্সজেন্ডাদের সঙ্গে কথা বলে দেখছি, কী ধরনের কাজে ওঁরা বেশি স্বচ্ছন্দ হবেন।’’ ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে প্যারামেডিক্যাল কর্মী বা বিউটিশিয়ানের কাজে আগ্রহ চোখে পড়ছে বলেও জানাচ্ছেন তিনি।

Advertisement

এ দেশে প্যারামেডিক্যাল ক্ষেত্রে কাজের অনেক সুযোগ আছে বলে জানাচ্ছেন প্যারামেডিক্যাল শিক্ষায় কেন্দ্রীয় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একটি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা-অধিকর্তা শতদল সাহা। রূপান্তরকামী দুই নারী, মালদহের জিয়া দাস (যিশু) এবং বাটানগরের দেবদত্তা বিশ্বাস (দেবদান)-এর জন্য তালিমের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। এক বছরের কোর্স শেষে পাঁশকুড়ার হাসপাতালে তাঁদের নিয়োগের প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন শতদলবাবু।

জন্মসূত্রে শরীরে পুরুষ, মনে নারী জিয়া বা দেবদত্তার চলার পথটা মসৃণ ছিল না কখনওই। গরিব ঘরের সন্তান জিয়া এই সে-দিনও উত্তরপ্রদেশ-বিহারের বিয়েবাড়িতে পুরুষদের মনোরঞ্জন করতে চটুল নাচ নাচতেন। তাঁর কথায়, ‘‘খুনের হুমকি দিয়ে যৌন অত্যাচারের ঝুঁকিও থাকে সেই কাজে।’’ কিন্তু বিএ পাশ করা জিয়া অনেক চেষ্টাতেও রিসেপশনিস্টের চাকরি জোটাতে পারেননি। বাংলার এমএ দেবদত্তা দেখেছেন, গৃহশিক্ষক হিসেবেও রূপান্তরকামীকে মেনে নিতে সমাজের দ্বিধা কী পাহাড়প্রমাণ!

নিরুপায় হয়ে বহু রূপান্তরকামীই হিজড়ের দলে নাম লেখান। তবে জিয়া-দেবদত্তারা অন্য পথ পেয়েছেন। তাঁদের বন্ধু বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ‘সাতরঙ্গি’ নামে একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে উদ্বুদ্ধ হন শতদলবাবু। তিনি কথা দেন, ট্রান্সজেন্ডারদের প্যারামেডিক্যাল কর্মী হওয়ার সুযোগ দেবেন। কোচি মেট্রোয় কিছু ট্রান্সজেন্ডারকে চাকরি দেওয়া হলেও মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের অভাব আর অপমানে ইস্তফা দিয়েছেন তাঁরা। শতদলবাবু অবশ্য রূপান্তরকামী শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করছেন। ‘‘রূপান্তরকামীদের জন্য সামাজিক সুরক্ষাটাও জরুরি। লিঙ্গ বা যৌনতা-ভিত্তিক পরিচয়ের বাইরে মানুষ হিসেবে মর্যাদাটুকু তাঁদের প্রাপ্য,’’ বলছেন রূপান্তরিত নারী, ট্রান্সজেন্ডার বোর্ডের সহ-সভাপতি তথা কলেজের অধ্যক্ষা মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement