মধ্যমগ্রাম কাণ্ডে ২০ বছর কারাদণ্ড

মধ্যমগ্রামে গণধর্ষণ এবং পরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় পাঁচ জনকে ২০ বছর কারাদণ্ড দিল আদালত। শুক্রবার বারাসত ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট বিশেষ আদালতের বিচারক শান্তনু ঝা এই নির্দেশ দেন। গণধর্ষণ সংক্রান্ত সংশোধিত নতুন দণ্ডবিধিতে রাজ্যে এই প্রথম কারও সাজা হল। ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছিল গত বছর ২৫ অক্টোবর। তার আগেই মার্চ মাসে গণধর্ষণ সংক্রান্ত আইনের পরিবর্তন করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫৯
Share:

মধ্যমগ্রামে গণধর্ষণ এবং পরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় পাঁচ জনকে ২০ বছর কারাদণ্ড দিল আদালত। শুক্রবার বারাসত ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট বিশেষ আদালতের বিচারক শান্তনু ঝা এই নির্দেশ দেন। গণধর্ষণ সংক্রান্ত সংশোধিত নতুন দণ্ডবিধিতে রাজ্যে এই প্রথম কারও সাজা হল।

Advertisement

ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছিল গত বছর ২৫ অক্টোবর। তার আগেই মার্চ মাসে গণধর্ষণ সংক্রান্ত আইনের পরিবর্তন করা হয়। তাতে ৩৭৬ (ডি) ধারায় বলা হয়েছে, গণধর্ষণ প্রমাণিত হলে তার ন্যূনতম শাস্তি হবে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। মধ্যমগ্রাম গণধর্ষণ মামলার সরকারি বিশেষ কৌঁসুলি বিপ্লব রায় বলেন, “ওই নতুন ধারাতেই ২০ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।” উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চোধুরী বলেন, “সংশোধিত নতুন আইনে রাজ্যে এই প্রথম সাজা হল।”

মধ্যমগ্রামে নিগৃহীতা কিশোরীর বয়স ছিল ১৬। সে কারণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ‘প্রোটেকশন অব চাইল্ড ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্স’ (পসকো) আইনেও অভিযোগ আনা হয়েছিল। ওই ধারায় দোষীদের ১০ বছর কারাদণ্ড দেন বিচারক। যদিও দু’টি সাজাই এক সঙ্গে চলবে। ছয় অভিযুক্তের মধ্যে অ্যান্টনি সচ্চি নামে এক জন আগেই রাজসাক্ষী হয়ে গিয়েছিলেন। বিপ্লববাবু বলেন, “বাকি পাঁচ জন সঞ্জীব তালুকদার ওরফে ছোট্টুু, পলাশ দেবনাথ, রাজেশ মণ্ডল, পাপাই রায় ও রাজীব বিশ্বাসের কারাদণ্ড ছাড়াও ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা হয়েছে। অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।”

Advertisement

এ দিন আদালতে বিচারক জানতে চান, নিগৃহীতা কিশোরীটিই যখন বেঁচে নেই, জরিমানার টাকা কে পাবে? সরকারি কৌঁসুলি বলেন, এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিশোরীর পরিবার। রায়দানের সময়ে বিচারক জানান, জরিমানার টাকা মৃতার মাকে দেওয়া হবে। রায় জানার পরে বিহারে ওই কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মেয়েটির বাবা বলেন, “এই রায়ে আমরা খুশি। তবে, আমরা চাই দুষ্কৃতীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক।” ঘটনাচক্রে, এ দিনই বারাসত আদালতে বামনগাছির প্রতিবাদী ছাত্র সৌরভ চৌধুরীর খুনের মামলায় চার্জগঠন হয়েছে বলে বিপ্লববাবু জানিয়েছেন।

২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর মধ্যমগ্রামের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বিহারের ওই ট্যাক্সিচালকের কিশোরী মেয়েকে গণধর্ষণ করেছিল ছয় যুবক। অভিযোগ জানিয়ে থানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে মেয়েটিকে তুলে নিয়ে গিয়ে ফের ধর্ষণ করে আগের বারের ধর্ষণে মূল অভিযুক্ত ছোট্টু। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু মেয়েটির পরিবারকে মামলা প্রত্যাহার জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। মধ্যমগ্রাম ছেড়ে বাসা বদল করে এয়ারপোর্ট এলাকায় চলে আসে পরিবারটি। কিন্তু সেখানে গিয়েও মেয়েটি উপরে মানসিক অত্যাচার চালানো হয়। ২৩ ডিসেম্বর এয়ারপোর্টের বাড়িতেই অগ্নিদগ্ধ হয় সে। ৩১ ডিসেম্বর আরজিকর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তদন্তে নেমে দু’জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। ব্যারাকপুর আদালতে সেই মামলার বিচার চলছে। বারাসত আদালতে এখনও চলছে দ্বিতীয় বার ধর্ষণের মামলার বিচার।

মামলার রায় শোনার জন্য এ দিন সকাল তেকেই বারাসত আদালতে ভিড় করেছিল জনতা। এসডিপিও (বারাসত) সুবীর চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মোতায়েন ছিল পুলিশও। পাঁচ অভিযুেক্তের পরিবারের লোকেরা উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না নিগৃহীতার বাবা-মা। তাঁরা আপাতত বিহারেই রয়েছেন। প্রথমার্ধ্বে অভিযুক্তদের বক্তব্য শোনার পরে দ্বিতীয়ার্ধ্বে রায় শোনান বিচারক। সাজা শুনে কেঁদে ফেলে অভিযুক্তেরা। তাদের পরিবারের লোকজনও কান্নাকাটি করেন। তবে সংবাদমাধ্যমের কাছে কেউ কিছু বলতে চাননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement