100 Days Work

বকেয়া টাকা নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন অনেকেই

নেতাদের আন্দোলন নিয়ে কটাক্ষ করেছেন হাসনাবাদের পাটলি খানপুর পঞ্চায়েতের বাসিন্দা আজগার গাজিও। প্রায় দেড় বছর আগে ২০-৩০ দিন কাজ পেয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩৬
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি। Sourced by the ABP

তাঁদের পাওনা নিয়েই চলছে দু’পক্ষের তরজা।

Advertisement

রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল বলছে, কেন্দ্র প্রতিহিংসার রাজনীতির জন্য বাংলার শ্রমিকদের একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে। কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা বিজেপির পাল্টা দাবি, হিসেব না দেওয়ায়, দুর্নীতির জন্যই টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। বছর দেড়েক ধরে চলা এই টানাপোড়েনের মাঝে পড়ে বকেয়া টাকা নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন বহু শ্রমিক।

হিঙ্গলগঞ্জের কালীতলার বাসিন্দা রমেন মণ্ডল এখন তামিলনাড়ুতে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজে গিয়েছেন। জানালেন, অন্তত ৪০ দিন কাজ পেয়েছিলেন একশো দিনের প্রকল্পে। বছরখানেক আগে কাজ করলেও সেই টাকা পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামে অন্য কাজ নেই। স্ত্রী, এক ছেলেকে নিয়ে সংসার। ছেলে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ে আর পড়াশোনা করতে চায়নি। স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে বছরখানেক আগে তামিলনাড়ু এসেছি। সুতো তৈরির কারখানায় তিন জনে কাজ করে মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা উপার্জন করছি।’’ একশো দিনের পাওনা টাকা নিয়ে এখন আর ভাবেন না রমেন। তামিলনাড়ু থেকে টেলিফোনে বললেন, ‘‘ওই টাকা নিয়ে আর ভাবছি না। সরকারি কাজ করেছি যখন নিশ্চয়ই টাকা এক দিন পাব। তবে আমাদের টাকা নিয়ে এই জটিলতায় রাজনৈতিক নেতারা যে যার স্বার্থ দেখছেন বলেই মনে হয়।’’

Advertisement

নেতাদের আন্দোলন নিয়ে কটাক্ষ করেছেন হাসনাবাদের পাটলি খানপুর পঞ্চায়েতের বাসিন্দা আজগার গাজিও। প্রায় দেড় বছর আগে ২০-৩০ দিন কাজ পেয়েছিলেন তিনি। টাকা আজও মেলেনি। মাঝে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন। তা-ও নিয়মিত মিলত না। কয়েক মাস হল ছেলেকে নিয়ে কেরলে এসেছেন রাজমিস্ত্রির কাজ করতে। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের সময়ে দেখছি সকলেই আমাদের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন!’’ তাঁর দাবি, ‘‘একশো দিনের পরিবর্তে সারা বছর যাতে সকলে এলাকায় থেকে কাজ পান, তা নিয়ে আন্দোলন হোক। কাজের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতেও আন্দোলন দরকার।’’

বকেয়া নিয়ে আন্দোলনে প্রাপকেরা যে সত্যিই আগ্রহ হারিয়েছেন, তার প্রমাণ মিলছে শাসক দলের কিছু নেতার কথাতেও। সন্দেশখালি থানা এলাকায় বুধবার একশো দিনের কাজের টাকা আদায় নিয়ে অবস্থান-বিক্ষোভ করে তৃণমূল। সেই বিক্ষোভে লোক নিয়ে আসার কথা ছিল তৃণমূলের এক অঞ্চল সভাপতির। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতার আক্ষেপ, ‘‘একশো দিনের কাজের টাকা আদায়ের জন্য বিক্ষোভ হবে বলে লোক ডাকলে আর কেউ আসতে চায় না। সকলেই বলে, আমাদের তো অন্য কাজ করে তো খেতে হবে। রোজ রোজ বিক্ষোভে গেলে কী করে পেট চলবে!’’

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০২১-’২২— এই দু’বছর যে সব শ্রমিকের টাকা বাকি, তাঁরা বড়জোর দিনে ২১০ টাকা করে মজুরি পাবেন। অর্থাৎ, কেউ একশো দিন কাজ করে থাকলেও তাঁর বকেয়া ২১ হাজার টাকার বেশি নয়। তা-ও অধিকাংশই একশো দিন কাজ পাননি। অনেকে ২০-৩০ দিনের কাজের টাকা পাবেন। সেই টাকার ভরসায় তাই থাকতে চান না বেশির ভাগ মানুষ।

তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে রাজ্য সরকারের তরফে বকেয়া মেটানোর ঘোষণা করেছেন, তাতে ভরসাও পাচ্ছেন অনেকে। অসীমা দেবনাথ বলেন, ‘‘আমি ও আমার স্বামী দু’জনেই ১০ দিনের কাজের টাকা পাইনি। শুনলাম টাকা পাব। তবে টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যায় না।’’ বৃদ্ধ ইন্দ্রজিৎ পোদ্দারের কথায়, ‘‘আমার তিন মাসের টাকা বাকি। এখন খেতে দিনমজুরি করছি। টাকা পেলে কিছুটা সুরাহা তো হবেই। ভবিষ্যতে ওই প্রকল্পে কাজ শুরু হলে আবারও যোগ দেব।’’ নিরাপদ দেবনাথ বলেন, ‘‘পনেরো দিন কাজের টাকা পাই। তবে কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে যে টালবাহানা চলছে, তাতে টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত বিশ্বাস নেই। টাকা আর পাব না বলেই ধরে নিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন