ভাঙাচোরা: ক্লাসঘরের দশা। ছবি: শান্তনু হালদার।
সরকারি নির্দেশ এসেছে, পুরনো ঘরগুলিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন ঘরে ক্লাস চালু করতে হবে।
জেলাশাসকের এ হেন নোটিস পেয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের মাথায় হাত। বেশ কিছু ঘর জীর্ণ। নোটিস পেয়ে সেখানে ক্লাস নেওয়া বন্ধও করে দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু নতুন ঘর আবার এল কোথা থেকে?
স্কুল কর্তৃপক্ষ পাল্টা চিঠি দিয়ে জেলাশাসককে জানিয়েছেন, তিনি যেন নিজে এসে একবার পরিস্থিতি দেখে যান।
হাবরার দক্ষিণ নাংলা কে ইউ ইন্সটিটিউশনে স্কুলের একটি ভবনের একতলা ও দোতলার ঘরগুলিকে ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণার জন্য ২৫ অগস্ট উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক অন্তরা আচার্যের মৌখিক নির্দেশ এসে পৌঁছয়। পর দিন থেকে সেখানে পঠন-পাঠন বন্ধ করে দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ২৯ অগস্ট জেলাশাসকের লিখিত নির্দেশ স্কুলে এসে পৌঁছেছে। তাতেই বিস্মিত সকলে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক কিশলয়কুমার পালকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, স্কুলে তৈরি হওয়া নতুন ১১টি ঘরে পঠন-পাঠন শুরু করতে। এ দিকে, স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, নতুন তৈরি হওয়া কোনও ঘরের অস্তিত্বই নেই।
প্রশাসনের কর্তারা গিয়েছিলেন স্কুল পরিদর্শনে। রিপোর্ট পাঠান। তারই ভিত্তিতে জেলাশাসকের এই নির্দেশ। কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ। জেলাশাসক বলেন, ‘‘ওই স্কুলের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে।’’
যে ঘরগুলি বন্ধ করতে বলা হয়েছে, সেগুলির অবস্থা সত্যিই করুণ। কোনও ঘরের ছাদ থেকে চাঙড় খসে পড়েছে। কোনও ঘরের পলেস্তারা খসে ক্ষয়াটে চেহারা। দরজা-জানলা ভাঙা। বৃষ্টি হলে ছাদ দিয়ে জল পড়ে। ঢালাইয়ের রড নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দেওয়ালেও ফাটল।
বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘ দিন এর মধ্যেই চলছিল ক্লাস। শিক্ষকেরা ক্লাসে ঢোকার আগে মনে মনে প্রার্থনা করতেন, ছাদ ভেঙে যেন ঘাড়ে না পড়ে। আর যদি বা ভাঙে, যেন রাতে ঘটে সেই অঘটন। শুধু প্রার্থনাতে অবশ্য পুরো কাজ হয়নি। ক্লাস চলাকালীন ছাদের চাঙড় ভেঙে ছাত্র-শিক্ষক জখম হয়েছেন, এমন ঘটনা ঘটেছে। চাঙড়ের আকার-আয়তন তেমন একটা না হওয়ায় বড়সড় বিপদ ঘটেনি। স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজেদের উদ্যোগে ঘর সারাই করেছেন। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই ফের আগের অবস্থা।
এ দিকে, পুরনো ঘর বন্ধ করে ১৪০০ পড়ুয়া নিয়ে পঠন-পাঠন চালাতে সমস্যায় পড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরিত্যক্ত ১৬টি ঘর বাদ যাওয়ায় স্কুলে এখন শ্রেণিকক্ষ মাত্র ১৭টি। সেখানেই কোনও রকমে চলছে পড়াশোনা। দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের আগে দু’টি বিভাগে ভাগ করে দু’টি ঘরে ক্লাস নেওয়া হত। পড়ুয়ারা সংখ্যা প্রায় ১৭০। তাদেরকে এখন একটি ঘরে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে। পড়ুয়াদের কথায়, ‘‘এ ভাবে গাদাগাদি করে বসে কি লেখাপড়া করা যায়?’’
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দশ বছর ধরেই ঘরগুলির অবস্থা খারাপ। কিশলয়বাবু বলেন, ‘‘২০১২ সালে স্কুলে প্রধান শিক্ষক হয়ে আসার পর থেকে ওই ঘরগুলি সংস্কারের জন্য বিধায়ক, শিক্ষামন্ত্রী, ব্লক ও জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করে আসছি। এখনও কোনও আর্থিক সাহায্য মেলেনি।’’ প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘এখন আর ঘরগুলি মেরামত করার মতো পরিস্থিতি নেই। গোটা ভবন ভেঙে নতুন করে করতে হবে।’’
শ্রেণিকক্ষ বেহাল হলেও দিন কয়েক আগে প্রায় ১ কোটি ১১ লক্ষ ব্যয়ে ছাত্রাবাস তৈরি শুরু হয়েছে। এলাকার মানুষের বক্তব্য, ছাত্রাবাস তৈরি হচ্ছে, ভাল কথা। কিন্তু যাতে ভাল ভাবে ক্লাস করা যায়, ঘর তৈরি করে সেই ব্যবস্থা করা বেশি জরুরি।
স্থানীয় বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য আশার কথা শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিডিওকে বলা হয়েছে, স্কুলে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে জেলাশাসককে একটি রিপোর্ট দিতে। তারপরে আমরা দ্রুততার সঙ্গে ওই স্কুলে নতুন ভবন তৈরির কাজ শুরু করব।’’