টিটাগড়ে বন্ধ দুই চটকল, কর্মহীন ৬ হাজার শ্রমিক

একই দিনে দু’টি চটকল বন্ধ হয়ে গেল টিটাগড়ে। একটি চটকলে কর্তৃপক্ষ সোমবার সকালে কারখানার গেটে সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক-এর নোটিস টাঙিয়ে দেয়। অন্যটিতে চটকলের একটি ইউনিট বন্ধ করে তাঁদের ছাঁটাই করা হচ্ছে বলে বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০০:৪৭
Share:

জটলা: কারখানার গেটের সামনে কর্মহীন শ্রমিকদের ভিড়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

একই দিনে দু’টি চটকল বন্ধ হয়ে গেল টিটাগড়ে। একটি চটকলে কর্তৃপক্ষ সোমবার সকালে কারখানার গেটে সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক-এর নোটিস টাঙিয়ে দেয়। অন্যটিতে চটকলের একটি ইউনিট বন্ধ করে তাঁদের ছাঁটাই করা হচ্ছে বলে বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকেরা। তার জেরে কারখানা কর্তৃপক্ষ মিল বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ। ক্ষিপ্ত শ্রমিকেরা কারখানার কর্তাদের রাত পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখেন। দু’টি চটকল বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়ে পড়লেন প্রায় ছ’হাজার শ্রমিক।

Advertisement

টিটাগড়ের অন্যতম পুরনো চটকল ‘লুমটেক্স’-এর মালিকানা বদল হয়েছে সম্প্রতি। বর্তমানে এর নাম ‘ডেডিকো ভেপার প্রাইভেট লিমিটেড।’ কারখানাটিতে বেশ কিছু দিন ধরেই শ্রমিকদের সঙ্গে মালিক পক্ষের গোলমাল চলছিল। শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের দিয়ে জোর করে চুক্তির বেশি কাজ করানো হচ্ছিল। তাঁরা তা করতে অস্বীকার করেন।

সোমবার সকালে গেটে মিল বন্ধের নোটিস সাঁটানো হয়। বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকেরা। খবর পেয়ে কারখানার অন্য শ্রমিকেরাও বিক্ষোভে যোগ দেন। কারখানা কর্তৃপক্ষকে বাইরে এসে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসার দাবি জানান শ্রমিকেরা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ দাবি না মানায় পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

Advertisement

কাছাকাছি কেলভিন জুট মিলেও এ দিন সকালেই অশান্তি শুরু হয়। মিল কর্তৃপক্ষ কারখানার তাঁত ইউনিটটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। সে কথা জানার পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শ্রমিকেরা। ওই বিভাগের শ্রমিকেরা জানতে চান, তাদের কী ব্যবস্থা হবে? মিল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও জবাব না পেয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরাও। কারখানার অন্য বিভাগের শ্রমিকেরাও কাজ বন্ধ করে দেন।

মিল কর্তৃপক্ষ অন্য বিভাগের শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু তাঁরা কাজে যোগ দেননি। অভিযোগ, এই সময়ে পুরো মিলের বিদ্যুৎ ও জলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। তার পরেই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শ্রমিকেরা কারখানার কর্তা ও আধিকারিকদের ঘেরাও করে রাখেন।

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় পুলিশ ডাকা হয়। শ্রমিকেরা দাবি জানান, তাঁত বিভাগ চালু করা হোক। বিদ্যুৎ ফিরিয়ে কারখানা ফের চালু করা হোক। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা মেনে না নেওয়ায় উত্তেজিত শ্রমিকেরা কারখানার অফিসের বিদ্যুৎ ও জলের সংযোগ কেটে দেন। সেখানেই মিলের কর্তাদের ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। পুলিশ এলেও মিলের কর্তা আধিকারিকদের রাত পর্যন্ত ঘেরাও মুক্ত করা যায়নি। দুপুরের দিকে মিলের আধিকারিকদের জন্য বিরিয়ানি আনা হচ্ছিল। অভিযোগ, শ্রমিকেরা তা ছিনিয়ে রাস্তায় ফেলে দেন। টিটাগড়ের পুরপ্রধান প্রশান্ত চৌধুরী মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তাতেও সমস্যা মেটেনি। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁত ইউনিটটি লোকসানে চলছিল বলে সেটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাঁদের দাবি, ওই ইউনিটের শ্রমিকদের অন্য বিভাগে বদলি করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষের এই দাবিকে অসত্য বলছেন শ্রমিকেরা।

পানিহাটির বিধায়ক, শ্রমিক নেতা নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘শ্রমমন্ত্রীকে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকার অনুরোধ জানিয়েছি। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন