বাগুইআটির দুই অপহৃত স্কুলছাত্রের দেহ মিলল বসিরহাটের মর্গে, মুক্তিপণ চেয়ে ফোন এসেছিল বাড়িতে

দুই কিশোর বাগুইআটির জগৎপুরের বাসিন্দা। এই কাণ্ডে মোট চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ঘটনার মূল চক্রী এখনও অধরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা, বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৫:১৯
Share:

অতনু এবং অভিষেক। —প্রতীকী চিত্র।

কলকাতার বাগুইআটি থেকে নিখোঁজ হওয়া দুই কিশোরের দেহ উদ্ধার হল উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট থেকে। মঙ্গলবার সকালে ওই দুই ছাত্রের পরিবারের লোকজন তাদের দেহ শনাক্ত করেছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। বসিরহাট হাসপাতালের মর্গে গত প্রায় ১৩ দিন ধরে অশনাক্ত অবস্থায় ওই দেহ দু’টি পড়েছিল। মৃতদের নাম অভিষেক নস্কর (১৬) এবং অতনু দে (১৫)। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে যান রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায়। দুই স্কুল ছাত্রের খুনের ঘটনায় পুলিশের কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন তিনি। ওই কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছে রাজ্য বিজেপি।

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুরে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান বিশ্বজিৎ ঘোষ সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, ওই দুই কিশোর গত ২২ অগস্ট থেকে নিখোঁজ ছিল। এ নিয়ে পুলিশের কাছে ২৪ অগস্ট একটি অপহরণের অভিযোগ দায়ের হয়। এখনও পর্যন্ত ওই কাণ্ডে মোট চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ওই ঘটনার প্রধান ষড়যন্ত্রকারী সত্যেন্দ্র চৌধুরী এখনও অধরা বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দাপ্রধান।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিষেক এবং অতনু বাগুইআটির হিন্দু বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। তাদের বাড়ি বিধাননগর পুরনিগমের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। গত ২২ অগস্ট থেকে তারা নিখোঁজ ছিল। বসিরহাট পুলিশ জেলার সুপার জোবি থমাস জানিয়েছেন, ২৩ অগস্ট সন্ধ্যায় ন্যাজাট থানা এলাকায় এক কিশোরের দেহ উদ্ধার হয়। অন্য এক কিশোরের দেহ ২৫ অগস্ট পাওয়া যায় মিনাখাঁ থানা এলাকায়। তাঁর কথায়, ‘‘২৩ অগস্ট এবং ২৫ অগস্ট ন্যাজাট এবং মিনাখাঁ থানা এলাকা থেকে দুই কিশোরের দেহ উদ্ধার করা হয়। তাদের দেহ শনাক্ত করা যায়নি। আমরা বিভিন্ন থানায় বার্তা পাঠিয়েছিলাম। সোমবার বাগুইআটি থানা জানায়, তাদের এলাকার দুই ছাত্র নিখোঁজ। আজ দু’টি দেহ শনাক্ত হয়েছে।’’

Advertisement

বিধাননগরের গোয়েন্দাপ্রধানের দাবি, ২৪ তারিখ অতনু এবং অভিষেকের পরিবারের তরফে একটি অভিযোগ করা হয়। সেখানে অপহরণের কথা লেখা হয়েছিল। তার পরেই বিভিন্ন থানায় খবর পাঠানো হয়। কিন্তু নিখোঁজ ছাত্র দু’জনের কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। অতনুর বাবা অভিজিৎ দে মঙ্গলবার বলেন, ‘‘২২ তারিখ বিকেলে ছেলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। আমি ফোন করে পাচ্ছিলাম না। পরে ওর মা ফোন করে। ও মাকে বলে, ‘আমি আসছি।’ এর পর থেকে ওকে আর ফোনে পাইনি। ওর ফোন সুইচড অফ হয়ে যায়।’’ তাঁর দাবি, মুক্তিপণের ফোনও এসেছিল। প্রথমে ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। পরে সেই অঙ্ক বাড়িয়ে করা হয় এক কোটি। যদিও বিশ্বজিতের দাবি, ওই দু’জনকে অপহরণ করা হয়েছিল খুনের লক্ষ্যে। মুক্তিপণের বিষয়টি ‘নাটক’। তাঁর কথায়, ‘‘মুক্তিপণ চাওয়ার সময় পরিবারের তরফে ছেলের সঙ্গে কথা বলানোর দাবি জানানো হয়। কিন্তু সেই দাবি জানানোর পর আর ফোন আসেনি। এ সব ক্ষেত্রে কোনও ভাবেই অপহরণকারীরা এত দ্রুত পণের অঙ্ক পরিবর্তন করে না। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, খুনের লক্ষ্যেই অপহরণ।’’

বিধাননগর পুলিশের দাবি, সোমবার এই ঘটনায় অভিজিৎ বসু নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে দীর্ঘ ক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তিন জনের হদিস পাওয়া যায়। তাঁরা হলেন শামিম আলি, শাহিন মোল্লা এবং দিব্যেন্দু দাস। ওই তিন জনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, অভিজিতের কাছ থেকেই তারা জানতে পারে, ওই দুই ছাত্রকে খুন করা হয়েছে। তার পরেই বিভিন্ন থানায় জানতে চাওয়া হয় অশনাক্ত অবস্থায় মর্গে কোনও দেহ আছে কি না! এর পর জানা যায়, বসিরহাটের মর্গে তিনটে অশনাক্ত দেহ রয়েছে। মঙ্গলবার সকালেই অতনুর পরিবারের তরফে দেহ শনাক্ত করা হয়। বিধাননগরের গোয়েন্দাপ্রধানের দাবি, অভিষেকের দেহ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত শনাক্ত হয়নি।

তবে সত্যেন্দ্র ছাড়াও আরও এক জনকে খুঁজছে পুলিশ। সেই ব্যক্তির নাম মঙ্গলবার তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করতে চাননি বিধাননগরের গোয়েন্দাপ্রধান। প্রশ্ন ওঠে, ২২ তারিখ নিখোঁজ হলেও এত দিন কেন লাগল ওই দুই ছাত্রের হদিস পেতে? তা-ও জীবিত উদ্ধার করা গেল না কেন? গোয়েন্দাপ্রধানের দাবি, তাঁরা অভিযোগ পেয়েছেন ২৪ তারিখ। তার পরেই বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন তাঁরা। সোমবার অভিজিৎকে গ্রেফতার করার পরেই তাঁরা জানতে পারেন, খুনের কথা। এর পরেই বিভিন্ন থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, মর্গে দেহ আছে কি না, তা জানার জন্য! তার পরেই এক কিশোরের দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। অন্য জনের সন্ধান দ্রুত পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

যদিও অতনু এবং অভিষেকের পরিবারের দাবি, তারা ২২ তারিখ পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও গোয়েন্দাপ্রধানের দাবি, তাঁরা ২৪ তারিখ অভিযোগ পেয়েছেন। এমন কোনও অভিযোগ তাঁরা ২২ তারিখ পাননি। তবে তিনি অভিযোগের দিন সংক্রান্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন