Coronavirus

coronavirus in West Bengal: করোনায় ৭ দিনে উত্তরে মৃত ২৭

উদ্বেগ বাড়িয়ে দৈনিক করোনা সংক্রমণ ক্রমাগত ওঠানামা করছে। কখনও তা দেড়শো ছাড়াচ্ছে, কখনও সামান্য কমছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২১ ০৭:০৬
Share:

বিধি-শিকেয়: মাস্ক নেই, দূরত্বববিধিও দূরঅস্ত। ছটপুজোয় বনগাঁয় দেখা গেল এই পরিস্থিতি। ছবিটি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক।

করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। উদ্বেগ বাড়িয়ে দৈনিক করোনা সংক্রমণ ক্রমাগত ওঠানামা করছে। কখনও তা দেড়শো ছাড়াচ্ছে, কখনও সামান্য কমছে।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুজোর আগে ২৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক করোনা সংক্রমণ কমে হয়েছিল ৭২। এর ঠিক এক মাস বাদে, দুর্গাপুজোর পরে ২৭ অক্টোবর জেলায় দৈনিক সংক্রমণ দেড়শো ছাড়ায়। ১ নভেম্বর তা কমে হয় ৯৪। ৪ নভেম্বর সংখ্যাটা ফের দেড়শো ছাড়ায়। তারপর থেকে কয়েকদিন দৈনিক সংক্রমণ ছিল দেড়শোর নীচে। বুধবার তা আবার দেড়শো ছাড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতরের সূত্র জানাচ্ছে, গত ৭ দিনে (৪-১০ নভেম্বর) জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১০ জন। এই সময়ে মারা গিয়েছেন ২৭ জন। তার আগের ৭ দিনে (২৮ অক্টোবর-৩ নভেম্বর) জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯৯৩ জন। ওই সময়ে মারা গিয়েছিলেন ২৩ জন। এই তথ্য-পরিসংখ্যানে উদ্বিগ্ন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। তাঁদের আশঙ্কা, মানুষের বেপরোয়া মনোভাবের ফলে দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। মানুষকে সতর্ক থাকার কথা বার বার বলা হলেও নিয়ম ভাঙার চিত্র দেখা যাচ্ছে সর্বত্র।

Advertisement

এ বিষয়ে বারাসত জেলা হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘টিকা নেওয়াই যথেষ্ট নয়। কিছু মানুষ টিকা নিয়েছেন বলে মাস্ক পরছেন না। শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় রাখছেন না। মনে রাখতে হবে, পঁচিশ বছরের যুবক করোনায় আক্রান্ত হলে তিনি হয় তো সুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু ওই যুবকের মাধ্যমে বাড়ির বয়স্ক বাবা-মা আক্রান্ত হলে তাঁদের ক্ষেত্রে জটিলতার আশঙ্কা অনেক বেশি।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, ৭৪ লক্ষ ৪৬ হাজার ৮৬৪ জন ভোটারের মধ্যে বুধবার পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ় পেয়েছেন ৬৭ লক্ষ ৩৮ হাজার মানুষ। দ্বিতীয় ডোজ় পেয়েছেন ২৯ লক্ষ ৩৩ হাজার মানুষ। এই পরিস্থিতিতেও কোভিড-বিধি শিকেয় তুলে বেলাগাম আমজনতার একটা বড় অংশ। স্বাস্থ্যবিধি উড়িয়ে কালীপুজোর দিনগুলিতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গিয়েছে বারাসত, মধ্যমগ্রাম, হাবড়া, মছলন্দপুর, বাগদা, গাইঘাটা, বসিরহাট, ব্যারাকপুর-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। বেশিরভাগেরই মাস্ক ছিল না। অভিযোগ, পুলিশও ছিল নির্বিকার।

একই পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে ছটপুজোকে কেন্দ্র করেও। শুধু তাই নয়, সরকারি বিধি-নিষেধ থাকলেও বিভিন্ন এলাকায় জলসা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিচিত্রানুষ্ঠান, ফুটবল প্রতিযোগিতা, রাজনৈতিক সমাবেশের আয়োজন হচ্ছে। মানুষ ভিড় করছেন। শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় থাকছে না। তা ছাড়া, জেলার বাসিন্দাদের অনেকেই করোনাবিধি মানছেন না। বাইরে বেরোনোর সময়ে মাস্ক পরছেন না বেশিরভাগ মানুষ। বাজার এলাকায় শারীরিক দূরত্ববিধি মানা হচ্ছে না। বেশির ভাগ ক্রেতা-বিক্রেতারই মাস্ক নেই। অনেকেই থুতনিতে মাস্ক নামিয়ে বেচা-কেনা করছেন। সকাল-বিকেল চায়ের ঠেক ও পাড়ার মোড়ে যুবকেরা আড্ডা দিচ্ছেন মাস্ক না পরেই। বাস, অটো, টোটো-সহ যানবাহনেও মানুষ মাস্ক ছাড়া যাতায়াত করছেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনেকেই মাস্ক নামিয়ে ধূমপান করছেন। সচেতন বাসিন্দাদের মতে, দেড় বছর ধরে করোনা বহু মানুষের প্রাণ কেড়েছে। বার বার প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা হলেও অনেকেই বেপরোয়া। হাজার প্রচারেও তাঁরা নিয়ম মানেন না। পুলিশ রাস্তায় নেমে কড়া পদক্ষেপ করলেই একমাত্র কাজ হবে। দ্বিতীয় কোনও বিকল্প নেই।

জেলায় স্থানীয় ভাবে কয়েকটি পুরসভা কিছু বিধিনিষেধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও পুলিশি নজরদারি সে ভাবে চোখে পড়ছে না। পুলিশের অবশ্য দাবি, মাস্ক-ছাড়াদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।

জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘‘মানুষকে সচেতন করতে প্রচার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মাস্ক-ছাড়াদের বিরুদ্ধে পুলিশ ধরপাকড় করছে। আমরা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি।’’

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ মনে করছেন, করোনার উপসর্গ ধরা পড়ার পরেও করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না অনেকে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁরা হাসপাতালে যাচ্ছেন। ফলে অনেক রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘এখন যাঁদের করোনায় মৃত্যু হচ্ছে, তাঁদের বেশিরভাগই বয়স্ক। এঁদের মধ্যে অনেকেরই অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, কিডনির সমস্যা রয়েছে বা ক্যানসারে ভুগছিলেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement