তিন কোটি টাকা তছরুপে ধৃত ৩

এক বছর আগে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার প্রায় তিন কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছিল একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক কর্তা-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

অশোকনগর শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৭ ০১:২৯
Share:

এক বছর আগে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার প্রায় তিন কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছিল একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক কর্তা-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় বরখাস্ত হওয়া ওই ব্যাঙ্কের এক কর্তা এবং দুই ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতভর তল্লাশি চালিয়ে দমদমের পূর্ব সিঁথি রোড এলাকার বাসিন্দা, অনির্বাণ দাস নামে ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের হাবরা শাখার প্রাক্তন ডেপুটি ম্যানেজার এবং দত্তপুকুর ও হাবরার দুই ব্যবসায়ী সুব্রত দত্ত এবং সুব্রত সরকারকে পুলিশ ধরে। অভিযোগ হওয়ার পরেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অনির্বাণ-সহ অভিযুক্তদের বরখাস্ত করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গোটা ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদলও। কারণ, পুরসভাটি তৃণমূল পরিচালিত। ২০১২-১৩ এবং ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে মিড-ডে মিল এবং বার্ধক্য-বিধবা ভাতার মোট ২ কোটি ৯২ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তছরুপ হয় বলে গত বছর ২৮ মে অশোকনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার।

Advertisement

যে সময়ে তছরুপ হয় বলে অভিযোগ, তখন পুরপ্রধান ছিলেন তৃণমূলেরই সমীর দত্ত। সিপিএমের অভিযোগ, ঘটনায় সমীরবাবুও জড়িত। কিন্তু তাঁকে আড়াল করা হচ্ছে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের চিত্তরঞ্জন বিশ্বাসের প্রশ্ন, ‘‘কেন সরকারি ব্যাঙ্কে টাকা না-রেখে বেসরকারি ব্যাঙ্কে টাকা রাখা হয়েছিল? কেন সমীরবাবু ওই সময় বিষয়টি ধরতে পারেননি? অডিটে কেন তছরুপ ধরা পড়েনি? সমীরবাবু পুলিশেই বা ডায়েরি করেননি কেন?’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য কাউকে আড়াল করা হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন। সমীরবাবুর দাবি, ‘‘ওই সময় আমার সই জাল করা হয়েছিল বলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছিলেন।’’ কিন্তু তার পরেও তিনি কেন কোনও পদক্ষেপ করেননি, এই প্রশ্নে সমীরবাবু জানান, অডিটে যখন গরমিল ধরা পড়ে তখন তিনি আর চেয়ারম্যান ছিলেন না।

ধৃতদের বুধবার বারাসত আদালতে হাজির করানো হয়ে। বিচারক তাঁদের চার দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ধৃতদের জেরা করে আর কারা ঘটনায় জড়িত, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’

ওই ব্যাঙ্কে পুরসভার দু’টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। প্রবোধবাবু চেয়ারম্যান হওয়ার পরে টাকা তছরুপের বিষয়টি সামনে আসে। থানায় অভিযোগ জানানোর আগে-পরে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য ২৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পুরসভাকে ফেরত দেন বলে প্রবোধবাবু জানান।

তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা জানিয়েছেন, চারটি চেকে ২ কোটি টাকা ওই দুই ব্যবসায়ীর দুই সংস্থাকে দেওয়া হয়েছিল ব্যাঙ্কের তরফে। বাকি টাকা পুরসভার অ্যাকাউন্টে জমাই পড়েনি।

ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানান, ওই চারটি চেক তৎকালীন পুরপ্রধান সমীর দত্ত এবং পুরসভার নির্বাহী আধিকারিকের (ইও) সই ছিল। সই আসল কিনা, তা পরীক্ষার জন্য সিআইডি-র কাছে পাঠানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন