ঘাড়ে পড়ল দেড় টনের লোহার শাটার

থেঁতলে মৃত শ্রমিক

শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে নামখানায়। হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর উপরে সেতু তৈরি হচ্ছে প্রায় আড়াই বছর ধরে। মাস ছ’য়েকের মধ্যে প্রাণ গেল দু’জনের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নামখানা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৭ ০১:৩৬
Share:

নির্মীয়মাণ: এই ক্রেনের তার ছিঁড়েই বিপত্তি। ছবি: শান্তশ্রী মজুমদার

আচমকাই ছিঁড়ে পড়ল ক্রেনের তার। ঘাড়ে পড়ল লোহার শাটার। থেঁতলে মারা গিয়েছেন এক শ্রমিক।

Advertisement

শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে নামখানায়। হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর উপরে সেতু তৈরি হচ্ছে প্রায় আড়াই বছর ধরে। মাস ছ’য়েকের মধ্যে প্রাণ গেল দু’জনের। বার বারই অভিযোগ উঠছে, শ্রমিকদের ন্যূনতম সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই এখানে।

এ দিন বিক্ষোভ দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন স্থানীয় মানুষজন। সুপারভাইজারকে ধাক্কাধাক্কি করা হয়। সংশ্লিষ্ট নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাদের শো-কজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পূর্ত দফতর। মৃত শ্রমিকের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে বলে আশ্বাস দেওয়া দিয়েছেন দফতরের কর্তারা।

Advertisement

পুলিশ জানায়, মৃত শ্রমিকের নাম সুশান্ত মালি (৪২)। তাঁর দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি আহত মহম্মদ আলি। দু’জনেই নদিয়ার হাঁসখালির বাসিন্দা। সুশান্ত হেলমেট পরে কাজ করছিলেন। অন্যজনের মাথায় হেলমেট ছিল না।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনা ঘটে এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ। নদীর ধারে সেতুর প্রধান দু’টির মধ্যে নামখানার দিকের থামটিতে এ দিন ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। ক্রেনের মাধ্যমে তোলা হচ্ছিল সেন্টারিংয়ের লোহার শাটার। নীচে দাঁড়িয়ে দেখভাল করছিলেন সুশান্ত ও মহম্মদ। আচমকা, প্রায় ৩০ ফুট উঁচু থেকে ক্রেনের তার ছিঁড়ে প্রায় দেড় টন ওজনের লোহার শাটার এসে পড়ে তাঁদের উপরে। ঘটনাস্থলেই মারা যান সুশান্ত।

ঘটনার পরে উত্তেজনা ছড়ায়। এলাকাবাসী ক্ষোভ উগরে দেন নির্মাণ সংস্থার উপরে। তাঁদের দাবি, সেতুর নীচের দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। প্রায় আধ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কাজ চলছে। তার মধ্যে দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে হাঁটাচলা করতে হচ্ছে। পলাশ মণ্ডল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘নদীর উল্টো পাড়ে নারায়ণপুরে যদি সার্ভিস রোড থাকতে পারে, নামখানায় কেন থাকবে না? বিধি মেনে কাজ হচ্ছে না। আজ শ্রমিকের ঘাড়ে লোহা এসে পড়েছে, কাল সাধারণ মানুষের উপরেও পড়তে পারে।’’

ঘটনাস্থল: এখানেই চাপা পড়ে মারা যান সুশান্ত। —নিজস্ব চিত্র

প্রকল্পের শ্রমিকদের সঙ্গেও কথা বলে জানা গেল, নিরাপত্তার দিকটি বেশ ঢিলেঢালা। হেলমেট দেওয়া হলেও তা অনেক শ্রমিক পরেন না। কিন্তু তা নজর করার মতো কেউ নেই। আর এক শ্রমিক জাকির মোল্লা বলেন, ‘‘সেফটি বেল্ট এবং সেফটি জুতো নেই শ্রমিকদের।’’ প্রায় দু’শো শ্রমিক কাজ করছেন এই প্রকল্পে। জাকিরের কথায়, ‘‘যে ভাবে বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে, তাতে সকলেই ভয়ে ভয়ে আছি।’’ এর আগেও সেতু থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে একজনের।

নিরাপত্তার দিকটি নড়বড়ে কেন?

পূর্ত (জাতীয় সড়ক) দফতরের ১ নম্বর ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অজয় কুণ্ডু মন্তব্য করতে চাননি। তবে দফতর সূত্রের খবর, সাধারণ মানুষকে যাতে নির্মীয়মাণ সেতুর তলা দিয়ে যাতায়াত করতে না হয়, সে জন্য নামখানাতেও সার্ভিস রোড তৈরির কথা ছিল। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নদী থেকে বালি তোলার বারণ থাকায় বিশেষ অনুমতি পেতে দেরি হচ্ছে। দফতরের বাস্তুকারেরা জানান, এ বার থেকে দিল্লির সংশ্লিষ্ট নির্মাতা সংস্থাটি যাতে সমস্ত রকম নিরাপত্তা-বিধি মেনে চলে, সে জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে।

সেতুর গোড়ায় ফাটল নিয়ে এলাকার লোকজন যে অভিযোগ তুলছেন, সে প্রসঙ্গে পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, বাইরের কাঠামোয় ফাটল থাকতে পারে। তাতে কোনও সমস্যা হয় না। প্রয়োজনে বাইরের অংশ ভেঙেও ফেলা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন