নিজের সামান্য পুঁজি নিয়েই বন্ধু স্যর

সাড়ে তিন ফুট উচ্চতা। পিঠে কুঁজ। ৬০ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধী ওবাইদুল্লা সিদ্দিকিকে ছোট থেকেই চেহারা নিয়ে বিস্তর বিদ্রুপ শুনতে হয়েছে।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৮ ০৩:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

অভাবের মধ্যেই বেড়ে উঠেছেন। তাই অন্যের দারিদ্রের জ্বালাও বোঝেন। নিজের রোজগারের ঠিক নেই। তবু তা থেকেই টাকা বাঁচিয়ে পড়ুয়াদের পাশে থাকেন তিনি— ওবাইদুল্লা স্যার।

Advertisement

সাড়ে তিন ফুট উচ্চতা। পিঠে কুঁজ। ৬০ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধী ওবাইদুল্লা সিদ্দিকিকে ছোট থেকেই চেহারা নিয়ে বিস্তর বিদ্রুপ শুনতে হয়েছে। স্নাতক পাশ করে শিক্ষকতার চাকরিতে বসেছেন তিন বার। ফল বেরোয়নি। তবু দমে যাননি। বারাসত, দেগঙ্গা থানার সামনে বসে বাংলা ও ইংরেজিতে অভিযোগপত্র লিখে সামান্য আয়, পাশাপাশি ছাত্রছাত্রী পড়ান। দুঃস্থদের পড়ান বিনামূল্যে। সামান্য আয় থেকে জমানো আট হাজার টাকা দিয়ে সম্প্রতি দুঃস্থ পড়ুয়াদের বইখাতা কিনে দিলেন তাঁদের প্রিয় স্যর।

দেগঙ্গার সাতহাতিয়ার কৃষক বক্কর সিদ্দিকির চার ছেলের দ্বিতীয়, বছর তিরিশের ওবাইদুল্লা। পরিবারে এক মাত্র তাঁরই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। বাবা বক্কর সিদ্দিকি বলেন, ‘‘সবাই ওকে নিয়ে ঠাট্টা করত। তবুও ছোট থেকেই স্কুলে যেতে, পড়তে ভালবাসত ছেলেটা।’’ স্থানীয় সাতহাতিয়া হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন ওবাইদুল্লা। বারাসত প্যারীচরণ সরকার রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন। ইচ্ছে ছিল শিক্ষকতার। ২০০৯, ’১২ এবং ’১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষাতেও বসেন, কিন্তু একটিরও ফলপ্রকাশ হয়নি। এখন পুলিশের উদ্যোগে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তিনি।

Advertisement

আগের থেকে বদলেছে পরিবেশ। ওবাইদুল্লাকে এখন কেউ কটূক্তি করলে তেড়ে যায় ছাত্রছাত্রীরা। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী জয়ন্তী বিশ্বাস বলে, ‘‘কোনও মানুষকে নিয়ে যেন ঠাট্টা না করি, স্যর শিখিয়েছেন।’’ ছাত্রছাত্রীরা জানাচ্ছে, নানা বিষয় জানুক ছোটরা, সেটাই চান স্যর। তাই পড়ার বই ছাড়া অন্যান্য বইও তুলে দেন পড়ুয়াদের হাতে। নবম শ্রেণির কুলসুম খাতুন বলে, ‘‘যাতে ইংরেজি ভাল করে বলতে পারি, স্যর তাই বইমেলা থেকে বই কিনে দিয়েছেন।’’

শান্ত ওবাইদুল্লা বলছেন, ‘‘শরীরের গড়নে তো আমার হাত ছিল না। কিন্তু নিজে পড়াশোনা করা বা অন্যকে পড়তে সাহায্য করাটা আমার হাতে। বই প্রকৃত বন্ধু। ছোটদের সেই বইয়ের নেশাটাই ধরিয়ে দিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন