হাবরায় তরুণের মৃত্যুতে ধৃত ছাত্রী

প্ররোচনার নালিশ কেন, উঠছে প্রশ্ন

এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে হাবরা থানার পুলিশের অতি সক্রিয়তা নিয়ে। সম্পর্কে জড়ানো যদি গণতান্ত্রিক অধিকার হয়, তা হলে সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে আসার অধিকার থাকবে না কেন, উঠছে সেই প্রশ্নও। সাম্প্রতিক সময়ে ‘পিঙ্ক’ ছবিও এই বার্তা রেখে গিয়েছে। সম্পর্কে মেয়েদের ‘না’ বলার অধিকারের কথা বলেছে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

হাবরা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৬
Share:

সুজয় মণ্ডল।

প্রেমিকার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে বলতে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়েছিল প্রেমিক। প্রেমের সম্পর্কে চিড় ধরায় এই পরিণতি, অভিযোগ করে ছেলেটির পরিবার। দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের হয় হাবরা থানায়। তাকে পর দিন গ্রেফতার করে পুলিশ। সে আপাতত রয়েছে লিলুয়া হোমে।

Advertisement

এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে হাবরা থানার পুলিশের অতি সক্রিয়তা নিয়ে। সম্পর্কে জড়ানো যদি গণতান্ত্রিক অধিকার হয়, তা হলে সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে আসার অধিকার থাকবে না কেন, উঠছে সেই প্রশ্নও। সাম্প্রতিক সময়ে ‘পিঙ্ক’ ছবিও এই বার্তা রেখে গিয়েছে। সম্পর্কে মেয়েদের ‘না’ বলার অধিকারের কথা বলেছে। এ ক্ষেত্রেও মেয়েটি পুরনো সম্পর্কে ‘না’ বলে যদি নতুন সম্পর্কে জড়ায়, তা হলে তাকে আইনের চোখে অপরাধী বলা হবে কিনা, সেই আলোচনা উঠে আসছে এই প্রসঙ্গেই।

এ ব্যাপারে কী বলছে আইন-আদালত? ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি’র রাজ্য সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী জানান, ২০১৬ সালে মুম্বই হাইকোর্ট এক রায়ে জানায়, কেউ কোনও সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে, অন্যপক্ষ যদি আত্মহত্যা করে, তা হলে সেটি আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা হিসাবে গণ্য হতে পারে না। এমন ক্ষেত্রে সুইসাইড নোট থাকলেও তা আত্মহত্যায় প্ররোচনা হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তা ছাড়া, এ সব ক্ষেত্রে অভিযোগ হলেই দ্রুত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করাটাও বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু হাবরার ঘটনায় পুলিশের আচরণে সে সবের তোয়াক্কা করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠছে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে নিজের বাড়িতেই আত্মঘাতী হয় হাবরার হাড়িয়া পদ্মাপল্লির বছর উনিশের যুবক সুজয় মণ্ডল। বাণীপুর বাণী নিকেতন স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ত সে। ঘটনার পরে মৃতের দাদা বিশ্বজিৎ থানায় ভাইয়ের প্রেমিকার নামে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ৩০৬ ধারায় মামলা রুজু করে এবং পর দিন সকালে মেয়েটিকে গ্রেফতার করে।

কেন ৩০৬ ধারা (আত্মহত্যায় প্ররোচনা) ধারায় মামলা রুজু হল? পুলিশের বক্তব্য, কোন মামলায় পুলিশ কোন ধারা দেবে বা দেবে না, তা পুলিশের ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে না। অভিযোগকারীর বয়ানের ভিত্তিতেই মামলায় ধারা বসানো হয়। এ ক্ষেত্রে পুলিশের দাবি, তদন্তে দেখা গিয়েছিল, ছেলেটি মৃত্যুর আগে কানে হেডফোন গুঁজে সুজয়ের সঙ্গে কথা বলছিল। সুজয়ের পরিবার জানিয়েছে, মেয়েটি তাকে বলত, তুমি আমার জীবন থেকে সরে যাও। না হলে আমি সুইসাইড করব। এ সব বলার ফলে কিছু দিন হল ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিল সুজয়। খাওয়া-দাওয়া এক রকম ছেড়েই দিয়েছিল।

এই সব তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ মেয়েটির বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা রুজু করেছে বলে থানা সূত্রের খবর। তবে তদন্ত শেষ হলে চার্জশিট থেকে এই ধারা বাদ যেতেই পারে বলে জানান এক পুলিশ কর্তা। যা শুনে এক আইনজীবী বলেন, ‘‘কবে চার্জশিট জমা পড়বে, কবে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি মিলবে— সে সব তো পরের প্রশ্ন। কিন্তু পুলিশের অতি সক্রিয়তায় মেয়েটির পড়াশোনা, ভবিষ্যত— সবই যে অনিশ্চিত হয়ে গেল, তার দায় নেবে কে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন