বাবার চোখ দান করলেন রমজান

বসিরহাটের ছোট জিরাকপুরের বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের সামাদ আলি গাজির মৃত্যুর পরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ছেলে রমজান গাজি। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা বেঁচে থাকবেন অন্যের চোখে।’’

Advertisement

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০০
Share:

নজির: রমজান গাজি

সংস্কারের বেড়া ভেঙে এগিয়ে আসছেন সংখ্যালঘুরাও। বাবার মৃত্যুর পরে তাঁর চোখদানের সিদ্ধান্ত নিলেন একমাত্র ছেলে।

Advertisement

বসিরহাটের ছোট জিরাকপুরের বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের সামাদ আলি গাজির মৃত্যুর পরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ছেলে রমজান গাজি। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা বেঁচে থাকবেন অন্যের চোখে। তাঁর চোখ দিয়েই ফের পৃথিবীর আলো দেখতে পাবেন দু’জন মানুষ।’’

সামাদের চোখ দু’টি সংগ্রহ করে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে বসিরহাটের একটি চক্ষু সংগ্রহ কেন্দ্র। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জানিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনায় দীর্ঘ দিন ধরে মরণোত্তর চক্ষুদানের সঙ্গে যুক্ত তাঁরা। কিন্তু সংখ্যালঘু পরিবারের এ ধরনের কর্মসূচিতে যোগদানের উদাহরণ খুব বেশি চোখে পড়ে না।

Advertisement

সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সামাদ। তাঁকে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার সকালে মারা যান। দর্জির কাজ করতেন তিনি। অন্যের বিপদে আপদে বরাবর ছুটে যেতেন বলে জানালেন পাড়া-পড়শিরা। তাঁর একমাত্র ছেলে রমজান উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ইলেকট্রনিক্সের কাজ শিখছেন। বসিরহাট থানার সামনে একটি দোকানে কাজ করেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রাক্তন সম্পাদক সত্যজিৎ নাথের অনুপ্রেরণায় বিভিন্ন সময়ে চোখ সংগ্রহ অভিযানে সামিল হয়েছেন এই তরুণ।

রমজানের কথায়, ‘‘বাবা ভালবাসতেন মানুষকে। অভাবের সংসারে নিজে কষ্টে থাকলেও কারও বিপদে কখনও ঘরে বসে থাকতেন না। জাতিধর্ম ভুলে বরাবর ওঁকে মানুষের পাশে থাকতে দেখেছি।’’ রমজান জানান, মৃত্যু আগে চোখ দানের ইচ্ছাও প্রকাশ করেছিলেন বাবা। মা মর্জিনা বিবি এবং অন্য আত্মীয়েরাও এই কাজে তাঁর পাশে ছিলেন বলে জানালেন রমজান।

উদ্যোগের কথা শুনে উচ্ছ্বসিত বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিশ আলি। তিনি বলেন, ‘‘পরিবারটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। এই পথ অনুসরণ করলে আরও অনেক অন্ধ মানুষ দৃষ্টি ফিরে পাবেন।’’

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষে সত্যজিৎ নাথ, মদন সাহারা বলেন, ‘‘গত তেইশ বছরে এখনও পর্যন্ত ৭৩৪ জোড়া চোখ সংগ্রহ করা হয়েছে। রমজান তাঁর বাবার চোখ দান করে নতুন পথ দিশা দেখালেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement