চলছে পারাপার। শ্যামনগর ঘাটে ছবিটি তুলেছেন সজল চট্টোপাধ্যায়।
নিরাপত্তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে গঙ্গার ফেরি ঘাটগুলোতে।
২০১২ সালে কমিশনারেট গঠনের পর ব্যারাকপুরে পুলিশি নজরদারি বাড়াতে থানা ছাড়াও গোয়েন্দা বিভাগ ও স্পেশাল ব্রাঞ্চকে সাজানো হয়েছে। কিন্তু অপরাধ কমেনি। পুলিশের চিরুনি তল্লাশিতে বীজপুর থেকে দমদম পর্যন্ত স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সমস্ত তথ্য ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে ক্রাইম রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। যে সব দুষ্কৃতীরা অপরাধ করে এলাকায় গা ঢাকা দিয়েছে তারা ধরা পড়ে ঠিকই। কিন্তু অন্য জেলা থেকে এসেও দুষ্কৃতীরা এই এলাকায় অপরাধ করে সহজেই পালাতে পারে। শুধু মাত্র এই ফেরিঘাটগুলির জন্যই তা সম্ভব হয়। সম্প্রতি প্রশাসনিক বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে।
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘কোনও অপরাধের খবর পাওয়ার পর রাস্তায় যে ভাবে তল্লাশি বা নাকা করা হয় তাতে সড়ক পথ পুলিশের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু নদীতে আমাদের কিছু করার থাকে না। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল গোটাটাই গঙ্গার ধার বরাবর। অসংখ্য ঘাট। খুব কম সময়ে কমিশনারেটের নাগালের বাইরে চলে যাওয়া যায়।’’
ক্রাইম রিপোর্টই বলছে, বড় অপরাধগুলোর অনেকাংশের ক্ষেত্রেই পালানোর মাধ্যম ছিল ফেরি ঘাট। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় দুষ্কৃতীদের গতিবিধিতে নজর রাখতে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগেই খড়দহের ফেরিঘাটগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। এরপর অন্য ফেরি ঘাটগুলোতেও নজরদারি ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা করা হয়। ইতিমধ্যে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে কমিশনারেটের তরফ থেকে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। এরপরই ঘাটগুলোতেও সিসি ক্যামেরা বসিয়ে সংশ্লিষ্ট থানাকে নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে।
ব্যারাকপুরের ১৯টি ফেরি ঘাটের যাত্রীদের অনেকেরই অভিযোগ, সড়ক বা রেল পরিষেবায় পরিবহণ দফতরের যে নিয়ম কানুন মানা হয় তার ন্যূনতম মানা হয় না জলপথ পরিবহণের ক্ষেত্রে। গরু-ছাগলের মতো যাত্রী বোঝাই করে ছাড়া হয় ভুটভুটি। কোথাও আবার জেটি বলতে একটি ভাঙা নৌকো। বর্ষায় নিত্যদিন পা পিছলে দুর্ঘটনা ঘটে। ঘাটগুলোর আশপাশে চলে গাঁজা ও মদের ঠেক। সকাল সন্ধ্যা অনেক জায়গায় জুয়ার বোর্ডও বসে। ফেরিঘাটগুলোর অবস্থা নিয়ে দিন কয়েক আগেই ব্যারাকপুরে একটি প্রশাসনিক বৈঠকে উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘পরিবহণ আইন মেনেই ফেরিঘাটগুলোকে চালাতে হবে। নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে নজর রাখতে হবে। পুরসভাগুলিকে বলা হয়েছে নিজেদের এলাকার ঘাটের সৌন্দর্যায়ন ও সংস্কার করতে।’’
এই সৌন্দর্যায়ন ও সংস্কারের জন্য পুরসভা একটি সরকারি অনুদানও পাবে। অধিকাংশ ঘাটে যাওয়ার পথ ঘিঞ্জি এলাকার মধ্যে দিয়ে এবং চলাচলের জন্য অপ্রশস্ত। বিটি রোড বা ঘোষপাড়া রোডের মতো প্রধান সড়কগুলো থেকে এই ঘাটগুলোতে যাওয়ার রাস্তা যাতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে পুরসভাগুলিকে।