দু’টি খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত বাপুজির প্রাক্তন তৃণমূল নেতা বিশ্বনাথ পাত্রকে সোমবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার তাকে আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করে আদালত।
এলাকার ‘ত্রাস’ বিশ্বনাথের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে নরোত্তম মণ্ডল নামে এক সিপিএম সমর্থককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে নরেশ হালদার নামে আরও এক তৃণমূল সমর্থককে ১৩ নম্বর চণ্ডীপুর বাজারে তুলে নিয়ে গিয়ে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নরেশের মা রেবতী এবং বাবা ভানুপদ বলেন, ‘‘বিশ্বনাথের চরম শাস্তি চাই।’’ নরোত্তমের স্ত্রী প্রমিলা বলেন, ‘‘বিশ্বনাথ আগের বার ছাড়া পেয়ে গিয়েছিল। এ বার ছাড়া পেলে আমাদের মতো অনেককে এলাকাছাড়া হতে হবে।’’ এলাকায় তোলাবাজি, ভয় দেখানো, মারধর ছাড়াও বহু অভিযোগ আছে বিশ্বনাথের বিরুদ্ধে। বহু মহিলার সঙ্গে প্রায় জোর করে সম্পর্কও তৈরি করত সে। কিন্তু বিশ্বনাথের ভয়ে সে সব খবর বেশিরভাগই থানা পর্যন্ত পৌঁছতই না বলে স্থানীয় মানুষের দাবি। পুলিশ কর্মীদেরও মারধরের অভিযোগও উঠেছিল বিশ্বনাথের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার কাকদ্বীপের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অতনু মণ্ডলের এজলাসে তোলা হয়েছিল ধৃতকে। সরকারি আইনজীবী গুরুপদ দাস তার জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি পরে বলেন, ‘‘বিশ্বনাথ নিয়মিত ভাবে অপরাধ করে আসছে। এ রকম একজন ছাড়া পেলে এলাকায় অশান্তি ছড়াবে বলে আশঙ্কা করছি আমরা।’’ বিশ্বনাথ বা তার পরিবার কিছু বলতে চায়নি।
২০০৮ সালে সিপিআই থেকে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে পরে তৃণমূলে আসে বিশ্বনাথ। তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরার হাত ধরে ক্রমাগত উত্থান হতে থাকে তার। ২০১৩ সালে কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যও হয় বিশ্বনাথ। সঙ্গে ছিল বাপুজির যুব তৃণমূল সভাপতির পদও। এলাকায় তার বিরুদ্ধে মুখ খুললে পার্টি অফিসে তুলে এনে মারধর করত বলে অভিযোগ।
গত বছর পিটিয়ে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিল বিশ্বনাথ। তখন থেকেই তার সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতাদের সুর কেটে যায়। গ্রেফতার হওয়ার পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে এলাকায় ফের তোলাবাজি, মারধর শুরু করেছিল। দল থেকে তাকে সরিয়ে মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা সাবধান করেন। কিন্তু তার পরেও রাশ টানা যায়নি বেপরোয়া বিশ্বনাথের উপরে। নরেশ এবং তাঁর পরিবার সিপিএম থেকে তৃণমূলে এসেছিল। দলের পদ খুইয়ে বিশ্বনাথ ত্রাস বজায় রাখতেই হামলা চালায় বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি।
অভিযোগ, নিজের বাড়ির দোতলায় টেনে নিয়ে গিয়ে বঁটির কোপে নরেশকে খুন করে বিশ্বনাথ। পরে অঞ্চল অফিসের পাশে দেহ ফেলে রাখে। হুমকি দেয়, যে নরেশকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে, তাকেও খুন করা হবে।
মন্টুরাম বলেন, ‘‘আমি খুনের রাজনীতি করি না। দলের কোনও নেতা খুনি, সমাজবিরোধী হয়ে গেলে দল তাকে বহিষ্কারই করবে।’’