Women Trafficking

ঝিলিক, দামিনীদের জীবনযুদ্ধকে কুর্নিশ জানাতে সংবর্ধনা

এই সাত মহিলার মধ্যে রয়েছেন হাসনাবাদের পাটলি খাঁপুর পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা ঝিলিক (নাম পরিবর্তিত)। তাঁর যখন ১৩ বছর বয়স, তখনই বিয়ে হয়ে যায়। তবে সেই বিয়ে ছিল পাচারের অছিলা।

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ 

হাসনাবাদ শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৩ ০৬:২৫
Share:

নারীপাচার চক্রের ফাঁদে পড়ে তাঁদের জীবন বয়ে চলেছিল যন্ত্রণাময় এক খাতে। প্রতীকী ছবি।

নারীপাচার চক্রের ফাঁদে পড়ে তাঁদের জীবন বয়ে চলেছিল যন্ত্রণাময় এক খাতে। নানা বাধা পেরিয়ে, অনেকের বাঁকা মন্তব্য-চাউনি সয়ে তাঁরা আবার ফিরেছেন জীবনের মূলস্রোতে। দাঁড়িয়েছেন নিজের পায়ে। নারীদিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে বিভিন্ন সময়ে নারীপাচার থেকে উদ্ধার হওয়া এমন ৭ মহিলার স্বনির্ভর হওয়ার প্রয়াসকে উৎসাহ দিতে সংবর্ধনা দিল হাসনাবাদ ব্লক প্রশাসন। দিন কয়েক আগে হাসনাবাদ ব্লক অফিসের কমিউনিটি হলে ওই অনুষ্ঠান হয়।

Advertisement

এই সাত মহিলার মধ্যে রয়েছেন হাসনাবাদের পাটলি খাঁপুর পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা ঝিলিক (নাম পরিবর্তিত)। তাঁর যখন ১৩ বছর বয়স, তখনই বিয়ে হয়ে যায়। তবে সেই বিয়ে ছিল পাচারের অছিলা। বিয়ের পরেই তাঁকে মুম্বইয়ে নিয়ে গিয়ে যৌনপল্লিতে ঢুকিয়ে দেয় সেই ‘স্বামী’। প্রায় ছ’মাস মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করার পরে অবশেষে বাড়ি ফিরতে পারেন ঝিলিক। কিন্তু দশ বছর লেগে যায়, সেই মানসিক যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠতে, সমাজের বাঁকা নজর থেকে বাঁচতে।

পরে ভালবেসে বিয়ে করেন ঝিলিক। সন্তানও হয়। কিন্তু ঝিলিক বিয়ের পরে জানতে পারেন, তাঁর স্বামীর স্ত্রী-সন্তান আছে। এখন ঝিলিক বাপের বাড়িতেই থাকেন। এক বছর আগে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য বিড়ির ব্যবসা শুরু করেছেন। ২০ হাজার টাকা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেন তিনি। এখন মাসে ৭-৮ হাজার টাকা উপার্জন করছেন। কিছু দিনের মধ্যে ব্যবসা আরও বড় হবে বলে বিশ্বাস ঝিলিকের।

Advertisement

কয়েক মাস হল টিভি দেখে বিশেষ ধরনের কলম তৈরি করতেও শিখেছেন তিনি। রঙিন কাগজ, বিশেষ ধরনের শিস ও বিভিন্ন বীজ দিয়ে তৈরি হচ্ছে কলম। ঝিলিক জানান, পেয়ারা, পেঁপে, পুঁইশাক-সহ বিভিন্ন গাছের বীজ পেনের মধ্যে রেখে দিচ্ছেন। এই পেন পরিবেশবান্ধব। কেউ একবার ব্যবহার করে ফেলে দিলে বেশিরভাগ অংশ মাটিতে মিশে যাবে এবং গাছও জন্ম নেবে বীজ থেকে। পেনের দাম ৫ টাকা। তাঁর কথায়, “এক একটা পেন বিক্রি করে প্রায় আড়াই টাকা লাভ থাকে। স্কুল ও বিভিন্ন দোকানে প্রত্যেক সপ্তাহে হাতে তৈরি করে দিয়ে আসি। পড়ুয়াদের কাছে এই পেন বেশ আকর্ষণীয়। ভাল বিক্রি হচ্ছে।”

আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর ঝিলিক জানাচ্ছেন, তাঁকে এ ভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইল্ড লাইনের হাসনাবাদ সাবসেন্টার ‘কেয়া’র তরফে সাকিলা খাতুন খুবই সাহায্য করেছেন।

ঝিলিকের মতো হাসনাবাদ থানা এলাকার বাসিন্দা দামিনীও (নাম পরিবর্তিত) ফিরে এসেছেন মূলস্রোতে। তাঁর বিয়ে হয় মাত্র ৯ বছর বয়সে। সেই বিয়ে ভেঙেও যায়। এরপরে কাজের টোপ দিয়ে পরিচিত এক ব্যক্তি তাঁকে নিয়ে যায় মুম্বইয়ের যৌনপল্লিতে। সেখানে তিন বছর ভয়ঙ্কর জীবন কাটে। অবশেষে সেখানে যাতায়াত করা এক ব্যক্তির সাহায্যেই বাইরে আসতে পারেন তিনি। এরপরে সংসার পাতেন নতুন করে।

গত কয়েক বছর ধরে দামিনী সরকারি সাহায্যে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন। তাঁর কথায়, “কয়েক মাস হল মুরগির ফার্ম করেছি। একটু একটু করে যন্ত্রণার দিনগুলো ভুলে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছি। সরকারি-বেসরকারি সাহায্যও পাচ্ছি।”

ঝিলিক, দামিনীর মতো হাসনাবাদ ব্লকের পাচার থেকে উদ্ধার হওয়া এমন সাত জন মহিলার এগিয়ে চলাকে কুর্নিশ জানাতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ‘কেয়া’ ও হাসনাবাদ ব্লক প্রশাসন। ওই মহিলাদের আনাজ চাষ ও ফুল চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে কয়েক দিন আগে। সরকারি উদ্যোগে সেই প্রশিক্ষণের শংসাপত্রও তুলে দেওয়া হয় সকলের হাতে। অনুষ্ঠানে ছিলেন হাসনাবাদের বিডিও মোস্তাক আহমেদ, যুগ্ম বিডিও ফয়জল শেখ, হাসনাবাদ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ইস্কেন্দার গাজি ও ‘কেয়া’র তরফে সাকিলা খাতুন। যুগ্ম বিডিও বলেন, “এই মহিলাদের সংগ্রামকে, এগিয়ে চলাকে উৎসাহ দিতেই এই উদ্যোগ।” সাকিলার কথায়, “এই মেয়েদের পাশে আমরা আছি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সংগঠনও নানা ভাবে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন