ভয় ভেঙে পাঁচ বছর পর বাম মিছিল খেজুরিতে

জানলাটা একটু ফাঁক করে রাস্তার ধারে অনেকক্ষণ ধরে বসে ছিলেন বছর পঞ্চাশের এক মহিলা। গলার স্বর নামিয়ে বলেন, ‘‘পাঁচ বছর কম কথা! এত দিন পর লাল ঝান্ডার এত বড় মিছিল, সেটা দেখব না!’’ তবে আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

খেজুরি শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৫৯
Share:

জানলাটা একটু ফাঁক করে রাস্তার ধারে অনেকক্ষণ ধরে বসে ছিলেন বছর পঞ্চাশের এক মহিলা। গলার স্বর নামিয়ে বলেন, ‘‘পাঁচ বছর কম কথা! এত দিন পর লাল ঝান্ডার এত বড় মিছিল, সেটা দেখব না!’’ তবে আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই লাল পতাকার মিছিলে ঢেকে গেল এলাকা। মিছিলে নেতৃত্ব দিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু।

Advertisement

বুধবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ খেজুরির বারাতলা বাজার থেকে শুরু হয় মিছিল। বিমানবাবু অবশ্য এসে গিয়েছিলেন সোয়া এগারোটা নাগাদই। একটা ম্যাটাডোরে উঠে পাশে টেনে দাঁড় করিয়ে নেন খেজুরি বিধানসভা কেন্দ্রের জোট সমর্থিত নির্দল প্রার্থী অসীম মণ্ডলকে। প্রায় হাজার খানেক কর্মী-সমর্থক হাজির ছিলেন বারাতলা বাজারে বাম কার্যালয়ের সামনে। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই যুবক। চড়া রোদে মিছিল যত এগিয়েছে কর্মী-সমর্থকদের ভিড় তত বেড়েছে।

প্রথমে খেজুরির বুকে লাল পতাকার মিছিল এগোতে দেখে কিছুটা থম মেরে গিয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। কেউ বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে হাত নেড়েছেন, কেউ বা অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলেন আবার অনেকে আধ খোলা জানলার পাশ দিয়ে দেখেছেন এগিয়ে যাওয়া মিছিলটাকে। মিছিলের ছবি ফোনবন্দি করতে করতে ঊনিশ বছরের এক যুবক বলে, ‘‘বাবার কাছে বাম সরকারের কথা শুনেছি। গত পাঁচ বছরে তো তেমন কাউকে এলাকায় দেখিনি। এই প্রথম এত বড় বাম মিছিল দেখলাম। তাই আর কি!’’

Advertisement

শুধু পাঁচ বছর নয়। খেজুরিতে বামেদের অবস্থা বদলাতে শুরু করেছিল তার বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই। ২০০৭ সালে এই খেজুরি থেকেই তৎকালীন শাসকদল সিপিএম নন্দীগ্রামের উপর আক্রমণ চালিয়ে ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। জমি আন্দোলনের পর ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুরে ধীরে ধীরে ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কাঁথি ও তমলুক আসনও বামেদের থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। এরপরই খেজুরিতে পালাবদলের শুরু। এই সময়েই খেজুরির বিভিন্ন বাম কার্যালয় থেকে অস্ত্র উদ্ধারের অভিযোগ তোলে তৃণমূল। তাদের অভিযোগ ছিল, নামে বামেদের কার্যালয় হলেও আসলে ওগুলো অস্ত্র রাখার গুদাম। এরপর তৃণমূলের নেতৃত্বে খেজুরির অধিকাংশ কার্যালয়ে হামলা চলতে থাকে। বন্ধ হতে থাকে কার্যালয়গুলো। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় খেজুরির হেড়িয়াতে সভা করতে এসেছিলেন রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের পর্বের পর পাশের এলাকা খেজুরিতে সেই ছিল বামেদের বড় কর্মসূচি। তারপর দীর্ঘ পাঁচবছর ধরে খেজুরিতে কোন মিছিল করতে পারেনি সিপিএম।

ছবিটা একটু একটু করে বদলাতে শুরু করেছে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোট করেছে বাম-কংগ্রেস। পাল্টা প্রতিরোধের ডাক দিয়ে বন্ধ থাকা বাম কার্যালয়গুলোও খুলছে। গত ২৫ মার্চ বাম নেতা হিমাংশু দাসের নেতৃত্বেই খুলেছে খেজুরির কার্যালয়। সপ্তাহ খানেক আগে খুলেছে জনকার বাম কার্যালয়ও। মিছিল শেষে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘নতুন খেজুরি দেখলাম। এই খেজুরি যেন চুপচাপ হয়ে আছে। অগ্ন্যুৎপাতের আগের মতো পরিবেশ। ’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন