বুনিয়াদপুরের সভায় রেসকার সঙ্গে। ফাইল চিত্র
হেলিকপ্টার থেকে নেমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন মঞ্চে উঠবেন। ঠিক সেই সময়ে তাঁর চোখে পড়ে, মঞ্চের একপাশে জীর্ণ হারমোনিয়াম গলায় ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কুশমণ্ডির চণ্ডীপুরের বাসিন্দা রেসকা হেমব্রম। হারমোনিয়াম দেখে সেটি বাজানোর লোভ সংবরণ করতে পারেননি তিনি। নিজে থেকেই এগিয়ে গিয়ে রেসকার গলায় ঝোলানো হারমোনিয়ামের রিডে আঙুল ছোঁয়ান মুখ্যমন্ত্রী। কিছুটা বাজিয়েই হারমোনিয়ামের জীর্ণ দশা দেখে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘এত পুরনো হারমোনিয়াম। তোমার বাজাতে নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হয়।’’
জেলাশাসক সেই রেসকার হাতে তুলে দেন নতুন হারমোনিয়াম। শুধু রেসকাই নয়, সে দিন রেসকার সঙ্গে থাকা ওই গ্রামের আর এক শিল্পী মনসা টুডুকেও নতুন হারমোনিয়াম দিয়েছে প্রশাসন। নতুন হারমোনিয়াম পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই ভীষণ খুশি রেসকা ও মনসা। রেসকার কথায়, ‘‘সে দিন মুখ্যমন্ত্রী এগিয়ে এসে যে আমার ভাঙা হারমোনিয়াম বাজাবেন ভাবতেই পারিনি। খুব লজ্জা লাগছিল। আমি খুবই ভাগ্যবান যে তিনি আমার হারমোনিয়ামে হাত রেখেছিলেন।’’
চণ্ডীপুরের আদিবাসী ঝুমুর নৃত্যদলে রেসকা ও মনসা নিয়মিত হারমোনিয়াম বাজান। সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠান ছাড়াও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও তাঁদের দলের ডাক পরে একাধারে কৃষিজীবী ও শিল্পী রেসকার। বুধবারও তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বুনিয়াদপুরে মুখ্যমন্ত্রীকে আদিবাসী নাচ ও গানের মাধ্যমে স্বাগত জানাতে। নাচ-গান শেষ করে তাই দাঁড়িয়েছিলেন মঞ্চের এক পাশে। তখনই মুখ্যমন্ত্রীর নজর পড়ে তার হারমোনিয়ামের উপরে। তারপরেই ভাঙা হারমোনিয়ামে সুর তোলেন মমতা।
মনসাও প্রান্তিক চাষি এবং গত চল্লিশ বছর ধরে গান করে আসছেন। দু’জনেই রাজ্য সরকারের শিল্পী ভাতা পান। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ ও তাঁর হারমোনিয়াম বাজানো দেখার অনুভূতিই আলাদা বলে রেসকা ও মনসার দাবি।
বুধবার মঞ্চে উঠে বক্তব্যের মাঝে সেই ‘জীর্ণ’ হারমোনিয়াম বাজানোর অভিজ্ঞতা মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন। সভামঞ্চের পাশেই নিরাপত্তার তদারকির জন্য দাঁড়িয়েছিলেন জেলাশাসক নিখিল নির্মল, ডিআইজি (মালদহ) প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা প্রশাসন তখনই রেসকাকে একটা নতুন হারমোনিয়াম উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। জেলাশাসক বলেন, ‘‘দু’জনকেই নতুন হারমোনিয়াম দেওয়া হয়েছে।’’ এ দিকে নতুন হারমোনিয়াম পেয়েছেন বলে কি পুরনোটাকে ভুলে যাবেন? প্রশ্ন শুনে রেসকার জবাব, ‘‘ওই হারমোনিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর ছোঁয়া রয়েছে। ওটা তাঁর স্মৃতি হিসেবে যত্ন করে বাড়িতে তুলে রাখব।’’