সরকারি চাকরি সামলে মূর্তিও গড়েন অজয়

প্রতিমার কাঠামো তৈরি থেকে খড় জড়ানো, মাটি লাগানো, শাড়ি-গয়না পরানো— সব একা হাতেই সারা। মাঝে মধ্যে রাত জেগে শিল্পীকে সাহায্য করেন স্ত্রী-মেয়ে।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪৯
Share:

ব্যস্ত শিল্পী। —নিজস্ব চিত্র।

প্রতিমার কাঠামো তৈরি থেকে খড় জড়ানো, মাটি লাগানো, শাড়ি-গয়না পরানো— সব একা হাতেই সারা। মাঝে মধ্যে রাত জেগে শিল্পীকে সাহায্য করেন স্ত্রী-মেয়ে।

Advertisement

ছোটবেলায় কাদামাটি নিয়ে খেলতে খেলতে একদিন দুর্গাপ্রতিমা গড়ার সাহসও তৈরি হবে, ভাবতেও পারেননি পঞ্চাশোর্ধ্ব অজয় নন্দী। বর্তমানে বসিরহাট মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মী অজয়বাবুর একমাত্র নেশা প্রতিমা গড়া। ব্যবসায়ীক কারণে নয়, প্রাণের টানে দুর্গা, কালী, সরস্বতীর মূর্তি গড়েন তিনি। দিনের বেলায় দফতরের কাজ সামলে রাত জেগে প্রতিমা প্রাণ পায় তাঁর হাতে। এ বার বসিরহাট শহরের চারটি বড় মণ্ডপের দুর্গা প্রতিমা তৈরির দায়িত্ব নিয়েছেন অজয়বাবু।

তবে শিল্পীকে মাটির প্রতিমা গড়ার থেকেও বেশি করে টানে থিমের পুজোর কাজে। সে জন্যই গত কয়েক বছর ধরে বসিরহাটের মহুয়া সঙ্ঘের পুজোয় কখনও সন্দেশ, কখনও খুচরো পয়সা, কখনও পাটকাটি, দেশলাই কাঠি কিংবা মাছের আঁশ, নারকেলের ছোবড়া, বাদাম-সহ নানা উপকরণ দিয়ে তৈরি করা অজয়বাবুর প্রতিমা দেখতে ভিড় জমিয়েছেন দর্শক।

Advertisement

নৈহাটিতে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির সামনে টিন দিয়ে ছাদের তলায় দুর্গাপ্রতিমা গড়ায় মনোনিবেশ করেছেন শিল্পী। অজয়বাবুর কথায়, ‘‘ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়, ছোটবেলার ইচ্ছাকে বাঁচিয়ে রাখতেই মূর্তি গড়া। তাই তো সরকারি চাকরি পেয়েও মূর্তি গড়ার কাজ ছাড়তে পারেনি।’’

তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই কাজ করে আসা শিল্পীর কিছু অভিমানও জমেছে। মনে করেন, শিল্পীদের সন্মান দিয়ে উৎসাহ জোগানোর লোকের অভাব আছে। সরকারি ভাবেও কোনও সাহায্য মেলে না।

বসিরহাট মহকুমার মৃৎশিল্পীদের নিয়ে অজয়বাবু একটি সংগঠন গড়েছেন। ২৩৬ জনের সেই সংগঠনের বসিরহাট মহকুমার সম্পাদক তিনি। অজয়বাবু বলেন, ‘‘সরকারি কর্মচারী হলেও আমি একজন পটুয়া। তাই খরচের টাকা পেলেই প্রতিমা গড়ি। এখানকার শিল্পীদের আর্থিক অবস্থা যথেষ্ট করুণ। শহরের বড় ক্লাবগুলি যদি লক্ষ টাকা খরচ করে কৃষ্ণনগর, কুমারটুলি, দেগঙ্গার পরিবর্তে এখানকার শিল্পীদের উপরে একটু ভরসা রাখেন, তা হলে মৃৎশিল্পীদের বেঁচে থাকার পথটা অনেক সহজ হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন