গত বছরও ঠাকুর দেখেছিল দিশা

ষষ্ঠীর সকালে বনগাঁর ৩ নম্বর মাধবপুর গ্রামেও লেগেছে শারদ উৎসবের ছোঁয়া। কিন্তু গ্রামের বাসিন্দা পরিতোষ বিশ্বাসের পরিবারের মন ভাল নেই। পুজোর রোশনাই পৌঁছয়নি বাড়ির চৌহদ্দিতে। 

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

গোপালনগর: শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:০২
Share:

দিশা বিশ্বাস

দূর থেকে ঢাকের আওয়াজ ভেসে আসছে। মণ্ডপ থেকে মাইক ভেসে আসছে সুর, ‘‘শূন্য এ বুকে পাখি মোর আয়...।

Advertisement

ষষ্ঠীর সকালে বনগাঁর ৩ নম্বর মাধবপুর গ্রামেও লেগেছে শারদ উৎসবের ছোঁয়া। কিন্তু গ্রামের বাসিন্দা পরিতোষ বিশ্বাসের পরিবারের মন ভাল নেই। পুজোর রোশনাই পৌঁছয়নি বাড়ির চৌহদ্দিতে।

গত বছর দুর্গা পুজোর ঠিক পরেই জ্বরে আক্রান্ত হয় বিশ্বাস পরিবারের ছোট্ট মেয়ে দিশা। বাঁচানো যায়নি শেষমেশ। অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতিতে এগারো বছরের দিশার মৃত্যু হয়েছিল।

Advertisement

দিনটা ছিল, ২৪ অক্টোবর। কল্যাণীর কলেজ অব মেডিসিন অ্যান্ড জেএনএম হাসপাতালে ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয় পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া দিশার। সোমবার ষষ্ঠীর সকালে মেয়ের কথা বলতে গিয়ে গলা ভারী হয়ে আসছিল পরিতোষের। চোখ ছলছল করে উঠল।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, দিশার মৃত্যুর পরেও ঘুম ভাঙেনি প্রশাসনের। এ বারও এলাকায় অনেকে জ্বর-ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। পরিতোষ জানালেন, মেয়ের মৃত্যুর পরে পঞ্চায়েতের তরফে এলাকায় কয়েক প্যাকেট ব্লিচিং ছড়ানো ছাড়া আর কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। মশা মারার তেল ছড়াতে দেখা যায়নি। কেরলে কাজ করতেন পরিতোষ। মেয়ের মৃত্যুর পরে আর ফিরে যাননি। বাড়িতেই রয়েছেন। বললেন, ‘‘প্রথমে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম মেয়েকে। দুর্ভাগ্য, সেখানে মেয়েটার জ্বর মাপার থার্মোমিটারটুকু পাওয়া যায়নি। একদিন প্লেটলেট কাউন্ট পর্যন্ত মাপা হয়নি। চিকিৎসকে বারবার বলেছিলাম, টাকা পয়সার কোনও সমস্যা হবে না। মেয়েকে কোথায় নিয়ে যেতে হলে বলুন। কিন্তু কেউ কোনও গুরুত্বই দিলেন না।’’ পরে দিশাকে কল্যাণীতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

একমাত্র মেয়েকে নিয়েই ছিল পরিতোষ ও তাঁর স্ত্রী শম্পার জগৎ। স্থানীয় স্কুলে পড়ত মেয়েটা। লেখাপড়ার পাশাপাশি মেয়েকে তাঁরা নাচ শেখাচ্ছিলেন। পরিতোষ জানালেন, গত বছরও বনগাঁ শহরের মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখিয়েছিলেন মেয়েকে। এ বার পুজোয় কেনাকাটা তো দূরের কথা, পুজো এসেছে বলেই কারও খেয়াল নেই।

কথা বলতে বলতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়লেন পরিতোষ। বললেন, ‘‘যত দিন বেঁচে থাকব, ঘুমের মধ্যেও কষ্ট নিয়েই বাঁচতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন