এমনিতেই ডাকঘরের সে দিন নেই। চিঠি লেখার রেওয়াজ উঠে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাক ব্যবস্থার সুদিনও অস্তমিত। ব্যাঙ্ক বা নানা সরকারি-বেসরকারি দফতর থেকে চিঠিপত্র আর কিছু ডাকঘর-ভিত্তিক আর্থিক প্রকল্প, এ সবের উপরেই বেঁচে আছে ডাক পরিষেবা। তবু তার মধ্যেও পোস্ট মাস্টারের অনীহায় পরিষেবা পেতে হয়রান সাধারণ মানুষ থেকে এজেন্টরা। এমনই অভিযোগ উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের আতপুর এলাকার বাসিন্দাদের।
শ্যামনগরের পুরনো ডাকঘর উঠে গিয়ে নতুন ডাকঘর চালু হয়েছে বেশ কয়েক বছর। কিন্তু আতপুরের ডাকঘর এখনও সেই পুরনোই। তার উপরেই নির্ভরশীল প্রায় ১০ হাজার মানুষ। ডাকঘরের কর্মী ৭ জন, প্রতি মাসে পরিষেবা নিতে ডাকঘরে আসেন ৫ থেকে ৭ হাজার মানুষ। এজেন্ট হিসাবে কাজ করছেন ১৬ জন। কিন্তু এজেন্ট থেকে শুরু করে সাধারণ অধিবাসীদের সিংহভাগের অভিযোগ, পোস্ট মাস্টারের অসহযোগিতায় তাঁরা নিজেদের হকের পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যে কাজ এক বারে হয়ে যাওয়ার কথা, তার জন্যই ঘুরতে হচ্ছে বারবার। পোস্ট মাস্টার সব্যসাচী রায় অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তাঁর দাবি, এই নিয়ে কথা বলতে গেলে তাঁর অফিসে যেতে হবে। অথচ ডাকঘরে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি, এমন অভিযোগ বহু বাসিন্দারই। পরিষেবা নিতে গিয়ে তাঁদের হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ করে পোস্ট মাস্টার জেনারেলকে চিঠি দিয়েছেন রামকৃপাল ভট্টাচার্য, অলোক মুখোপাধ্যায়ের মতো এলাকার বাসিন্দারা। তাতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। বাধ্য হয়েই এখন পোস্ট মাস্টারের খামখেয়ালিপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে সই সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছেন আতপুরের বাসিন্দারা।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, ধরা যাক কারও মাসিক আয় প্রকল্প (এমআইএস) ম্যাচিওর করেছে। টাকা তুলে তিনি আবার তা ডাকঘরেই বিনিয়োগ করতে চান। তাঁকে বলা হচ্ছে, নতুন করে সব নথিপত্র জমা দিতে হবে! অসুস্থতার জন্য কেউ ডাকঘরে যেতে পারছেন না। নর্থ প্রেসিডেন্সি ডিভিশনের সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পোস্ট অফিস-কে দিয়ে অথরাইজেশনের চিঠি মঞ্জুর করিয়ে প্রতিনিধি পাঠালেও পোস্ট মাস্টার তাঁকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। গ্রাহকদের এমন হয়রানির সঙ্গে সঙ্গে এজেন্টরাও পোস্ট মাস্টারের কাজকর্মে ক্ষুব্ধ। তাঁদের প্রশ্ন, সরকারি পরিষেবা নিতে এসে গ্রাহকেরা হয়রানির শিকার হয়ে আরও বিমুখ হয়ে পড়লে এজেন্টদের জীবিকাই তো থাকবে না!
এলাকার বাসিন্দাদের কারও কারও প্রশ্ন, পোস্ট মাস্টার হিসাবে যে কোয়ার্টারে এখন তাঁকে থাকতে হয়, তা বিশেষ বাসযোগ্য নয়। অথচ তার জন্য খরচ কেটে নেওয়া হয় পোস্ট মাস্টারের কাছ থেকেই। ওই পরিবেশে থাকা যাচ্ছে না বলেই কি পোস্ট মাস্টার গ্রাহকদের সমস্যায় ফেলে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছেন, যাতে তাঁকে আর আতপুরে থাকতে না হয়?
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এই সব অভিযোগ কি সত্যি? সব্যসাচীবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমি সরকারি কর্মচারী। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারি না।’’