জল নামেনি অনেক গ্রামে, ত্রাণ বিলি নিয়ে অভিযোগ

বৃষ্টি বন্ধ হয়েছে। কিন্তু নামছে না জল। ত্রাণ বিলি নিয়েও উঠছে নানা অভিযোগ। স্বরূপনগরের চারঘাট পঞ্চায়েতের মোল্লাডাঙা গ্রামের ঘর, বাড়ি, ফসলের জমি এখনও জলের তলায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বসিরহাট শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৫ ০১:৩৫
Share:

এখনও জলমগ্ন বাদুড়িয়া। —নিজস্ব চিত্র।

বৃষ্টি বন্ধ হয়েছে। কিন্তু নামছে না জল। ত্রাণ বিলি নিয়েও উঠছে নানা অভিযোগ।

Advertisement

স্বরূপনগরের চারঘাট পঞ্চায়েতের মোল্লাডাঙা গ্রামের ঘর, বাড়ি, ফসলের জমি এখনও জলের তলায়। সেখানকার বেশির ভাগ মানুষ চারঘাট স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাঠে নিজেদের উদ্যোগে শিবির করেছেন। দিন কয়েক আগে খাদ্যমন্ত্রী সেখানে গিয়ে পর্যাপ্ত ত্রাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্গতদের দাবি পর্যাপ্ত ত্রাণ মিলছে না। নিজেদের টাকায় বাঁশ-পলিথিন কিনতে হয়েছে। তাঁদের আরও দাবি, এক সপ্তাহে মাত্র একবার ত্রাণ মিলেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, স্থানীয় পঞ্চায়েতটি সিপিএমের দখলে বলেই এই অবস্থা। বাদুড়িয়ার চাতরা, চন্ডীপুর এবং রামচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের কেওটশা, ঘোড়াগাছা, শিবপুর, উমাপতিপুর, বেনা পূর্ব, নতুন চন্ডীপুর-সহ কয়েকটি গ্রামে এখনও জল জমে রয়েছে। সেখানেও সরকারি ত্রাণ শিবিরে সবাই ঠাঁই পাননি। অনেকে নিজেদের উদ্যোগে শিবির করে রাত কাটাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন গ্রাম থেকে মিলছে আন্ত্রিক-সহ বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ার খবর।

রবিবার কেওটশা হাইস্কুল চত্বরে গিয়ে দেখা গিয়েছে এক হাঁটু জল। ওই স্কুলের ত্রাণ শিবিরে এখনও পাঁচশোর বেশি মানুষ রয়েছেন। কানু মণ্ডল, সফিকুল ইসলাম, পদ্মা দাস, সকিনা বিবি বলেন, ‘‘ঘরবাড়ি, জমি সব জলের নীচে। গবাদি পশুর খাবার নেই। জল এখনও বাড়ছে।’’ জেলা প্রশাসনের পক্ষে দাবি করা হয়েছে, মহকুমার গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। ছড়ানো হচ্ছে ব্লিচিং। তবে বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরেও সেই ছবি চোখে পড়েনি। রবিবার সকালে বাদুড়িয়ার চন্ডীপুর পঞ্চায়েতের বেনা গ্রামের পূর্ব পাড়ার শতাধিক পরিবার প্রায় এক কোমর জল পেরিয়ে মগরা-কেওটশা রাস্তার ধারে উঠে আসেন। ওই গ্রামের সিপিএমের সদস্য মহসীন হোসেনের অভিযোগ, ‘‘ত্রাণ মিলছে। তবে সেটা এতটাই কম যে একদিনের খাবারে সাত দিন চালাতে হচ্ছে। যেখানে সিপিএমের সদস্য সেখানেই এই সমস্যা চলছে।’’ জেলা প্রশাসনের কর্তাদের অবশ্য দাবি, স্বরূপনগর এবং বাদুড়িয়ায় প্লাবিত মানুষের ত্রাণ দেওয়ার ক্ষেত্রে দল দেখার প্রশ্নই নেই। তাই ত্রাণ নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ মিথ্যা। রবিবার তেপুল-মির্জাপুর পঞ্চায়েতের মেদিয়া গ্রামে ছাত্র কল্যান সমিতির প্রাঙ্গণে প্রায় দেড় হাজার পরিবারের হাতে ত্রাণ তুলে দেয় নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েতের কর্তারা।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে ইছামতী, পদ্মা, যমুনা এবং সোনাই নদীর জল বাড়ায় চিন্তিত বাসিন্দারা। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, স্বরূপনগরের গোপালপুর, বাড়ঘরিয়া, নিশ্চিন্দিপুর, মোল্লাডাঙা, পাতুয়া, চরপাড়া, কাঁটাবাগান, দিয়ারা, শ্রীনাথপুর-সহ কয়েকটি এলাকায় জল কমছে না। কঙ্কনা বাওড় উপচে নতুন করে মেদিয়া, তেপুলের কয়েক হাজার মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছে। মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে। চাষের জমি জলের নীচে। বিভিন্ন গ্রামের দুর্গত মানুষের দাবি, নদীর গতিপথ আটকে মাছ চাষ হওয়ার জন্যই উপচে যাচ্ছে নদীর জল। এই সমস্যার সমাধান করতে না পারলে প্রতি বর্ষাতেই তৈরি হবে বন্যা পরিস্থিতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন