টানা ৮ দিন গাছে কাটিয়ে নিজেকে বাঘের থেকে বাঁচিয়ে রাখেন অমল

অমলের সঙ্গীরা জানান, সুন্দরবনের ৮ নম্বর চিমটার জঙ্গলে গিয়েছিলেন তাঁরা। রাতে খাঁড়িতে নোঙর করেন। সকালে উঠে দেখেন, অমল নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি ফিরে আসেন তাঁরা।

Advertisement

নির্মল বসু

হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২৩
Share:

ঘরে-ফেরা: মূর্তি কোলে অমল। নিজস্ব চিত্র

বাঘের পেটে গিয়েছেন, নাকি খুন হয়েছেন, নাকি পড়েছেন জলদস্যুদের কবলে— এই নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছিল বাড়ির লোকের। শেষে আট দিন পরে তিনি ফিরে এলেন। সুস্থ অবস্থাতেই। আর কোলে করে নিয়ে এলেন এক কালীমূর্তি। যাঁকে ঘিরে বৃহস্পতিবার পুজো জমে উঠেছে হিঙ্গলগঞ্জের বাজার এলাকায়।

Advertisement

যাঁকে নিয়ে এত কাণ্ড, তিনি স্থানীয় বাসিন্দা অমল মণ্ডল।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হিঙ্গলগঞ্জ বাজারের পাশে থাকেন অমল, স্ত্রী অনিলা এবং ছেলে সুরজিৎ। ৪ নভেম্বর এলাকার আরও চারজনের সঙ্গে সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ ধরতে বেরিয়েছিলেন অমল।

Advertisement

১০ নভেম্বর চারজন বাড়ি ফিরলেও অমল আসেননি। তিনি কী ভাবে নিখোঁজ হলেন, তা নিয়ে সঙ্গীরা সদুত্তর দিচ্ছেন না বলে অনেকের মনে নানা সন্দেহ দানা বাঁধে। থানায় নিখোঁজ ডায়েরি হলে তদন্তে নামে পুলিশ ও বন দফতর।

অমলের সঙ্গীরা জানান, সুন্দরবনের ৮ নম্বর চিমটার জঙ্গলে গিয়েছিলেন তাঁরা। রাতে খাঁড়িতে নোঙর করেন। সকালে উঠে দেখেন, অমল নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি ফিরে আসেন তাঁরা।

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে জঙ্গলের ভিতরে গাছের উপর থেকে একজনকে চিৎকার করতে দেখে বনকর্মীরা পাড়ে নৌকা আনেন। তাঁরা অমলকে উদ্ধার করে গোসাবার মোল্লাখালি থানায় নিয়ে যান। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার সকালে ওই মৎসজীবীকে হিঙ্গলগঞ্জ থানায় আনা হয়।

সেখানে অমল শুনিয়েছেন বেঁচে থাকার এক আশ্চর্য কাহিনি।

অমল বলেন, ‘‘রাতের খাওয়া সেরে সকলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সকালে উঠে দেখি, জঙ্গলের মধ্যে শুয়ে আছি। সারা গায়ে কাদা।’’ পুলিশের অনুমান, ঘুমের ঘোরে অমল নিজেই জঙ্গলে নেমে গিয়েছিলেন।

তারপরের ঘটনা আরও রোমহর্ষক।

অমল বলেন, ‘‘বিপদের মধ্যে মাথা ঠান্ডা রেখেছিলাম। বুঝেছিলাম, যে কোনও সময়ে বাঘের পেটে যেতে পারি। তাই সামনে একটা লম্বা মতো পাকাপোক্ত গর্জন গাছ দেখে চড়ে বসি। গত আট দিন ধরে ওই গাছের ফল খেয়ে ছিলাম। নদীর নোনা জল মুখে তোলা না গেলেও বাধ্য হয়ে তা-ই খেয়েছি।’’

ঘুম এলেও যাতে গাছ থেকে পড়ে না যান, গামছা দিয়ে নিজেকে শক্ত করে বেঁধে রেখেছিলেন অমল। তবে বাঘ আসেনি বলে বাঁচোয়া। বিপদের মধ্যেও মাথাটা ঠিকঠাক কাজ করায় বেঁচে গিয়েছে ও, বললেন এক পুলিশ কর্তা।

পুলিশ জানায়, এ দিন যখন অমলকে আনা হচ্ছিল, সে সময়ে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখেন একটি কালী প্রতিমা। তাকে কোলে তুলে নেন অমল।

ছেলে সুরজিৎ বলেন, ‘‘ভাবিনি বাবাকে ফিরে পাব। বড় আনন্দ হচ্ছে। ওই প্রতিমা আমরা সকলে মিলে পুজো করছি।’’ অমলের সঙ্গীদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ তাঁরা তুলে নেবেন বলে জানিয়েছেন অনিলা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন