মহিলার মৃত্যুতে ডেঙ্গি-আতঙ্ক 

বারাসত জেলা হাসপাতাল থেকে দেওয়া রিতার ‘ডেথ সার্টিফিকেটে’ মৃত্যুর কারণ লেখা হয়েছে, ‘অ্যাকিউট করোনারি সিনড্রোম উইথ সেপটিসেমিয়া’। রিতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শহরবাসীর মধ্যে ডেঙ্গি-আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

অশোকনগর শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৯ ০০:৪৪
Share:

শোকার্ত: মৃতার পরিবার। অশোকনগরে। ছবি: সুজিত দুয়ারি। (ইনসেটে) মৃত মহিলা।

জ্বরে আক্রান্ত এক মহিলার মৃত্যু হল অশোকনগর- কল্যাণগড় পুরসভা এলাকায়। রবিবার সকাল সাড়ে ৭টায় বারাসত জেলা হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম রিতা বালা (৪৬)। তাঁর পরিবারের লোকজনের দাবি, রিতা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অ্যালাইজা পরীক্ষায় তা ধরাও পড়েছিল।

Advertisement

যদিও বারাসত জেলা হাসপাতাল থেকে দেওয়া রিতার ‘ডেথ সার্টিফিকেটে’ মৃত্যুর কারণ লেখা হয়েছে, ‘অ্যাকিউট করোনারি সিনড্রোম উইথ সেপটিসেমিয়া’। রিতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শহরবাসীর মধ্যে ডেঙ্গি-আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করেছে। এলাকার মানুষের বক্তব্য, ইতিমধ্যে অনেকেই ডেঙ্গিজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, পুরসভার তরফে মশা মারার অভিযান নিয়মিত হচ্ছে না।রিতার বাড়ি পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বনবনিয়া এলাকায়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন ধরেই রিতার জ্বর ছিল। জ্বর ওঠানামা করেছে। বৃহস্পতিবার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় শনিবার গভীর রাতে চিকিৎসকেরা তাঁকে বারাসত হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। রবিবার সকালে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।

রিতার স্বামী কনেশ্বর বালা পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। তাঁদের এক ছেলে। স্ত্রীর মত্যুর পরে কনেশ্বর বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন রিতার ডেঙ্গি হয়েছে। হাবড়া হাসপাতালে এক শয্যায় তিন চারজন রোগীর সঙ্গে থাকতে হয়েছিল ওঁকে। হয়তো ঠিক মতো চিকিৎসাও হয়নি।’’ তাঁর ক্ষোভ, তাঁদের এলাকায় পুরসভার তরফে মশা মারতে তেমন পদক্ষেপ করা হয়নি।এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, চারদিক বনজঙ্গল-আগাছায় ভরা। দিনের বেলাতেও মশার উপদ্রব। বাসিন্দারা জানান, জ্বর ছড়ালেও পুর পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না। জমা জল সরানোর ব্যবস্থা নেই। সংলগ্ন ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মালতী মিস্ত্রি বলেন, ‘‘এলাকায় অনেকের ডেঙ্গিজ্বর হয়েছে। আমার জামাইও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিল। দিনকয়েক আগে সে বাড়িতে ফিরেছে। এলাকায় ব্লিচিং, চুন, মশা মারার তেল কিছুই দেওয়া হচ্ছে না।’’ স্থানীয় এক মহিলা বলেন, ‘‘মশা মারার তেল তো ছড়ানো হচ্ছেই না। উল্টে পুরসভার তরফে প্রচার করা হচ্ছে, আমরা যেন নিজেরাই মশা মারার ব্যবস্থা করি।’’ অনেক পরিবারেই দেখা গেল চুন-ব্লিচিং-মশা মারার তেল কিনে নিজেরাই বাড়ির পাশে ছড়াচ্ছেন।

Advertisement

২০১৭ সালে বনবনিয়া এলাকা-সহ পুরসভার বিস্তৃত এলাকায় ডেঙ্গিজ্বর ছড়িয়েছিল। কয়েকজন মারাও গিয়েছিলেন সেবার। এ বার ফের জ্বরে মৃত্যুর ঘটনা ঘটায় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের চিত্তরঞ্জন বিশ্বাসের অভিযোগ, ‘‘হাতেগোনা কয়েকটি ওয়ার্ড ছাড়া মশা মারার কাজ কোথাও নিয়মিত হচ্ছে না। ইতিমধ্যেই অনেকে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। মশা মারার কাজ আরও দ্রুততার সঙ্গে করার দাবি জানিয়েছি পুরপ্রধানের কাছে।’’পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার অবশ্য দাবি করেন, গোটা পুরসভা এলাকাতেই মশা মারার কাজ নিয়মিত চলছে। তাঁর কথায়, ‘‘অন্য সব কাজ বাদ দিয়ে আমরা এখন ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে মশা মারার তেল স্প্রে করছি। ছড়ানো হচ্ছে ব্লিচিং, চুন। অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করে বন-জঙ্গল সাফাইয়ের কাজও হচ্ছে।’’ পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, বৃষ্টির কারণে কাজে অসুবিধা হচ্ছে। বৃষ্টিতে চুন, ব্লিচিং, তেল ধুয়ে যাচ্ছে। আজ, সোমবার থেকে ফের মশা মারার অভিযান শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন