বসিরহাটে শিক্ষকের বাড়িতে হামলা, পিছনে আবার কি সেই প্রোমোটার চক্র

রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতীদের ছোড়া ইট-পাথরে বাড়ির দরজা-জানালার কাচ ভাঙল এক শিক্ষকের। আতঙ্কিত শিক্ষক পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাট থানার কাছেই পার্বতীচরণ রোডে।

Advertisement

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৫২
Share:

রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতীদের ছোড়া ইট-পাথরে বাড়ির দরজা-জানালার কাচ ভাঙল এক শিক্ষকের। আতঙ্কিত শিক্ষক পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাট থানার কাছেই পার্বতীচরণ রোডে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ষোলো বছর আগে প্রায় আড়াই কাঠা জমি কিনে বাড়ি করেন বসিরহাটেরই রঘুনাথপুর হাইস্কুলের স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল।

তাঁর অভিযোগ, জমি কেনার কয়েক বছর পর থেকেই তাঁকে উচ্ছেদ করার চক্রান্ত করছে কিছু লোক। ওই জমিতে প্রোমোটারি করা যাদের উদ্দেশ্য। নানা সময়ে বাড়ি ছাড়তে হুমকি দেওয়া হয়েছে তাঁকে। বিষয়টি পুরপ্রধান, স্থানীয় কাউন্সিলরকে আগে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু পরিস্থিতির বদল হয়নি। এ বার রাতবিরেতে বাড়িতে ইট-পাথর উড়ে আসায় পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে বাধ্য হলেন। এর আগেও তাঁর বাড়িতে এ ধরনের উৎপাত হয়েছে বলে অভিযোগ রবীন্দ্রনাথবাবুর।

Advertisement

মাস্টারমশাইয়ের কথায়, ‘‘ছেলের সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা। মেয়েটাও উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। এই পরিবেশে ওদের মধ্যে আতঙ্ক ঢুকে গিয়েছে। আমরাও দুশ্চিন্তায় ভুগছি। স্ত্রীকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে।’’

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই শিক্ষক এবং তার পরিবারের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে এলাকার কারও কারও মতবিরোধ চলছে। তা নিয়ে উভয়পক্ষের মহিলাদের মধ্যে একাধিক বার গণ্ডগোল ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে এর আগে দু’পক্ষই থানা-পুলিশ করেছে। রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, জমিজমা সংক্রান্ত গণ্ডগোল ছাপিয়ে এ বার বিষয়টি হুমকি দিয়ে উচ্ছেদের চেষ্টার অভিযোগে বদলে গিয়েছে। বিষয়য়টি যে কারণে পুলিশেরও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর আগে বসিরহাটেই প্রোমোটারিকে কেন্দ্র করে দুই শিক্ষিকাকে খুনের ঘটনা ঘটেছে। গ্রেফতারও হয়েছে কেউ কেউ। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘প্রোমোটরির চক্রের জন্যই আমাকে সরাতে কেউ কেউ তৎপর হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েও সুরাহা হচ্ছে না।’’ শিক্ষকের বিষয়টিকে তাঁরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বলে জানান এক পুলিশ আধিকারিক। সংশ্লিষ্ট ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাজনিন সুলতানা জানান, ওই শিক্ষকের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে কারও কারও বিবাদের বিষয়টি তাঁর অজানা নয়। জমি মাপজোক করেও সমাধান হয়নি। তবে কে বা কারা কোন উদ্দেশ্যে তাঁর বাড়িতে রাতের অন্ধকারে হামলা করেছে, তা স্পষ্ট নয়।’’

গত কয়েক বছরে বসিরহাটে জমি-বাড়ির দাম হু হু করে বেড়েছে। সীমান্তে চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত অনেকের হাতে দেদার কাঁচা টাকা এখানে। তারা যে কোনও দামে জমি-বাড়ি কিনতে রাজি। গত কয়েক বছর ধরে একের পর এক বহুতল গজিয়ে উঠেছে এলাকায়। তার দামও আকাশছোঁয়া। কলকাতা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরের এই মফস্‌সল শহরে ফ্ল্যাটের দাম স্কোয়ার ফুট-পিছু ১৮০০-২৫০০ টাকা। জমির দাম জায়গা বিশেষে ১৫-২০ লক্ষ টাকা। জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাট কেনাবেচা করে বহু লোক অগাধ টাকা কামাচ্ছে। এমনকী, আইনি সমস্যা আছে, এমন জমি-বাড়িও প্রোমোটারদের হাতে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। পুলিশের একাংশের অনুমান, সরকারি কোনও কোনও দফতরে কিছু অসাধু কর্মীর হাত ধরে সেই সব জমি-বাড়িও আইনি চেহারা নিচ্ছে। আর তারপরে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে চড়া দামে। বিচারকের সই জাল করার অভিযোগে এর আগে বসিরহাট আদালতের মুহুরি-সহ ধরা পড়েছিল কয়েকজন।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত-লাগোয়া এই শহরে জমি-বাড়ির দালালি, প্রোমোটারি ইদানীং বেশ লাভের ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তাকে কেন্দ্র করেই হু হু করে বাড়ছে নানা বেআইনি কাজ। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, যাঁরা একা থাকেন, তাঁদের ধমকে-চমকে সস্তায় জমি-বাড়ি কিনে ফ্ল্যাট তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে আমাদের কানে এসেছে। কিন্তু প্রোমোটারদের হাতে মাসলম্যান আছে। ভয়ে অনেকে মুখ খোলেন না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement