চিকিৎসাধীন: হাসপাতালে জখম অজিত দেবনাথ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
রাতে নিজের ঘরে ঘুমিয়েছিলেন অজিত দেবনাথ এবং স্ত্রী পদ্মা দেবনাথ। গরম পড়েছে। জানলা রোজই খোলা থাকে। বৃহস্পতিবারও ছিল। হঠাৎ মাঝ রাতে প্রবল শব্দে ঘুম ভাঙে আশেপাশের লোকজনের। তাঁরা এসে দেখেন, বিছানায় গুলি লেগে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে অজিত। জখম হয়েছেন পদ্মাও। গোপালনগর থানার সুন্দরপুর এলাকরা ঘটনা।
অজিত তৃণমূল কর্মী। পঞ্চায়েত ভোটের আবহে এই ঘটনায় রাজনীতির রঙ লেগেছে। তৃণমূলের অভিযোগ বিরোধীরাই ভোটের আগে এলাকা অশান্ত করার ছক কষেছে। পুলিশে অভিয়োগ দায়ের হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হলেও কী কারণে গুলি, সে বিষয়ে পুলিশ কিছু জানাতে পারেনি। বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় বলেন, ‘‘ঘটনার কারণ স্পষ্ট নয়। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি। একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’
অভিযোগ, পৌনে ১২টা নাগাদ খোলা জানলা দিয়ে দুষ্কৃতীরা তাঁকে গুলি করে। গুলি অজিতের পায়ে লাগে। পদ্মার পায়ের একাংশ পুড়ে গিয়েছে। দু’জনকেই প্রথমে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অজিতকে আরজিকর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমার কোনও শত্রু আছে বলে তো জানি না। তবে তৃণমূল করি। কারা কী কারণে গুলি করল, জানি না।’’
স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস শুক্রবার সকালে ওই বাড়িতে যান। দুষ্কৃতীদের দ্রুত গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করতে আমাদের কর্মীকে গুলি করা হয়েছে।’’ উত্তেজনা থাকায় অজিতের বাড়ির সামনে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। তাঁর বৌমা চুমকি বলেন, ‘‘আমরা পাশের ঘরেই ঘুমিয়েছিলাম। রাতে প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভাঙতেই শুনি শ্বশুরমশাই, শাশুড়ি আর্তনাদ করছেন।’’
গুলি চালানোর কারণ যাই হোক না কেন, এলাকার মানুষ কিন্তু এতে আতঙ্কিত। অনেকেই জানালেন, অতীতে ওই পঞ্চায়েতের সুন্দরপুর, সাতবেড়িয়া, জানিপুর-সহ নানা এলাকা অপরাধীদের ‘স্বর্গরাজ্য’ ছিল। প্রায় প্রতি রাতেই গুলি-বোমার শব্দে কেঁপে উঠল এলাকা। ভয়ে সন্ধ্যার পরে বাড়ি থেকে বেরোতেন না কেউ। পাচার এবং অন্যান্য অপরাধকে কেন্দ্র করে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের আনাগোনা লেগেই থাকত। স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল মণ্ডল বলেন, ‘‘২০১০ সাল পর্যন্ত দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য ছিল । বহু দিন হল গুলি-বোমার শব্দ আর শোনা যায় না। সেই অভিশপ্ত সময় যেন আর না ফেরে।’’ বাসিন্দরারা জানালেন, বছর খানেক আগে স্থানীয় কালুপুর চৌমাথা এলাকায় গরু পাচারকারীরা বোমাবাজি করেছিল। তারপর থেকে এলাকা শান্ত ছিল এত দিন। পঞ্চায়েত ভোটের আবহে ফের অশান্তি ঘনাবে কিনা, তা নিয়েই এখন চিন্তায় তাঁরা।