ঝুঁকি নিয়েই রান্নার গ্যাসে চলছে অটো

বেলা সাড়ে ১১টা বাসন্তীর শিমূতলায় একটি টিনের চাল দেওয়া দোকানের সামনে এসে দাঁড়াল অটো। অটোচালক বললেন, ‘‘আমার চাই পাঁচ কেজি।’’ দোকাদার সঙ্গে সঙ্গে একটি পাইপ এনে অটোর সিলিন্ডারের মুখে লাগিয়ে দিলেন। সামনে যেতেই দেখা গেল অটোতে গ্যাস ভরা হচ্ছে। কিন্তু এটি রান্নার গ্যাস। একই দৃশ্য দেখা গেল ক্যানিং, জীবনতলা, বাসন্তী, গোসাবা, সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায়। এই মহকুমায় এখন রান্নার গ্যাসে রমরমিয়ে চলছে অটো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩৯
Share:

খালি করা হচ্ছে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার। ছবি: সামসুল হুদা।

বেলা সাড়ে ১১টা বাসন্তীর শিমূতলায় একটি টিনের চাল দেওয়া দোকানের সামনে এসে দাঁড়াল অটো। অটোচালক বললেন, ‘‘আমার চাই পাঁচ কেজি।’’ দোকাদার সঙ্গে সঙ্গে একটি পাইপ এনে অটোর সিলিন্ডারের মুখে লাগিয়ে দিলেন। সামনে যেতেই দেখা গেল অটোতে গ্যাস ভরা হচ্ছে। কিন্তু এটি রান্নার গ্যাস। একই দৃশ্য দেখা গেল ক্যানিং, জীবনতলা, বাসন্তী, গোসাবা, সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায়। এই মহকুমায় এখন রান্নার গ্যাসে রমরমিয়ে চলছে অটো।

Advertisement

এতে সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই। এ বিষয়ে প্রশাসন জেনেও কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

রাজ্য সরকার অনেক আগেই পরিবেশ দূষণ রুখতে অটোতে ডিজেল বা পেট্রোলের পরিবর্তে পরিবেশ বান্ধব গ্যাসচালিত গ্রিন অটো চালানোর কথা বলেছেন। পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর, অটোতে গ্যাস ভরে চালালে বাতাসে হাইড্রোজেন কার্বনের মাত্রা বাড়ছে। রান্নার গ্যাস-এ বিউটেন থাকে ৬০ শতাংশ এবং প্রোপেন থাকে ৪০ শতাংশ। অটোতে গ্যাস ভরার ফলে যে কোনও সময় গাড়িতে আগুন লাগার সম্ভাবনাও থাকে। বিপদের আশঙ্কা মাথায় নিয়েই চলাচল করছে যাত্রীবাহী অটোগুলি। মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, ‘‘এমন একটি খবর আমার কানে এসেছে। বিষয়টি আমরা প্রশাসনিক ভাবে দেখছি।’’

Advertisement

সম্প্রতি ক্যানিং মহকুমার ক্যানিং, জীবনতলা, বাসন্তী এলাকার বিভিন্ন রুটের অবৈধ অটোকে বৈধ করতে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মহকুমার বিভিন্ন রুটে প্রায় হাজার খানেক অটোকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে চালু করা হয় পরিবেশ বান্ধব অটো। কিন্তু এই অটোগুলির মধ্যে মহকুমার সর্বত্র এখনও তৈরি হয়নি গ্যাস চালিত অটো। আর যে সমস্ত রুটে গ্যাসের অটো চলছে তার বেশির ভাগটাই চলছে ‘কাটা’ গ্যাসে অর্থাৎ রান্নার গ্যাসে। বাসন্তীর শিমূলতলার এক দোকানদার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, যে সমস্ত বাড়িতে একাধিক গ্যাসের সংযোগ রয়েছে তাঁরা অতিরিক্ত সিলিন্ডারগুলি বেশি দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন এলাকার কিছু লোককে। সেই গ্যাসগুলিই অটো চালকেরা কিনে অটো চালাচ্ছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ গ্যাস পাচ্ছেন। কিন্তু একাংশকে ভুগতে হচ্ছে। কীভাবে রান্নার গ্যাস অটোতে ভরা হচ্ছে ?

রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার ওজন মেসিনের উপর উপুড় করে বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে অটোর সিলিন্ডারে ভর্তি করা হচ্ছে। এর সঙ্গে একটি ওজন মেশিনও রাখা হয়েছে। বলা যায় এখন রান্নার গ্যাস অটোতে ভরার একটি ব্যাবসা গড়ে উঠেছে এই এলাকায়। যদিও এতে কোনও অন্যায় দেখছেন না অটোচালকরা। কারণ বাসন্তীর এক অটোচালক অলোক সরদার বলেন, ‘‘ক্যানিংয়ে অটোয় গ্যাস ভরার কোনও পাম্প নেই। বারুইপুর থেকে ভরে আনতে হয়। সে ক্ষেত্রে কেজি প্রতি ১০০-১১০ টাকা লাগে। রান্নার গ্যাসের দাম পড়ে কেজি প্রতি ৭০-৮০ টাকা। দামের দিক থেকে রান্নার গ্যাসে আমাদের সাশ্রয় হয়।’’ এ প্রসঙ্গে প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘ক্যানিংয়ে যাতে গ্যাসের পাম্প করা যায় তা নিয়ে পেট্রোল পাম্প মালিকেদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement