দক্ষিণ ২৪ পরগনা

মাঠে নয় শৌচকর্ম, বোঝাচ্ছে গ্রামের নজরদারি কমিটি

গাছে ঢিল মারলেন বৃদ্ধ মানুষটি। এক ঝাঁক পাখি উড়ে গেল। খেতে ঢিল মারল পাশে বসা বাচ্চা। মাটি ফুঁড়ে উঠে দাঁড়াল তিন জন, সাতসকালে শৌচকর্ম করতে বসেছিল যারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৬
Share:

সচেতনতা বাড়াতে পথে। কাকদ্বীপের একটি গ্রামে। — নিজস্ব চিত্র

গাছে ঢিল মারলেন বৃদ্ধ মানুষটি। এক ঝাঁক পাখি উড়ে গেল। খেতে ঢিল মারল পাশে বসা বাচ্চা। মাটি ফুঁড়ে উঠে দাঁড়াল তিন জন, সাতসকালে শৌচকর্ম করতে বসেছিল যারা।

Advertisement

স্বচ্ছ ভারত মিশনের প্রচারে অমিতাভ বচ্চনের এই টেলি-অ্যাড দু’বেলা দেখছেন মানুষ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দারা এখন বাস্তবেও দু’বেলা দেখতে পাচ্ছেন কিছু মানুষকে, যাঁরা মাঠে-ঘাটে ঘুরে নজরদারি চালাচ্ছেন। মানুষকে বলছেন, খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করবেন না। এতে নানা রোগবালাই ঘরে ঢোকে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাকে ‘উন্মুক্ত শৌচবিহীন জেলা’ ঘোষণার লক্ষ্যে আক্ষরিক অর্থেই মাঠে নেমেছে প্রশাসন। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হওয়ার কথা। তার আগে, ২০ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা এক মাস এই প্রকল্পের উপরে নিবিড় নজরদারি রাখা হচ্ছে। এ জন্য তৈরি হয়েছে ‘পাড়া নজরদার কমিটি’। খোলা জায়গায় শৌচকর্ম রুখতে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের। ১০-১৫ জনের এক একটি কমিটিতে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, আশা কর্মী, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য, ছাত্রছাত্রী, যুব সংগঠনের সদস্য, ক্লাব প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সামিল করা হয়েছে। কমিটির সদস্যেরা ভোরে ও বিকেলে গ্রামের আশপাশে মাঠঘাট ঘুরে দেখছেন। কাউকে খোলা জায়গায় বিশেষ ভঙ্গিতে দেখলেই সতর্ক করছেন।

Advertisement

কাকদ্বীপ ব্লকের প্রতাপাদিত্যনগর এলাকার একটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল শীতের সকালে কানে মাফলার, গায়ে সোয়েটার-চাদর চাপিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন কমিটির সদস্যেরা। দূর থেকে যাঁদের আসতে দেখে লজ্জায় পড়ে গেলেন এক যুবক। সবে বসেছিলেন মাঠে। নিজেই কানে হাত দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘ভুল হয়ে গিয়েছে দাদা। আসলে অনেক পুরনো অভ্যাস তো!’’

বছর দুয়েক আগে অনেকটা এমনই দৃশ্য দেখা যেত বীরভূমের খয়রাশোলে। নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত হয়ে ওঠার লক্ষ্যে খয়রাশোলের বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা সকালবেলায় রীতিমতো কোদাল হাতে নিয়ে গ্রামে চক্কর দিতেন। কাউকে হাতেনাতে ধরতে পারলে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হতো কোদাল। বিডিও গম্ভীর গলায় বলতেন, ‘‘যান কোদাল দিয়ে ওটা ঢেকে দিয়ে আসুন!’’

দক্ষিণ ২৪ পরগনায় কোদাল ধরানো না হলেও চলছে জোরদার প্রচার। বাড়ি বাড়ি গিয়ে উন্মুক্ত জায়গায় মলত্যাগের অপকারিতা বোঝানো, জল ও সাবান ব্যবহারে উৎসাহিত করা, খোলা জায়গায় শৌচকর্ম যে শাস্তিযোগ্য অপরাধ তা নিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে সকলকে। শিশুর মলমূত্র যাতে খোলা জায়গায় ফেলা না হয়, সেটা বুঝিয়ে বলা হচ্ছে। স্কুলে ছাত্র এবং ছাত্রীদের পৃথক শৌচাগার আছে কিনা, নজর থাকছে। এতে অনেকটাই কাজ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নজরদার কমিটির সদস্যেরা।

তবে বীরভূমের মতো এখানেও প্রধান সমস্যা দু’টো। এক, দীর্ঘদিনের অভ্যাস বদলানোর সমস্যা। দুই, বাড়ি বাড়ি শৌচালয় তৈরি এবং জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা। এই দু’টো চ্যালেঞ্জই মোকাবিলা করতে হবে প্রশাসনকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং জেলা পরিষদের সহযোগিতায় ‘আমার শৌচাগার’ প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৫ লক্ষ ৭৭ হাজার শৌচালয় তৈরি। তার মধ্যে জেলার ৫টি মহকুমা, ২৯টি ব্লক এবং ৩১০টি পঞ্চায়েতেই প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগোচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসনের সূত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন