আগুন ধরলে পালানোর উপায় নেই

পোড়া গোরাবাজার থেকে কি শিক্ষা নিচ্ছে জেলার অন্য বড় বাজারগুলি? অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা কেমন সেখানে? হুকিং করে লাইন টানা হয়নি তো? দমকল ঢোকার রাস্তা আছে? নাকি যে কোনও মুহূর্তে অগ্নিকাণ্ড ঘটার আশঙ্কা আছে? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

Advertisement

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৪
Share:

বিপজ্জনক: বাদুড়িয়া বাজার। নিজস্ব চিত্র

বাদুড়িয়া লোহার কাঠামোর উপরে অ্যাসবেসটসের ছাউনি। তলা থেকে ঝুলছে অস‌ংখ্য দড়ি, পলিথিন, বিদ্যুতের তার। যত্রতত্র বিদ্যুতের মিটার লাগানো। তাতেই রয়েছে স্যুইচ বোর্ড। অনেক জায়গায় খোলা বিদ্যুতের তারের জটে জাল তৈরি করে বাসা বেঁধেছে মাকড়সার দল। তারই তলায় রাস্তার পাশে কয়েকশো দোকান। যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কায় বাদুড়িয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

অ্যাসবেসটসের শেডগুলি অনেক জায়গায় ভেঙে গিয়েছে। শেডের লোহার খুঁটিতে বিপজ্জনক ভাবে বাঁধা রয়েছে বিদ্যুতের মিটার। স্যুইচ বোর্ড। সেখান থেকে বিদ্যুতের লাইন নিয়ে আলো জ্বালানো হচ্ছে। ওই বাজারে রোজই কেনাকাটা করতে আসেন হাজার মানুষ। অথচ ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা তো বাজারে নেই। এমনকী, আগুন লাগলে দমকল কোথা থেকে ঢুকবে তা-ও জানে না মানুষ।

১৯৮৬ সালে তৈরি হয়েছিল ৫৭৬ ফুট লম্বা এবং ৪৫ ফুট চওড়া অ্যাসবেসটসের ছাউনি দিয়ে দোকানিদের বসার জায়গা। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, জেলার অন্য কোনও বাজারে এত লম্বা ছাউনি দেওয়া জায়গা নেই। প্রায় সাড়ে চার বিঘা জমির উপরে গড়ে উঠেছে বাদুড়িয়া পুরসভা পরিচালিত ওই বাজার। সেখানে জামা-কাপড়ের দোকান থেকে শুরু করে আনাজ, মাছ, মাংস, চাল, মুদি, ফল-সহ অনেক দোকানই আছে।

Advertisement

সফিকুল ইসলাম, কুন্তল ভট্টাচার্য, পিন্টু দাস, দীপেন ভট্টাচার্য, মালবিকা মণ্ডলরা এই বাজার থেকেই কেনাকাটা করেন। তাঁদের কথায়, ‘‘বাজারের মধ্যে ব্যবসায়ীদের গাদাগাদির ফলে আনাজের ঝুড়ি এড়িয়ে অপরিসর জায়গা দিয়ে চলাচল করাটাই বেশ শক্ত। তারই মধ্যে আছে খোলা অবস্থায় বিদ্যুতের তার, দড়ি, পলিথিনের জঙ্গল। আগুন লাগলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’’ এই বাজারের এক মাথায় যদি আগুন লাগে তা হলে বাইরে বের হওয়ারও কোনও পথ নেই। কারণ বাজারে একটিমাত্র গেট।

ব্যবসায়ী দিলীপ সর্দার, গৌতম দত্তরা বলেন, ‘‘একবার আগুন লাগলে কিংবা অ্যাসবেসটসের চাল ভেঙে পড়লে বড় ধরনের দুর্ঘটনার মধ্যে পড়তে হবে। বাদুড়িয়ায় কোনও দমকলের গাড়িও থাকে না। বসিরহাট কিংবা হাবরা থেকে দমকলের গাড়ি আসে।’’

পুরসভার বাস্তুকার সুভাষ চৌধুরী, জেলা পরিষদের প্রাক্তন বাস্তুকার অনিমেষ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘বাজারের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য বাজারটিকে নতুন ভাবে সাজাতে হবে। তা না হলে যে ভাবে বিদ্যুতের তার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, তাতে যে কোনও দিন আগুন লাগতে পারে।’’

ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নুর ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘‘বাজারের নিরাপত্তার জন্য একাধিকবার পুরপ্রধানকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।’’ বাদুড়িয়ার পুরপ্রধান তুষার সিংহ বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ দফতরকে বলা হয়েছে, বাজারের মধ্যে পাইপের ভিতর ছাড়া বিদ্যুতের তার না টানতে। তা সত্ত্বেও হুকিং করা হচ্ছে। ফলে বাজারের বিপদ বাড়ছে। সংস্কার জরুরি।’’ তিনি জানান, ব্যবসায়ীরা পুরসভার কোনও কথা শুনতে চান না। তা ছাড়া, একজনের জায়গায় চারজন বসায় দিনের পর দিন বাজার ঘিঞ্জি হচ্ছে। বিপদ বাড়ছে। বাজার সংস্কারের জন্য ব্যবসায়ীরা সাহায্য করতে চান না বলে তুষারবাবুর অভিযোগ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement