সীমান্তে মিলছে বাংলাদেশি সিম

সম্প্রতি এ রাজ্যে ধরা পড়েছে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর তিন সদস্য। তিন জনেই ও পার বাংলার। তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ওই জঙ্গিরা উত্তর ২৪ পরগনা সীমান্ত দিয়েই ঢুকেছে। জেলার দুই আন্তর্জাতিক সীমান্ত— বসিরহাট ও বনগাঁয় নিরাপত্তা বাড়লেও দিব্যি চলছে চোরাপথে যাতায়াত। আনন্দবাজারের অন্তর্তদন্তে উঠে এল সেই ছবিই। আজ, বসিরহাট সীমান্ত।জেলার দুই আন্তর্জাতিক সীমান্ত— বসিরহাট ও বনগাঁয় নিরাপত্তা বাড়লেও দিব্যি চলছে চোরাপথে যাতায়াত। আনন্দবাজারের অন্তর্তদন্তে উঠে এল সেই ছবিই। আজ, বসিরহাট সীমান্ত।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২৮
Share:

বসিরহাটে তোলা নিজস্ব চিত্র

হুমকি যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের কাছে। কখনও বা অন্য কারও কাছে।

Advertisement

‘হালার পোলা টাহা দে। নালে মর’! কখনও আবার, ‘সন্ত্রাসীদের হিটলিস্টে তোর নাম উঠে গিয়েছে। কোথায় পালাবি’? এমন আরও কত...।

বসিরহাটের ইটিন্ডা সীমান্তের কিছু এলাকায় রাতে কান পাতলেই মোবাইলে এমন হুমকি দিতে শোনা যায় কিছু লোকজনকে। আতঙ্কে সিঁটিয়ে থাকছেন নিরীহ গ্রামবাসী। কিন্তু কারা ওরা?

Advertisement

‘‘ওরা ও-পারের দুষ্কৃতী। জঙ্গিও হতে পারে। এখন এখানেই আস্তানা গেড়েছে। বাংলাদেশের মোবাইল সিমকার্ড ব্যবহার করে ব্যবসায়ীদের চমকে-ধমকে টাকা আদায় করে।’’— ব্যস্। বারবার জিজ্ঞাসায় এটুকুই উত্তর মেলে গ্রামবাসীদের থেকে। আতঙ্ক এতটাই!

বসিরহাট সীমান্তে বাংলাদেশি সিমকার্ড! শুনে চমক লাগলেও ওই এলাকার গ্রামবাসীদের কাছে ‘পুরনো খবর’। অনেকেই জানান, কখনও লরিতে লুকিয়ে বা চালক-খালাসিদের হাত দিয়ে আনা হচ্ছে বাংলাদেশি গ্রামীণ মোবাইলের সিমকার্ড। এক শ্রেণির দালালের হাতে তা তুলেও দেওয়া হচ্ছে। যাদের প্রয়োজন, তারা ২০০-৪০০ টাকায় কিনছে। সীমান্তের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় ভারতীয় সিমকার্ড কাজ করে না। তাই বাংলাদেশি সিম ব্যবহার হচ্ছে। স্থানীয় বিএসএফ জওয়ানরাও মানছেন, বাংলাদেশি সিমের ক্ষেত্রে নজরদারিতে সমস্যা হয়। ওই সিমের জন্য নাশকতামূলক কাজে জড়িতদের গতিবিধি সম্পর্কে অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে।

সম্প্রতি বসিরহাটের অস্ত্র ব্যবসায়ী মনোতোষ দে ওরফে জিয়ারুল গাজি ধরা পড়ার পরে ফের এই সীমান্তের নিরাপত্তার চেহারাটা বেআব্রু হয়ে পড়েছে। তদন্তে গোয়েন্দারা দেখেছেন, মনোতোষ দীর্ঘদিন ধরে ইটিন্ডার গাছা গ্রাম দিয়ে বাংলাদেশি জঙ্গিদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র পাঠাত। ওই জঙ্গিদের ঘোজাডাঙা সীমান্তের উত্তরপাড়া দিয়ে ভারতে ঢুকতেও সে সাহায্য করেছিল।

বসিরহাটের ইছামতী সেতুর ডান দিকে ওল্ড সাতক্ষীরা রোড ইটিন্ডার বুক চিরে চলে গিয়েছে ঘোজাডাঙা সীমান্তে। সেখান থেকে বাংলাদেশের ভোমরা। ঘোজাডাঙাকে ঘিরে রয়েছে গাছা, পাইকারডাঙা, খোলারডাঙি, পানিতরের মতো বেশ কিছু গ্রাম। ও পারে বাংলাদেশের সাতক্ষীরার ঘোনা, কাতুনদা, গাজিপুর। দু’দেশের সীমান্তেই এমন কিছু পরিবারের বাস, যাঁদের ঘরের বারান্দা বা উঠোন আরেক দেশে। সীমান্তের অনেক জায়গাতেই নেই কাঁটাতারের বেড়া। ফলে, দু’দেশের মধ্যে চোরাপথে যাতায়াতে ছেদ পড়েনি।

বাংলাদেশি জঙ্গিদের এ দেশে ঢোকার ‘সেফ প্যাসেজ’ হিসেবে গাছা, পানিতর, জিরো পয়েন্ট, আখরপুর-সহ ঘোজাডাঙার বিস্তীর্ণ এলাকার কথা বারেবারে খবরে এসেছে। গোয়েন্দা তদন্তেও প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু তার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বিএসএফ মানছে, কাঁটাতারের বেড়া না-থাকায় অনুপ্রবেশ পুরোপুরি আটকানো সম্ভব নয়।

কিন্তু ও পারের দুষ্কৃতীরা এ পারে ভিড় করছে কেন?

গ্রামবাসীরা মনে করছেন, ও পারে অপরাধ করে এখানে এসে আস্তানা নিতে পারলেই তো ওদের রক্ষা। ধরবে কে? গাছা গ্রামের এক প্রবীণ বলেন, ‘‘ওরা এখানে প্রথমে কারও সঙ্গে আত্মীয় পাতাচ্ছে। তারপর দেদার খরচ করে ভোটার কার্ডও বানাচ্ছে। পাকাপাকি ভাবে এ দেশে থাকার বন্দোবস্ত করে ফেলছে।’’

এলাকায় বাংলাদেশিদের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় চিন্তায় পানিতরের এক বৃদ্ধ। তিনি বলেন, ‘‘এ সব রুখবে কে? আমরা ওদের ভয়ে সিঁটিয়ে থাকি। ওরা এলাকা দাপায়। চোরাচালান, অস্ত্র পাচার, মানুষ পাচার—কিছুই বাদ নেই। রাত বাড়লেই ওদের কাজ বাড়ে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন