জোড়া বান্টি-বাবলির হানায় নাকাল পুলিশ

দুই তরুণ, দুই তরুণী— চার জন মিলে নাজেহাল করে দিচ্ছে পাকা ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার এমনকি পুলিশকেও। একটি অভিযোগ পেয়ে মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ তদন্তে নামতে নামতেই দত্তপুকুরের ঘটে যাচ্ছে আরও একটি ব্যাঙ্ক জালিয়াতি।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৮ ০১:৩৬
Share:

সিনেমার ‘বান্টি-বাবলি’ নাকাল করে ছেড়েছিল পুলিশ অফিসাররূপী খোদ অমিতাভ বচ্চনকে। প্রায় একই কায়দায় চার তরুণ-তরুণী ঘোল খাইয়ে দিচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশকে।

Advertisement

দুই তরুণ, দুই তরুণী— চার জন মিলে নাজেহাল করে দিচ্ছে পাকা ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার এমনকি পুলিশকেও। একটি অভিযোগ পেয়ে মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ তদন্তে নামতে নামতেই দত্তপুকুরের ঘটে যাচ্ছে আরও একটি ব্যাঙ্ক জালিয়াতি। দত্তপুকুর থানার পুলিশ তদন্তে শুরু করার আগেই ফের বারাসতে ঘটে যাচ্ছে একই রকমের ঘটনা।

নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা দিব্যেন্দু ভদ্র পুলিশকে জানিয়েছেন, গাড়ি বিক্রি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসার কাজে প্রায় প্রতি দিনই তাঁকে ব্যাঙ্কে যেতে হয়। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতেও হয়। ২৩ জুন একটি নামী সংস্থা থেকে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ পাইয়ে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে দুই তরুণী তাঁর বাড়িতে আসে। ঋণের জন্য আধার কার্ড, আয়কর রির্টানের প্রতিলিপিও নেয়। তারা দিব্যেন্দুবাবুর কাছ থেকে ২টি ‘ক্যানসেল চেক’ ও ‘প্রসেসিং ফি’ বাবদ ১৪৯ টাকার একটি চেক দিতে বলে।

Advertisement

পরিচয়ের প্রমাণ চাইলে এক জন সোমা সাহা নামে একটি সচিত্র পরিচয়পত্রও দেখান। মোবাইলে সেই পরিচয়পত্রের ছবি তুলে রাখেন দিব্যেন্দুবাবু। ১৪৯ টাকার চেকটিতে নিজের কলমে স্বাক্ষর করেন দিব্যেন্দুবাবু। অভিযোগ, বানান ভুল হতে পারে বলে সংস্থার নামটি ও ১৪৯ টাকার অঙ্কটি নিজের কলম দিয়ে বসিয়ে নেয় সোমা।

২৫ জুন দুপুরে ওই সংস্থার তরফে ফোন করে দিব্যেন্দুবাবুর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি ব্যাঙ্কে আছেন কি না। অফিসের কাজে বাইরে আছেন জানতে পেরে তাঁকে বলা হয়, ব্যাঙ্কের সঙ্গে যে মোবাইল নম্বরটি সংযুক্ত রয়েছে সেটি আধ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখতে। ওই সময়ের মধ্যে ঋণের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে একটি ‘অ্যাপ্রুভাল’ মেসেজ আসবে। মোবাইলটি বন্ধ করে দেন দিব্যেন্দুবাবু। আধ ঘণ্টা পরে মোবাইল খুললে ব্যাঙ্কের তরফে মেসেজ আসে। তাতে বলা হয়, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ৮৫ হাজার ৭০০ টাকা তোলা হয়েছে।

দিব্যেন্দুবাবু বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কে ফোন করতেই ম্যানেজার জানান, এত টাকার চেক বলে ব্যাঙ্কের তরফে আমাকে বারবার যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু মোবাইল বন্ধ ছিল।’’ সৌরেন সিংহ নামে যে ব্যক্তি স্বাক্ষর করে টাকা তুলেছেন তিনি ব্যাঙ্কে আগাম জানিয়ে দেন, ‘‘দিব্যেন্দুবাবু অসুস্থ, মোবাইল বন্ধ থাকবে। দ্রুত টাকার দরকার।’’ এর পরে মধ্যমগ্রাম থানায় অভিযোগ করেন দিব্যেন্দুবাবু।

বাড়ি ভাড়া দেওয়ার জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন দত্তপুকুর থানার চন্দ্রপুরের পলি গুহ। তাঁর কাছে কৃষ্ণেন্দু নাম করে এক যুবক এটিএম তৈরির জন্য ঘর ভাড়া নিতে আসে। এ জন্য আধার কার্ডের প্রতিলিপি এবং ১০০ টাকার একটি চেক নেওয়া হয়। পলিদেবী বলেন, ‘‘২৭ জুন হঠাৎ মেসেজ পাই আমার অ্যাকাউন্ট থেকে তরুণ সাধুখাঁ নামে কেউ ৬১ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে।’’ দত্তপুকুর থানায় অভিযোগ জানান পলিদেবী।

উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কের সিসিটিভির ফুটেজ, পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখে তদন্ত চলছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, প্রতি ক্ষেত্রেই সই করিয়ে নেওয়ার পরে কায়দা করে নিজেদের ‘ম্যাজিক কালির’ কলমে সংস্থার নাম আর টাকার অঙ্ক লিখেছে প্রতারকেরা। সেই কালি কিছুক্ষণ পরে উবে যায়। ঘষলেও উঠে যায়। সেখানেই নিজেদের মতো টাকার অঙ্ক বসিয়ে নিয়েছে প্রতারকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন