শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর জেলায় এক তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী শাসকদল। আর মনোনয়নের নিরিখে শাসকের পরেই রয়েছে বিজেপি। তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছে বাম।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার চারটি লোকসভার এক তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী শাসকদল। কিন্তু ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে বেশির ভাগ আসনেই তৃণমূল জয়ী হয়েছে। ওই লোকসভার পাঁচটি বিধানসভা আসনেই জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়েছে শাসকদল। মনোনয়নের নিরিখে অবশ্য ডায়মন্ড হারবার লোকসভা আসনেও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিজেপি।
জেলায় কুলপি, জয়নগর ১ ও ২ ব্লক, মথুরাপুর ১ ও ২ ব্লক, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, মগরহাট, বাসন্তী, বারুইপুর, গোসাবা এলাকায় প্রায় ত্রিমুখী লড়াই। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘সরকারি ভাবে ত্রিমুখি লড়াই। কিন্তু দুই তৃতীয়াংশ জায়গায় এলাকার পরিচিত তৃণমূল কর্মীর মুখ নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছেন। একই পরিবারের বহু লোক বিভিন্ন দলের হয়ে দাঁড়িয়ে নির্বাচন লড়ছেন।’’ সে ক্ষেত্রে এক তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হলেও দুই তৃতীংশ আসনে শাসকদলের বিরুদ্ধে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে তাঁর দাবি।
সিপিএমের এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, ‘‘মনোনয়নের সময় শাসকদল সব বিরোধী দলকে মারধর করে মনোনয়নে বাধা দিয়েছে। ওই মারধরের জেরে অনেক ভোটার এক জোট হয়ে যেতে পারেন।’’ ওই নেতার ব্যাখ্যা, বিজেপি বামপন্থীদের থেকে এগিয়ে রয়েছে। মনোনয়নের মাপকাঠিতে বিজেপি দ্বিতীয়। এ ক্ষেত্রে বহু বামপন্থী বিজেপিতে গিয়ে যোগ দিচ্ছেন। একদিকে বিজেপি আরেকদিকে শাসকদলের বিক্ষুদ্ধ প্রার্থী।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা
জেলা পরিষদ
• মোট আসন: ৮১
• বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী: ২৮
• ভোট হচ্ছে: ৫৩
পঞ্চায়েত সমিতি
• মোট আসন: ৯১৩
• বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী: ২৯৬
• ভোট হচ্ছে: ৬১৩
গ্রাম পঞ্চায়েত
• মোট আসন: ৪৮৮৩
• বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী:১৭৮৭
• ভোট হচ্ছে: ৩০৯৬
যদি আসন অনুযায়ী বোঝাপড়া হয়ে যায় তা হলে শাসকদল বেকায়দায় পড়তে পারে। তবে যদি বোঝাপড়া না হয়, তা হলে অবশ্য শাসকদল লাভবান হবে। চর্তুমুখী লড়াইয়ে বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে গিয়ে শাসকদলের প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন বলে মনে করছেন অনেকে। সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বহু জায়গায় সব বিরোধী একজোট হচ্ছে বলে শুনছি। তবে সেটা কতটা কার্যকর হবে। তা জানি না।’’ বিজেপির পশ্চিম মণ্ডলের সভাপতি অভিজিৎ দাস অবশ্য বলেন, ‘‘কোনও বিরোধী জোট নয়। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে, সেখানে যদি বিজেপি প্রার্থী থাকে তা হলে মানুষ তাঁকেই ভোট দেবেন বলে আমার বিশ্বাস।’’
তাঁর দাবি, তাঁদের প্রার্থীরা শাসকদলের নানা বাধা পেরিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। নির্বাচনের দিনও মারধর করে ভোট লুঠ করার চক্রান্ত করা হচ্ছে। তবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার শাসকদলের নেতারা অবশ্য দলীয় পরিচিত মুখের নির্দল প্রার্থীদের নিয়ে চিন্তিত নন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি তথা রাজ্যসভার সদস্য শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘উন্নয়নের জন্যই মানুষ দলীয় প্রার্থীদের ভোট দেবেন। পঞ্চায়েত স্তরের উন্নয়ন ও পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নানা পরিষেবামূলক প্রকল্পে সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়েছেন। সে কারণেই দলীয় প্রার্থীকে ভোট দেবেন মানুষ।’’
কিন্তু জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘নির্বাচনের দিন সাধারণ মানুষ নিজেদের ভোট কতটা দিতে পারবেন, তা নিয়ে কিন্তু সংশয় রয়েছে।’’