পেটে টান বছরভর, ভোট নিয়ে আগ্রহ নেই সরস্বতীর

সরস্বতীর কথায় যে চিত্র ফুটে ওঠে একই বারোমাস্যার  সাক্ষী কবিতা সর্দার, রত্না সর্দারেরা। তাঁরা ইটভাটায় কাজ করেন। কোনও মতে দিন চলে। চৈত্র মাসের পরে ভাটা বন্ধ।

Advertisement

নির্মল বসু

সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮ ০০:২৪
Share:

দিন-গুজরান: ভোটের উত্তাপের বাইরে ওঁরা। নিজস্ব চিত্র

আগে দু’টি উনুন জ্বলত। এখন একটি। সেটিও সব দিন জ্বলে না। খাওয়া এক বেলা। চাল বাড়ন্ত থাকলে উপোস। উনুনের আগুনে কাঠ ঠেসে দিয়ে কাপড়ের খুঁটে চোখ মুছতে মুছতে যা বললেন সরস্বতী সর্দার, তার মর্মার্থ এ রকমই।

Advertisement

সরস্বতী বলেন, ‘‘ছেলে দিল্লিতে আর মেয়ে মুম্বইয়ে থাকে। পেটের দায়ে পরের বাড়িতে কাজ করে। যেমন আমাকেও এখানে পরের দোরে কাজ করে পেট চালাতে হয়।’’

সরস্বতীর কথায় যে চিত্র ফুটে ওঠে একই বারোমাস্যার সাক্ষী কবিতা সর্দার, রত্না সর্দারেরা। তাঁরা ইটভাটায় কাজ করেন। কোনও মতে দিন চলে। চৈত্র মাসের পরে ভাটা বন্ধ। পেট চালাতে আবার অন্য কাজ খুঁজতে হবে। তাঁরাও জানান, ভাল নেই আদিবাসীরা। গ্রামে কোথাও কোনও কাজ নেই। নোনা এলাকা হওয়ায় ঠিক মতো চাষবাসও হয় না। ভোর থাকতে উঠে বহু দূরদূরান্তে যেতে হয় কাজের সন্ধানে।

Advertisement

সন্দেশখালি ১ ব্লকের ন্যাজাট ২ পঞ্চায়েত তৃণমূল পরিচালিত। আবাদ বয়ারমারি, ন্যাজাট, দক্ষিণ আখরাতলা— এই তিন মৌজার মোট আয়তনের মাত্র ৩০ শতাংশ এলাকায় চাষ এবং বসবাস। বাকি ৭০ শতাংশে মেছোঘেরি, ইটভাটা, পতিত জমি। মহকুমা প্রশাসন সূত্র বলছে, সন্দেশখালির আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় জনসংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার। এলাকায় একশো দিনের কাজে কর্মদিবস সৃষ্টি হয় না বললেই চলে, এমনটাই জানালেন গ্রামের মানুষ। কারণ, মেছোঘেরি অধ্যুষিত এলাকায় একশো দিনের কাজের তেমন সুযোগ নেই। নতুন করে আর মাটি কাটা হবে কোথায়? ইটভাটায় অধিকাংশ শ্রমিক আসেন বাইরে থেকে। ২০১৭ সালের হিসাব বলছে, নথিভুক্ত জবকার্ডের সংখ্যা ৪৬৯২। পরিবার সংখ্যা ৭৪৭৯টি। কাজ পেয়েছে ১০৬৮টি মাত্র পরিবার। পঞ্চায়েত বলছে, ২০১৭ জুলাই পর্যন্ত ৮৩৪টি প্রকল্প চালু করা হয়েছে এবং ২১৮টি প্রকল্প শেষ করা গিয়েছে।

নথিভুক্ত জবকার্ডধারী সকলকে কাজ দিলে গড়ে পাঁচ দিনের বেশি কেউ কাজ পাননি বলে জানাচ্ছেন ভক্তদাস মাহাতো, জগদীশ সরকারেরা। ভবেশ মণ্ডল বলেন, যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের টিপ সই মিলছে না বলে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সন্দেশখালি ১ ব্লকের শতাধিক গ্রামের একই ছবি।

এই এলাকার অধিকাংশ গ্রামেই পুরুষ নেই। কাজের খোঁজে তাঁদের যেতে হয়েছে তামিলনাড়ু, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, আন্দামানে। মহিলারা রাত থাকতে উঠে খেতমজুরের কাজ করতে রওনা দেন দূরের গ্রামে। এই আর্থ-সামাজিক অবস্থার মধ্যে তাই ভোটের বাদ্যি এখানে কারও কানে পৌঁছয় না।

তবু পঞ্চায়েত ভোট এসে পড়ায় এলাকায় শুরু হয়েছে প্রচার। তা নিয়ে উৎসাহ তেমন চোখে পড়ে না সরস্বতীদের। বললেন, ‘‘ঠিক মতো খাওয়াই জোটে নাস ভোট নিয়ে ভেবে কোন উপকারটা হবে আমার?’’ আরও কেউ কেউ বললেন, ‘‘নেতারা কাজ দিতে পারেন না, ভোট চান কোন মুখে! ওঁরা ভোটের জন্য গ্রামে শান্তি নষ্ট করেন আর গরিব মানুষ আধপেটা খেয়ে দিন কাটায়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন