আগের অভিজ্ঞতা থেকেই অশান্তি রুখছে ভাটপাড়া

রাজ্যের চারদিক যখন অশান্ত, তখন শান্ত ভাটপাড়া কাঁকিনাড়া। আগুন দূরের কথা, সামান্য অবরোধও হয়নি এই এলাকায়। বদলে শান্তিপূর্ণ মিছিল হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:২০
Share:

সিএএ-এর বিরোধিতায় কৃষ্ণপুর স্টেশনে আগুন। অশান্তির স্মৃতি ফেরাতে চায় না ভাটপাড়া। —ফাইল চিত্র

রাজ্যের চারদিক যখন অশান্ত, তখন শান্ত ভাটপাড়া কাঁকিনাড়া। আগুন দূরের কথা, সামান্য অবরোধও হয়নি এই এলাকায়। বদলে শান্তিপূর্ণ মিছিল হয়েছে। দলমত এবং জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই পা মিলিয়েছেন নয়া নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে।

Advertisement

তবে উস্কানি যে ছিল না তা নয়। এলাকায় এলাকায় হাতে লেখা লিফলেটের ফটোকপি ছড়ানো হয়েছিল। কিন্তু সে প্ররোচনা আলগোছে পাশ কাটিয়ে গিয়েছে কাঁকিনাড়ার নয়া বস্তি, টিনা গোডাউন।

জনজীবন অশান্ত হলে কী হয়, মাসকয়েক আগেই তা দেখে ফেলেছে ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া। ফলে শত উস্কানি থেকে মুখ ফিরিয়ে থেকেছে তারা। তার ফলে শিয়ালদহ মেন লাইন হোক, বা ঘোষপাড়া বা বিটি রোড— অবরুদ্ধ হয়নি কোনওটিই। তার ফলে ভোঁতা হয়ে গিয়েছে কয়েকটি সংগঠনের চেষ্টা।

Advertisement

অশান্ত এলাকা বলে এমনিতেই পরিচিতি রয়েছে কাঁকানাড়ার। কিন্তু গত মে মাসের শেষ দিক থেকে যে গোলমাল শুরু হয়েছিল, তা আগে কখনও দেখেনি ভাটপাড়া। লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে বিজেপি এবং তৃণমূলের গোলমাল শুরু হয়েছিল। পরবর্তীকালে সে গোলমাল বারবার তার চরিত্র বদল করেছে। চরিত্র বদলে টানা তিন মাস দাপট দেখিয়েছে সে।

সে গোলমালের জেরে প্রায় চার মাস বন্ধ থেকেছে কাঁকিনাড়ার সবকটি বাজার। বন্ধ ছিল স্কুলের পঠনপাঠন। প্রায় তিন মাস ব্যারাকপুর-কাঁচরাপাড়া রুটে বাস চলেনি। ফি হপ্তায় বারবার অবরুদ্ধ হয়েছে রেল। রেল লাইনের ধারে আটকে পড়া ট্রেন লক্ষ্য করে এন্তার বোমাবাজি হয়েছে। সবমিলিয়ে সেই সময় সারা দেশের নজর কেড়েছিল ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া।

এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে গোলমাল চলছে রাজ্যে। বারাসত এবং বসিরহাটে গোলমালের জেরে সড়ক-রেল অবরোধ হয়েছে। হয়েছে ভাঙচুর-সহ বিভিন্ন গোলমাল। যে কোনও আন্দোলনেই রেল অবরোধ হয় কাঁকিনাড়ায়। এ বার এখনও পর্যন্ত হয়নি।

এলাকার বাসিন্দা সুরেশ আগরওয়াল, আসিফ খানেরা বলছেন, ‘‘গোলমালের আগুনের আঁচ এখনও অনুভব করি আমরা। সে এক অনিশ্চিত-অশান্ত জীবন। বাড়িতে থেকে বেরোতে পারতাম না। ছেলে-মেয়েরা স্কুল কলেজে যেতে পারত না। আমাদেরই অনেকে ভুল পথে চলে গিয়েছিল। তাদের কেউ রাস্তা অবরোধ করেছে, কেউ রেল।’’ তাঁরা জানান, তাঁদের অনেকেই বাস-ট্রেনে পাথর ছুড়েছে। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘পরে খবরের কাগজে দেখেছি তাদের কী ক্ষতি হয়েছে। আমাদের ক্ষতিও কিছু কম হয়নি। পাঁচ-পাঁচটি প্রাণ গিয়েছে। পরে বুঝেছি, কিছু লোক নিজেদের স্বার্থে আমাদের উস্কানি দিয়েছে।’’

গত কয়েকদিন ধরেই কাঁকিনাড়ায় বিভিন্ন এলাকায় একটি লিফলেট ছড়ানো হচ্ছে। সেই লিফলেটে উস্কানি ছিল যথেষ্টই। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘আমরা সিএএ-র বিরোধিতা করছি ঠিকই। কিন্তু প্রতিবাদের জন্য ওই ধ্বংসের রাস্তা বেছে নিতে রাজি হইনি। অল্পবয়সিদের ডেকে বুঝিয়েছি। তারা যেন ভুল পথে পা না দেয়। তার ফলে আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু জীবন অচল হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন