হাসপাতালে কান্নায় ভেঙে পড়লেন বিএলও সবিতা সর্দার। —নিজস্ব চিত্র।
ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে এনুমারেশন ফর্ম সংগ্রহের সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন এক মহিলা বিএলও। অসুস্থতা নিয়ে নিজেই হাজির হলেন হাসপাতালে। কাজের চাপে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে হাসপাতালে শুরু করলেন কান্নাকাটি। মঙ্গলবার বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের ঘটনা। পাত্রসায়র ব্লকের নারায়ণপুর গ্রামের ২২৪ নম্বর বুথের ওই বিএলওর শারীরিক পরিস্থিতির জন্য নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপিকে দায়ী করেছে তৃণমূল। পাল্টা তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ বিজেপির।
বাঁকুড়ার নারায়ণপুর গ্রামের ২২৪ নম্বর বুথে বিএলও করা হয়েছে আইসিডিএসের সুপারভাইজ়র সবিতা সর্দারকে। বিএলও করার আগেই শারীরিক অসুস্থতা এবং শিশুসন্তান থাকার কারণ দর্শিয়ে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। ফোন করেছিলেন ‘দিদিকে বলো’তে। তবে প্রশাসনের নির্দেশে শেষমেশ বিএলও হিসাবে দায়িত্ব নিতে হয়েছে সবিতাকে।
অন্যান্য দিনের মতো মঙ্গলবার সকালে নারায়ণপুর গ্রামে এনুমারেশন ফর্ম সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন সবিতা। এর পর নিজেই চলে যান পাত্রসায়র ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখেন চিকিৎসকেরা। হাসপাতালে কান্নাকাটি করতে করতে বিএলও বলেন, ‘‘আমার বাড়ি নদিয়ার নাকাশিপাড়ায়। প্রায় দেড়শো কিলোমিটার দূরে বাচ্চাকে নিয়ে ভাড়াবাড়িতে থাকি। এলাকার প্রায় কোনও ভোটারকেই সে ভাবে চিনি না। আমাকে জোর করেই বিএলওর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমার সমস্যার কথা প্রশাসনের সর্ব স্তরে জানিয়েছিলাম। এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি। দিনভর বাড়ি বাড়ি ঘুরে ফর্ম দেওয়া এবং নেওয়া, তার পর রাত জেগে সেই সব তথ্য নির্বাচন কমিশনের পোর্টালে আপলোড করছি। এ ভাবে গত কয়েক দিন ধরে চলছে। শরীর আর দিচ্ছে না। কাজের চাপে পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’’
বিএলও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শুনে দুপুরে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁকে দেখতে যান তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুব্রত দত্ত। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘নির্বাচন কমিশন আসলে বিজেপির কমিশন হয়ে গিয়েছে। বিজেপির নির্দেশে তারা দু’বছরের কাজকে এক মাসের মধ্যে সেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। অতিরিক্ত এই কাজের চাপ সামলাতে না-পেরে এ রাজ্যে একের পর এক বিএলও আত্মহত্যা করছেন। অনেক বিএলও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এর সমস্ত দায় বিজেপির।’’
পাল্টা সোনামুখীর বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামি বলেন, ‘‘এ রাজ্যে এসআইআর প্রক্রিয়া শুরুর সময় থেকেই বিএলওদের অত্যধিক পরিমাণে চাপ দিচ্ছে তৃণমূল। হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। সেই চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ওই বিএলওর অসুস্থতার নেপথ্যে তৃণমূলের হুমকি থাকতে পারে।’’