বিয়ে নয়, পড়তে চাই, আর্জি বনগাঁর কিশোরীর

পরিচিত প্রধানকে দেখতে পেয়ে তাঁর কাছে গিয়ে বলে, ‘‘জ্যেঠু আমাকে বাড়ি থেকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছে। আমার বয়স এখনও আঠারো হয়নি। বিয়ে করব না।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৮ ০২:২৯
Share:

সাহসিনী: প্রধানের সঙ্গে কথা বলছেন বর্ষা। নিজস্ব চিত্র

সকাল সাড়ে ১১ টা। পঞ্চায়েত প্রধান সন্তোষ রায়ের বাড়িতে হঠাৎ হাজির এক কিশোরী। দেখে অবাক প্রধান। হাত-পা কেটে গিয়েছে। জামা কাপড়ে ধুলো-বালি লাগা। দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে। দু’চোখ দিয়ে জল পড়ছে।

Advertisement

পরিচিত প্রধানকে দেখতে পেয়ে তাঁর কাছে গিয়ে বলে, ‘‘জ্যেঠু আমাকে বাড়ি থেকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছে। আমার বয়স এখনও আঠারো হয়নি। বিয়ে করব না। লেখাপড়া করতে চাই। আপনি আমাকে বাঁচান।’’

এই কথা শুনেই প্রধান ওই কিশোরীকে নিয়ে থানায় যান। সেখানে কিশোরী পুলিশকে লিখিত ভাবে সব জানায়। রবিবার ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ ব্লকের ধর্মপুকুরিয়ায়। কিশোরীর নাম বর্ষা তরফদার। একপ্রকার যুদ্ধ করেই বনগাঁয় প্রধানের বাড়ি এসে নিজের বিয়ে বন্ধ করেছে সে।

Advertisement

পুলিশকে ওই বর্ষা জানায়, রবিবারই ছিল তার বিয়ের কথা। বুধবার তার বাবা ও আত্মীয়-স্বজনেরা তাকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং থানা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে ওই কিশোরী জানতে পারে, তার বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেয়ে যাতে বিয়ের আগে কোথাও পালিয়ে যেতে না পারে তাই তার উপর নজরও রাখা হচ্ছিল। কিন্তু সব নজর এড়িয়ে ভোররাতে ক্যানিংয়ের ওই আত্মীয়ের বাড়ির থেকে পালিয়ে আসে কিশোরী।

কিশোরী জানায়, ঘুমোনোর ভান করে শুয়ে ছিল সে। আর অপেক্ষায় ছিল যে কখন বাড়ির লোকজন ঘুমাবে। সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর পা টিপে টিপে জানলা থেকে ঝাঁপ দেয় সে। কিন্তু নীচে জলাশয়ে পড়ে যায়। সেখান থেকেই ছুটে গিয়ে ট্রেন ধরে সে। শিয়ালদহে পৌঁছে রেলপুলিশের সাহায্যে বনগাঁ লোকাল ধরে সে। বর্ষা বলে, ‘‘ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু ভেবেছিলাম এটাই শেষ সুযোগ। আজ না পারলে আর কোনও দিনও পারব না।’’ নবম শ্রেণিতে পর্যন্ত পড়েছে সে। এখন তার পড়াশোনা বন্ধই ছিল। তবে সে আবার পড়াশোনা শুরু করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়।

এ দিন দুপুরে প্রধানের বাড়িতে বসে কিশোরী জানায়, আমাকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল বিয়ের জন্য। বলা হয়েছে বিয়ে না করলে মুম্বই পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সন্তোষবাবু বলেন, ‘‘কিশোরীর সাহস দেখে আমি মুগ্ধ। নবম শ্রেণিতে পড়ে এখন ওই ছাত্রী। ওর লেখাপড়াতে সাহায্য করা হবে। আঠারো বছরের আগে যাতে বিয়ে না হয় তাও আমরা দেখব।’’

তবে বিয়ে দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে বর্ষার পরিবার। তাঁরা জানান, মেয়েকে নিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম। কেন মেয়ে মিথ্যা কথা বলছে জানি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন