‘অপরাধমুক্ত’ হওয়ার পথে সীমান্তের গ্রাম

বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দেশের ঘোনার মাঠ ও কালিয়ানি গ্রাম এবং বাংলাদেশের পুটখালি ও দৌলতপুর গ্রামকে ‘ক্রাইম ফ্রি জোন’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে এ দিন। মোট দূরত্ব ৮.৩ কিলোমিটার।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০১:৪৯
Share:

নজরদারি: সীমান্তে বাহিনীর কর্তারা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

দশ বছরের আগের রাতটার কথা ভুলতে পারেননি বনগাঁর ঘোনার মাঠ এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ সুশীল বিশ্বাস। রাতে মাটি ও চাঁচের বেড়ার ঘরের বারান্দা ঘুমিয়ে ছিলেন। গভীর রাতে সীমান্ত পেরিয়ে একদল দুষ্কৃতী চড়াও হয়। সুশীলবাবুকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে সোনাদানা, টাকা লুঠ করে পালায়।

Advertisement

বনগাঁর ভারত–বাংলাদেশ সীমান্ত ঘোনার মাঠ এলাকা একটা সময়ে ছিল চোরাচালান, পাচার ও বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য। তার জেরে সুশীলবাবুর মতো সীমান্তে বসবাস করা বহু মানুষের দিনযাপন আতঙ্কের হয়ে উঠেছিল।

শুক্রবার সেই ঘোনার মাঠ এলাকাকেই ‘ক্রাইম ফ্রি জোন’ (অপরাধমুক্ত অঞ্চল) হিসাবে ঘোষণা করা হল বিএসএফের তরফে। এ দিন এই কর্মসূচি উপলক্ষে স্থানীয় কালিয়ানি এলাকায় কাঁটাতারের ভিতরে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএসএফের ডিজি, কেকে শর্মা ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ডিজি মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। হাজির ছিলেন দু’দেশের জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ।

Advertisement

বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দেশের ঘোনার মাঠ ও কালিয়ানি গ্রাম এবং বাংলাদেশের পুটখালি ও দৌলতপুর গ্রামকে ‘ক্রাইম ফ্রি জোন’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে এ দিন। মোট দূরত্ব ৮.৩ কিলোমিটার। বিএসএফ জানিয়েছে, এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য, সীমান্তে দু’দেশের ওই চারটি এলাকায় সমস্ত রকম অপরাধ, পাচার, অনুপ্রবেশ ও দুষ্কৃতীমূলক কাজ বন্ধ করা। ২০১৭ সালে দিল্লিতে দু’দেশের ডিজি পর্যায়ের বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

আবুল হোসেন বলেন, ‘‘ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে মাদক পাচার, জাল টাকা পাচার-সহ সমস্ত অপরাধমূলক কাজ বন্ধ করাই এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য। এখানে পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু করা হল। সফল হলে ভারত-বাংলাদেশের সমস্ত সীমান্ত এলাকায় এই মডেল অনুসরণ করা হবে।’’

কেকে শর্মা জানান, সীমান্ত এলাকায় মানুষের সুরক্ষিত জীবনযাপন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি এর ফলে আরও মসৃণ হবে। স্পিড বোট ও অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। দু’দেশের বাহিনীর মধ্যে আরও সমন্বয় তৈরি করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় এই কাজ করা হবে।

এ দিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন সুশীলবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘আজ আমরা খুশি। আগে এমন পদক্ষেপ করলে আমাদের জীবনে অভিশপ্ত দিন দেখতে হত না।’’

গ্রামবাসীরা জানালেন, এখন গরু পাচার কার্যত বন্ধ। সেই দাবি করলেন বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায়ও। তবে বাসিন্দারা জানালেন, মাঝে মধ্যে অনুপ্রবেশ হচ্ছে। তবে অতীতের তুলনায় তা কিছুই নয়। এক বাসিন্দা জানালেন, পুটখালিতে দুষ্কৃতীরা এখন কাঁটাতারের ভিতরে থাকা আনাজ লুঠ করে নিয়ে যায়। তাদের কাছে অস্ত্র থাকে। মাঠের গরুও চুরি করে তারা। ইতিমধ্যে কাঁটাতার নতুন করে বসানো হয়েছে। বিএসএফের সঙ্গে পুলিশও এলাকায় টহল দিচ্ছে নিয়মিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন