লাইফ-লাইন: এই সেতুই জুড়বে বাদুড়িয়ার দু’পাড়কে। ছবি: নির্মল বসু
সেতুর দু’মাথা জোড়া লেগেছে। হয়ে গিয়েছে এক পাড়ের রাস্তাও। এখন শুধু বাকি আর এক পাড়ের রাস্তা। তা হলেই বাদুড়িয়ায় ইছামতী নদীর উপরে তৈরি সেতু দিয়ে পারাপার শুরু হয়ে যাবে। এর ফলে কলকাতা থেকে মানুষ, পণ্যবাহী গাড়ি দ্রুত পৌঁছতে পারবে সীমান্তবর্তী ঘোজাডাঙায়। সাধারণ মানুষের সুবিধা হবে। লাভবান হবেন ব্যবসায়ীরাও। আপাতত এক পাড়ের রাস্তা তৈরি শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন দু’পাড়ের মানুষজন। পূর্ত ও সড়ক দফতরের সহকারী বাস্তুকার রানা তারন বলেন, ‘‘বাদুড়িয়া সেতু জোড়া লেগেছে। বাকি কেবল এক পাড়ের আড়াই কিলোমিটার রাস্তার কাজ। জেলাশাসক, জেলা পরিষদ, ভূমি ও ভূমি সংস্কার, পূর্ত ও সড়ক দফতরের লোকজন শুক্রবার ওই রাস্তার মাপজোকের কাজ শেষ করেছেন। শীঘ্রই রাস্তার কাজ শুরু হবে।’’
২০১০ সালে বাদুড়িয়ার লক্ষ্মীকান্তপুর গ্রামে ইছামতীর উপরে সেতুর শিলান্যাস করা হয়। সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ৪১০ মিটার লম্বা এবং ১১ মিটার চওড়া সেতু জোড়া লাগে। বাদুড়িয়া পুরসভার অন্য দিকে লক্ষ্মীনাথপুর থেকে কাটিয়াহাট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার ডবল লেনের ঝাঁ চকচকে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। অন্য পাড়েও রাস্তা হয়েছে। রাতে গাড়ি চালকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে রাস্তায় লাগানো হয়েছে রিফ্লেক্টর। বাকি পড়েছিল বাদুড়িয়া পুর-এলাকার মধ্যে দিয়ে যাওয়া আড়াই কিলোমিটার রাস্তা। জমি সমস্যায় ওই রাস্তা করা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। ফলে সেতুর কাজ শেষ করা নিয়ে সমস্যা বাড়ে।
বাদুড়িয়ার মানুষের দীর্ঘদিনের চাহিদা ছিল লক্ষ্মীকান্তপুরে ইছামতীর উপরে সেতু। পুরসভার ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে ইছামতী নদী। যার এক পাড়ে ১২টি অন্য পাড়ে ৫টি ওয়ার্ড। এক পাড়ে ওয়ার্ডের পাশাপাশি আছে ৪টি পঞ্চায়েত। অন্য পাড়ে ৫টি পঞ্চায়েত, পুরসভা, থানা, বিডিও, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর, বিদ্যুৎ, যুবকল্যাণ, ব্লক প্রাণি, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, এডিও অফিস-সহ সরকারি ও বেসরকারি দফতর। এ ছাড়া হাট-বাজারও আছে। সেতু থেকেও না থাকায় একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। এক পাড়ের সেই জমির সমস্যা দ্রুত মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলি।
সেতু হলে কী উপকার হবে?
এক পাড়ের মানুষকে আর পুরসভায় আসতে গেলে ২০ কিলোমিটার ঘুরতে হবে না। এ ছাড়া, নৌকোয় করে রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো অসুবিধার মধ্যে পড়তে হবে না। ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে না পড়ুয়াদেরও। আর অন্য পাড়ের বাসিন্দাদের সরকারি-বেসরকারি দফতরে কাজ করতে কিংবা হাট-বাজারে যেতে হয়রানির শিকার হতে হবে না। খরচ বাঁচবে। এ ছাড়া, কোনও প্রয়োজনে আগে থানায় যেতে হলে বসিরহাট নয় তো স্বরূপনগরের তেঁতুলিয়া সেতু হয়ে ঘুরপথে যেতে হত। সেই সমস্যাও মিটবে। বাদুড়িয়া ও কাটিয়াহাট হয়ে সরাসরি ট্রাক চলে যেতে পারবে ঘোজাডাঙা সীমান্তে।
বাদুড়িয়ার পুরপ্রধান তুষার সিংহ বলেন, ‘‘বাদুড়িয়া দিয়ে সীমান্ত বাণিজ্য শুরু হলে এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের চেহারাটাই পাল্টে যাবে। উভয় পাড়ের মানুষ নানা ভাবে উপকৃত হবেন। জমি নিয়ে কিছু জটিলতার কারণে সাময়িক রাস্তা তৈরির কাজ বন্ধ ছিল। তা কাটিয়ে উঠে খুব শীঘ্রই সকলের জন্য সেতু খুলে দেওয়া সম্ভব হবে।’’